খারাপ জীবনধারা, ভুল খাদ্যাভ্যাস আর স্থূলতা স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলছে। এ কারণে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ এখন ভাইরাল হেপাটাইটিসের চেয়ে লিভার ক্যানসারের একটি বড় কারণ হয়ে উঠছে। ইনস্টিটিউট অব লিভার অ্যান্ড বিলিয়ারি সায়েন্সের (আইএলবিএস) নেতৃত্বে দেশের ৯ হাসপাতালের সমীক্ষায় এ উদ্বেগজনক চিত্র উঠে এসেছে। তাই ফ্যাটি লিভারে সমস্যা ডেকে আনতে পারে ডায়াবেটিস বা ক্যানসারের মতো রোগ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফ্যাটি লিভার দুই রকম হয়। এক. অ্যালকোহলিক। দুই. নন-অ্যালকোহলিক। প্রথমটি মাত্রাতিরিক্ত মদপান থেকে লিভারে চর্বি জমলে তা অ্যালকোহলিক ফ্যাট বলে পরিচিত। কিন্তু দ্বিতীয় ক্ষেত্রটি মূলত খাদ্যতালিকায় অতিরিক্ত, তেল, ফ্যাটজাতীয় উপাদান বেড়ে গেলে হয়ে থাকে। আবার হেপাটাইটিস বির কারণে লিভার ক্যানসারের ঘটনা বেশি হয়। এখন ডায়াবেটিসও একটি বড় ঝুঁকি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে।
গবেষণায় আরও উঠে এসেছে— লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি (৩৯.৫ শতাংশ) ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন। এনএএফএলডি ৩৫.৫ শতাংশ রোগীর লিভার ক্যানসারের কারণ হিসেবে পাওয়া গেছে।
এরপর হেপাটাইটিস বি ও হেপাটাইটিস সংক্রমণের প্রধান কারণ ছিল। গবেষণার জন্য ৫৭৯৮ জন রোগী রাখা হয়েছিল। এর মধ্যে ২৬৬৪ জনের লিভার ক্যানসার ছিল। রোগীদের গড় বয়স ছিল ৫৮ বছর, যার মধ্যে ৮৪.৩ শতাংশই ছিল পুরুষ।
আপনার জেনে রাখা উচিত— ৫০-৬০ শতাংশ লিভার ক্যানসার রোগী নিরাময় হয়ে থাকেন। বিদেশের তুলনায় ভারতে মৃত্যুর হার বেশি হলেও আইএলবিএসের চিকিৎসকরা বলছেন, বিদেশি দেশে যকৃতের ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের ৫০-৬০ শতাংশ নিরাময় হয়, যেখানে ভারতে সচেতনতার অভাবের কারণে রোগীরা উন্নত পর্যায়ে চিকিৎসার জন্য পৌছায়। এ কারণে এখানে রোগীদের বেঁচে থাকার হার মাত্র ২০-৩০ শতাংশ। আবার স্থূলতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের অবশ্যই ছয় মাসের ব্যবধানে আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা করানো গুরুত্বপূর্ণ।
ক্যানসারের উন্নত চিকিৎসা সম্ভব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, লিভার ক্যানসার বিশ্বব্যাপী দ্রুত বর্ধনশীল ক্যানসার, যা ক্যানসারের কারণে মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ হয়ে উঠছে। তবে স্বস্তির বিষয়— গত পাঁচ বছরে চিকিৎসার জন্য অনেক নতুন ওষুধ ও কৌশল আবির্ভূত হয়েছে, যার কারণে উন্নত চিকিৎসা সম্ভব হয়েছে।