ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চাই সঠিক খাবার
আখতারুন নাহার আলো
প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশে এখন ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ। এ সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। ডায়াবেটিসকে প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। খাবার গ্রহণের সময় গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বিবেচনা করে খেলে, একে নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়। যেসব খাবার উচ্চ জিআই বলে চিহ্নিত, সেগুলো তাড়াতাড়ি শোষণ ও হজম হয়। ফলে এতে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। আবার যেসব খাবার নিম্ন জিআই, সেগুলো দেরিতে শোষণ ও হজম হয়। কারণ এতে রক্তে শর্করার মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ে অর্থাৎ শর্করা বিশোষণের হ্রাস বৃদ্ধিই গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বা জিআই কম-বেশি নির্দেশ করে থাকে।
▶ নিম্ন জিআই : সব ধরনের শাক, ডাল, দুধ, ওটস, ভুট্টা, পাস্তা, মাশরুম, বাদাম, পানিবহুল সবজি।
▶ মধ্যম জিআই : লাল চাল, বাসমতি চাল, মিষ্টি আলু, গমের রুটি, ভুট্টার খই, নডুলস, বিট ইত্যাদি।
▶ উচ্চ জিআই : ময়দার রুটি, আতপ চাল, মিষ্টি কুমড়া, কচুরমুখী, গোলআলু, খেজুর, কিশমিশ, পোলাও, চিনি, গ্লুকোজ, মধু ইত্যাদি।
* চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণের সময় সতর্ক থাকতে হবে
এ ব্যাপারে কয়েকটি বিষয় মনে রাখতে পারলে ভালো হয়। যেমন-
▶ স্বাভাবিক তাপমাত্রায় যেসব চর্বি জমাট বেঁধে যায়, সেসব চর্বি পরিহার করা উচিত।
▶ যেসব খাবার তৈরি করতে বেশি তেল ব্যবহার করতে হয়; সেধরনের খাবার বাদ দিতে পারলে ভালো হয়।
▶ চর্বিযুক্ত দুধ, পনির, দই বাদ দিয়ে ১ শতাংশ লো ফ্যাট ডেইরি প্রোডাক্ট খাওয়া ভালো।
▶ খেতে হবে লো ফ্যাট প্রোটিন, যেমন-তন্দুরি চিকেন, কচি মাংস, পাতলা ঝোলের মাছ ইত্যাদি।
▶ ননস্টিক ফ্রাইপ্যানে মাখন ও ঘিয়ের পরিবর্তে ব্রাশ দিয়ে তেল মেখে রান্না করা উচিত।
▶ ডুবো তেলে ভাজা খাবার বাদ দিতে হবে।
▶ লাল মাংস এবং হাঁস-মুরগি রান্নার আগে দৃশ্যমান চর্বি ছাড়িয়ে নিতে হবে। তবে লাল মাংস সপ্তাহে তিনদিনের বেশি নয়।
▶ শাক-সবজি, সালাদ এবং কম শর্করাযুক্ত ফল প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় থাকা উচিত। যারা খাবার কিনে খান, তাদের অবশ্যই সচেতনভাবে প্যাকেট বা বোতলের গায়ের লেবেল দেখে খাবার কেনা উচিত। বিভিন্ন পণ্যের ওপর বিভিন্ন ধরনের তথ্য থাকে। যেমন- Light olive oil-এর ক্ষেত্রে Light বলতে রঙের কথা বলা হয়েছে। Lite chips অথবা Lite fat-এর ক্ষেত্রে Lite বলতে লবণ ও চর্বির মাত্রা বোঝানো হয়। No added sugar এটা লেখা থাকলে দেখতে হবে ফলের চিনি (ফ্রুক্টোজ) বা দুধের চিনি (ল্যাক্টোজ) আছে কিনা। এছাড়া এতে শর্করার পরিমাণ কত আছে সেটা দেখতে হবে। তবে sugar free লেখা থাকলে ধরে নিতে হবে তথ্যটি ভুল। কারণ কোনো খাবারই শর্করা বা চিনিমুক্ত নয়। Low Joule বা Diet অর্থ বিকল্প চিনি দিয়ে তৈরি কম ক্যালরির পানীয় ও খাবার। এতে অবশ্যই শর্করা আছে। যেমন-Diet yougat, Diet chocolate, Diet coke, low fat লেখা থাকলে বুঝতে হবে এতে ১০০ গ্রাম খাবারে তিন গ্রাম চর্বি আছে। No added salt অথবা reduced salt মানে হচ্ছে লবণ একেবারেই থাকে না অথবা কম থাকে। অনেক সময় Low sodium লেখা থাকে। High fiber অর্থাৎ প্রতি পরিবেশনে ৩ গ্রাম আঁশ থাকে। আবার দেখা যায় বোতল বা প্যাকেটের গায়ে চর্বি বিভিন্ন নামে থাকে। যেমন- Vegetable fat বা oil, Animal fat বা oil, Lond Tallow, chocolate, palm oil, coconut oil, milk solid ইত্যাদি। আবার চিনিও বিভিন্ন নামে থাকে। যেমন-সুক্রোজ, গ্লুকোজ, ডেন্টন, মল্ট, ম্যাল্টো সিরাপ, মল্ট্রোজ গ্লুকোজ সিরাপ, কর্ন সিরাপ, মোলাসেস, গোল্ডেন সিরাপ, ফ্রুট সিরাপ, ফ্রুট জুস, কনসেন্ট্রেট, হানি, ফেসাইনস সিরাপ, বারবাডোস সুগার, গ্লুকোজ সলিউস ইত্যাদি। সুতরাং খাবার কিনতে গেলে অবশ্যই লেবেল দেখে খাবার নির্বাচন করতে হবে।
* দেহের ওজন
ডায়াবেটিস হওয়ার পর দেহের ওজন অবশ্যই আদর্শ মাপে থাকতে হবে। এজন্য খাবার ও ব্যায়ামের একটি সঠিক পরিকল্পনা প্রয়োজন। এদিকে অল্পবয়সি ইনসুলিন নির্ভরশীল ডায়াবেটিকদের ওজন কম থাকতে দেখা যায়। অনেকে মনে করেন, তাদের খাবার মেপে বা বেছে খাওয়ার প্রয়োজন নেই। আসলে তাদের বয়স, ওজন, উচ্চতা সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে ক্যালরি নির্ধারণ করতে হবে। সেটা কম বা নিয়ন্ত্রণ করে খাওয়া নয়। তাদের বর্ধনের কথা এবং ওজন বাড়ানোর কথা দুইটিই চিন্তা করে ক্যালরি ঠিক করতে হয়। এছাড়া ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য অবশ্যই খাবার বেছে খেতে হবে।
মোট কথা, বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে চলতে পারলে ডায়াবেটিস নিয়েও সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা সম্ভব।
লেখক : চিফ নিউট্রিশন অফিসার ও বিভাগীয় প্রধান (অব.), বারডেম। সভাপতি, ডায়াবেটিস নিউট্রিশনিস্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশ, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী ও অ্যাডভান্স হাসপাতাল, ঢাকা।