যে ১০ লক্ষণ দেখলে ডায়াবেটিস রোগের পরীক্ষা করা উচিত
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১৬ পিএম
আপনার ডায়াবেটিস রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে দীর্ঘদিন সুস্থ জীবনযাপন করা সম্ভব বলে চিকিৎসকরা বলেছেন। আপনার ডায়াবেটিস হয়েছে, সেটি দীর্ঘদিন বুঝতেই পারেননি। কিন্তু কোনো কারণ ছাড়াই আপনি শুকিয়ে যাচ্ছেন, ক্লান্তি আর অবসাদ বোধ করছেন। কোনো গুরুত্ব নেই। কেন আপনার শরীর শুকিয়ে যাচ্ছে, তাও বুঝতে পারছেন না।
অনেক দিন ধরে আপনার শরীর খারাপ লাগছে দেখে একজন মেডিসিনের চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন। কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার সঙ্গে ডায়াবেটিসের পরীক্ষাও দিয়েছিলেন চিকিৎসক। সেখানেই ধরা পড়ে আপনার অনেক দিন আগেই ডায়াবেটিস হয়েছে। এরপর ডায়াবেটিস হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার করে ওষুধ খাওয়া শুরু করলেন আপনি।
এমন ঘটনায় আপনি একা নন, ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ টের পান না যে, তারা এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। অন্য কোনো রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে গিয়ে তাদের রোগটি ধরা পড়ে।
যেসব লক্ষণ দেখলে সতর্ক থাকতে হবে—
১. ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া ও পিপাসা লাগা
২. দুর্বল লাগা, ঘোর ঘোর ভাব আসা
৩. ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া
৪. সময়মতো খাওয়া-দাওয়া না হলে রক্তের শর্করা কমে হাইপো হওয়া
৫. মিষ্টিজাতীয় খাবারের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যাওয়া
৬. কোনো কারণ ছাড়াই অনেক ওজন কমে যাওয়া
৭. শরীরে ক্ষত বা কাটাছেঁড়া হলেও দীর্ঘদিনেও সেটি না সারা
৮. চামড়ায় শুষ্ক, খসখসে ও চুলকানি ভাব আসা
৯. বিরক্তি ও মেজাজ খিটখিটে হয়ে ওঠা
১০. চোখে কম দেখতে শুরু করা
তাই ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসার তথ্য জেনে নিন—
বাংলাদেশের ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক একে আজাদ খান বলেছেন, ডায়াবেটিস আছে এমন রোগীর অন্তত ৫০ শতাংশ জানেন না যে, তার ডায়াবেটিস রোগ হয়েছে। এ কারণে ডায়াবেটিস সম্পর্কে সবার সচেতনতা বৃদ্ধি খুবই জরুরি।
জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান (নিপোর্ট)-এর একটি জরিপে দেখা গেছে, দেশে মোট ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এক কোটি ১০ লাখ। এদের মধ্যে ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সির সংখ্যা ২৬ লাখ, আর ৩৫ বছরের বেশি বয়সির সংখ্যা ৮৪ লাখ।
বাংলাদেশের ডায়াবেটিক সমিতির মহাসচিব মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন বলেছেন, যাদের শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকে, তারা প্রথম দিকে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারেন না। কারণ এটি হচ্ছে— ধীরগতির ঘাতক। যার হয়েছে, সেদিনই তাকে বিপদে ফেলবে না; কিন্তু আস্তে আস্তে তার শরীর ক্ষয় করে দেবে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস অশনাক্ত থাকলে বা চিকিৎসা না হলে কিডনি, লিভার ও চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই সঙ্গে শরীরের ত্বক নষ্ট হয়ে যায়, চুল পড়ে যায়। এ ছাড়া শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গও ক্ষতির শিকার হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেছেন, যারা যত বেশি শারীরিক পরিশ্রম করবেন, প্রতিদিন যদি অন্তত ১০ হাজার কদম কেউ হাঁটেন, তা হলে ডায়াবেটিস হলেও সেটি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকবে। কিন্তু সেটি কতজন করেন?
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, টাইপ-২ ধরনের ডায়াবেটিসের ৭৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই আগভাগে সতর্ক থাকলে, শারীরিক পরিশ্রম করলে এবং খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনে নিয়ন্ত্রণ আনলে ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব। কিন্তু একবার ডায়াবেটিস হয়ে গেলে আর এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না।
যাদের বাবা-মা, ভাইবোন বা ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের এই রোগটিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি রয়েছে। এ ছাড়া যারা নিয়মিত হাঁটাচলা বা শারীরিক পরিশ্রম করেন না, অলস বা অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করেন, তাদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
বাংলাদেশের ডায়াবেটিক সমিতির মহাসচিব মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন বলেছেন, যাদের ঝুঁকি রয়েছে, তাদের অবশ্যই বছরে একবার ডায়াবেটিস পরীক্ষা করাতে হবে। এ জন্য সবসময় হাসপাতালে যেতে হবে এমন নয়। এখন অনেক ফার্মেসিতে স্বল্পমূল্যে দ্রুত ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা যায়। সেখান ডায়াবেটিস শনাক্ত হলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সাইফুদ্দিন বলন, ডায়াবেটিস যত তাড়াতাড়ি শনাক্ত করা যাবে, সেই রোগীর জন্য সেটি তত ভালো। তাতে তিনি যেমন রোগটির চিকিৎসা দ্রুত শুরু করতে পারবেন, পাশাপাশি তার জীবনযাপনও একটি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসবে।