ঢাকাই সিনেমার বর্তমান প্রজন্মের গ্ল্যামারাস নায়িকা অধরা খান। কাজ করছেন বাংলাদেশ ও ভারত-দুই দেশেই। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত বদলেছেন তিনি। কেন? এ তথ্যসহ সমসাময়িক বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে আজকের ‘হ্যালো...’ বিভাগে কথা বলেছেন এ নায়িকা।
* শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে মাঠ গরম হচ্ছে ক্রমান্বয়ে। বিতর্কও চলছে। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
অধরা খান: এখন সেভাবে নির্বাচন নিয়ে কিছু ভাবছি না। সম্মানিত শিল্পীরা যারাই নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন সবার জন্যই মন থেকে শুভকামনা। শিল্পী সমিতির নির্বাচনে জয়ী হয়ে খুব বেশি কিছু একটা যে হয়ে যায় এমন কিছু নয়। এটি আসলে শিল্পীদের মিলনমেলার একটা মহোৎসব। এ উৎসব ঘিরে অনেকের মধ্যে হয়তো অনেক প্রতিযোগিতা থাকে। গত কয়েক নির্বাচন থেকে একটু অন্যরকম প্রতিযোগিতা হয়েছে, যেটা বাহ্যিকভাবে একটু দৃষ্টিকটু হয়েছে, খুব বেশি সমালোচনা ছিল। যেহেতু আমি একজন ভোটার, যদি নির্বাচনের দিন দেশে থাকি তাহলে অবশ্যই যাব। আশা রাখি যারা এবারের নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসবেন, যে কারণে আমরা ভোট দেই, সেই চাওয়াগুলো অবশ্যই তারা পূর্ণ করবেন।
* অনেকে প্রকাশ্যে পছন্দের প্যানেলকে সাপোর্ট দিচ্ছেন। আপনি কার পক্ষে?
অধরা খান: আসলে সেভাবে তো বলার কিছু নেই কাকে সাপোর্ট দিচ্ছি, কাকে দিচ্ছি না। কারণ, যারাই নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন তাদের অনেকেই সম্মানের মানুষ, ভালোবাসার মানুষ। তাদেরকে অনেক ছোটবেলা থেকে ভালোবাসি সম্মান করি, পছন্দ করি। তাই আসলে কারো নাম নিয়ে কাউকে দুঃখ দিতে চাই না। একটা সুস্থ সুন্দর নির্বাচন চাই, এতটুকুই। আর এটাও চাই না, আমার প্রশ্নের উত্তরে দর্শকও কোনো ধরনের বাকবিতণ্ডার গন্ধ পাক। কারণ, সবাই এখন যেভাবে সমালোচনাকে পুঁজি করে ভাইরাল হচ্ছে, এসব থেকে দূরে থাকতে চাই।
* কিন্তু কারো কারো মধ্যে দ্বন্দ্বের কথাও শোনা যাচ্ছে। শিল্পী হিসেবে বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
অধরা খান: দেখুন, যেহেতু প্রতিযোগিতা আছে সেখানে দ্বন্দ্ব থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। তবে অবশ্যই এই উৎসবমুখর নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের নেতিবাচক কিছু ঘটুক, সেটি চাই না। সুস্থ প্রতিযোগিতা হোক। শিল্পী হিসেবে সবসময় সুস্থ ধারায় থাকুক সবাই। নিজেও থাকতে চাই। একজন শিল্পী হিসেবে দ্বন্দ্বের বিষয়টি আসলে দ্বন্দ্ব হিসেবে দেখতে চাই না, এটাকে আনন্দযুদ্ধ হিসেবেই আমি আখ্যায়িত করব।
* আপনিও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা বলেছিলেন। শোনা যাচ্ছে চিত্রনায়ক বাপ্পি চৌধুরীও প্রার্থী হবেন। এই কারণে আপনি নাকি সরে গিয়েছেন। সত্যি নাকি?
অধরা খান: আমি নিজেও কনফার্ম হওয়ার আগেই কীভাবে নির্বাচনের বিষয়টি এতটা প্রচার-প্রচারণায় চলে গেল এটি আসলে ভাববার বিষয়। হ্যাঁ, একটি প্যানেল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ছিল। তবে আমার ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক কারণে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছি। কারণ, সময় অনেক কম। নির্বাচন করলে করার মতোই করতে হবে। নিজের একটা প্রস্তুতি থাকতে হবে এবং এর পেছনে প্রচুর সময় দিতে হবে। এখন যে পরিমাণ সময় দিতে হবে এতটা সময় আমার নেই। আমি যেটাই করি না কেন, খুব মনোযোগ দিয়ে করার চেষ্টা করি। শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে যাই যাতে সেটি ভালো হয়। এসব কারণেই সরে আসা। তবে আপনি যে কারণটি বলেছেন, সেটি একদমই সত্য নয়। আমি নিজেও জানি না বা জানতাম না যে, তিনি প্রার্থী হচ্ছেন বা হবেন। আর নির্বাচন যার যার ব্যক্তিগত বিষয়। যার যার গ্রহণযোগ্যতা অনুযায়ী হয়। তাই এখানে অমুক নির্বাচন করলে আমি করব না, বিষয়টা এমন নয়।
* ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে পথচলা কতটা কঠিন বলে মনে করেন?
অধরা খান: কোনো কিছু জানা না থাকলে, বা যে পথে যাচ্ছি সে পথ সম্পর্কে ধারণা না থাকলে, যেকোনো নতুন পথই আসলে অনেক কঠিন হয়। সবাই জানি এখন সময়টাই অনেক কঠিন। সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে উদ্ধারের জন্য বাংলাদেশে হিন্দি সিনেমাও আমরা নিয়ে এসেছি। বাংলাদেশি শিল্পীদের জন্য এই কঠিন পথটা আরও অনেক বেশি কঠিন হয়ে গেছে। তাই কঠিনের সঙ্গেই সামঞ্জস্য রেখে পথ চলতে হচ্ছে, পথ চলছি। সেই পথ কখনো মসৃণ, কখনোবা কাঁটা বিছানো। এভাবেই চলে যাচ্ছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। হয়তোবা সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে, এই কঠিন পথের সঙ্গে চলাটাও সহজ হয়ে যাবে বলে, এটাই বিশ্বাস করি।
* সময়ের জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খানের নায়িকা হতে চান অনেকেই। আপনারও কী সেরকম কোনো ইচ্ছা আছে?
অধরা খান: এটা অনেক কঠিন প্রশ্ন হয়ে গেল আমার জন্য। এই প্রশ্নটার উত্তর তোলা থাক। সময় হলে দেব। আমাদের সুপারস্টারের জন্য সব সময় শুভকামনা।
* গত কয়েক বছর ধরে ঈদেই শুধু শাকিবকে দেখা যায়। আপনার কী মনে হয় ঈদ ছাড়া সিনেমা চলবে না, এই ভয়ে থাকেন শাকিব?
অধরা খান: প্রথম কথা হচ্ছে শাকিব খান যদি এতো ভয় পেতেন তাহলে আর সিনেমাই করতেন না। জীবনে যা কিছু অর্জন করেছেন, আর সিনেমা না করলেও তার চলতো। আর ইন্ডাস্ট্রির এতো খারাপ সময়ে সবচেয়ে বিগ বাজেটের সিনেমাগুলো শাকিব খানকে নিয়েই হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক তাকেই দেওয়া হচ্ছে। গত কয়েক বছর উনি যে কয়টি কাজ করেছেন সবগুলোই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাজেটের কমার্শিয়াল এন্টারটেইনিং সিনেমা। উনিও ব্যক্তি জীবন এবং ক্যারিয়ারের ঝড়ঝঞ্ঝা বাদ দিয়ে শুধু সিনেমার দিকেই মনোযোগী হয়েছেন। ইন্ডাস্ট্রি চাঙ্গা করে রেখেছেন। উনার অপজিটে নতুন অনেকেই কাজের সুযোগ পাচ্ছেন। আবার অনেকের তো শাকিব খানের সঙ্গে সিনেমা রিলিজ না হলেও উনার নাম বিক্রি করেও তারকা তকমা নিজের করে নিচ্ছে। ‘ভয়’ শব্দটা কি আসলেই শাকিব খানের সঙ্গে যায়? আসলেই কি ঈদ ছাড়া শাকিব খানের কোনো সিনেমা রিলিজ হয়নি? আমিতো জানি শাকিব খানের অনেক সিনেমা আসলে ঈদ ছাড়াই রিলিজের জন্য তৈরি হয়েছিল। আসলে সিনেমাগুলোর প্রযোজক তো শাকিব খান নয়, এই সিনেমার যারা প্রযোজক আমার মনে হয় এই প্রশ্নের উত্তর তারা খুব ভালো দিতে পারবেন। কেন তারা শাকিব খানের মতো সুপারস্টারের সিনেমা শুধুই ঈদে রিলিজ করেন।
* বর্তমান ব্যস্ততা কী নিয়ে?
অধরা খান: আগামী মে মাস থেকে আমার নতুন কিছু কাজ শুরু হচ্ছে। সেগুলোর স্ক্রিপটিং, রিহার্সাল, ডিরেক্টরদের সঙ্গে রেগুলার যতটুকু সম্ভব ব্রিফিং নেওয়া যায় নিচ্ছি। সেই কাজের জন্য নিজেকে তৈরি করছি। চরিত্রের জন্য নিজেকে ফিট করছি। এগুলোর পেছনে অনেক সময় চলে যাচ্ছে। গত বছর যেগুলো শেষ হয়েছে তার মধ্যে একদম কমপ্লিট কাজ রেডি হয়ে আছে ওহিদুজ্জামান ডায়মন্ডের ‘দখিন দুয়ার’। সেটির রিলিজ হয়তো এ বছরই হবে।
* বিদেশ ভ্রমণের নেশা আছে আপনার। আবার কবে যাবেন?
অধরা খান: আসলে ভ্রমণটা তো খুব প্ল্যান করে কখনো হয় না। যখন কাজ থাকে তখন প্ল্যান করে যাওয়া হয়। হয়তো হুটহাট করে আবার কোথাও না কোথাও চলে যাব। এখন আসলে সামনে আমার কাজের প্রেসারটা অনেক বেশি। তাই হুটহাট কোথাও যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না।