বাবারা পৃথিবীর সব আঘাত থেকে সন্তানকে আগলে রাখেন
জান্নাতুন নাঈম
প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২৩, ০৩:০১ পিএম
পৃথিবীতে কঠিন কিছু মানুষ আছে, যাদের ওপর থেকে দেখতে প্রচণ্ড রাগী আর কঠিন লাগলেও ভেতরে কোমল ও মায়াবী একটি হৃদয় আছে। পরিশ্রমে পরিশ্রমে তাদের শরীরটা শক্ত পাথরের মতো হলেও তার ভেতরে একটি নরম আর সন্তানের জন্য অফুরন্ত ভালোবাসায় গড়া একটি কোমল হৃদয় আছে!
ঘরের দেয়াল যেমনি করে ঘরের জিনিসগুলোকে পৃথিবীর সব আঘাত ও ঝড়বৃষ্টি থেকে বাঁচিয়ে রাখে, তেমনি করে তাদের দেয়ালের মতো চওড়া ঘামে ভেজা বলিষ্ঠ বুকটা আমাদের পৃথিবীর সব আঘাত থেকে আগলে রাখার ধ্যানে আজন্ম রত থাকে।
কখনো কখনো প্রচণ্ড ঝড়ে ঘর ভেঙে গেলেও প্রখর আঘাতেও বাবারা ভাঙেন না। বরং বারবার নতুন করে যেন গড়ে ওঠেন সন্তানের জন্য, সন্তানকে সুখে রাখার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে।
আমাদের আব্বা খুব সুস্থ-সবল, বলিষ্ঠ, পরিশ্রমী ও ভীষণ সাহসী একজন আদর্শ স্কুল শিক্ষক ছিলেন। আব্বাকে দেখেছি দিনরাত পরিশ্রম করতেন, কাজকে তিনি খুব ভালোবাসতেন। আমার আব্বা সবসময় বলতেন— সন্তানের জন্য সম্পদ নয়; বরং সন্তানকে সম্পদ বানিয়ে যাওয়া উচিত। তিনি তাই করেছেন। আমার বাবা ১১ তলা বাড়ি না করে তার ১১ সন্তানকে মানুষ করেছেন শিক্ষায় ও সম্মানে। আব্বা বলতেন, শিক্ষা দুই রকমের আছে— সুশিক্ষা আর কুশিক্ষা। তিনি তার সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গেছেন। এটাই তার জীবনের বড় পাওয়া। গাছ লাগানো ছিল তার প্রিয় কাজ।
গ্রামের আলো বাতাস মাটি, গাছ-গাছালি এসবেই যেন প্রাণ নিমজ্জিত ছিল। জীবনে কখনো কোনো অন্যায়ের কাছে তাকে মাথানত করতে দেখিনি। যে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ভুল আর মিথ্যার ছড়াছড়ি, অন্যায়ে ভরপুর এ সমাজের চোখে আমিও যদি বাবার মতো প্রতিবাদ করতে পারতাম। আব্বাকে দেখতাম, সবসময় আত্মীয়স্বজনদের খোঁজখবর রাখতেন আর সবার জন্য ব্যাগে করে এটা সেটা নিয়ে যেতেন। ভালোই চলছিল আমাদের ছোট থেকে বড় হওয়া। হঠাৎ আব্বার এমন অসময়ে চলে যাওয়াতে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে আমাদের! আমার কাছে মনে হয়, প্রতিটি বাবা একসঙ্গে কর্মজীবী ও স্বপ্নজীবী।
সন্তানকে মানে ও সম্মানে বড় করার জন্য প্রতিনিয়ত সহস্র স্বপ্নের চাষ করে কলিজার ভেতর। শুধু বিশেষ একটি দিনে নয়, সারা বছরজুড়ে বাবা-মা থাক প্রতিটি সন্তানের যত্নে, ভালোবাসায় ও শ্রদ্ধায়। কাছে-দূরে অথবা পরপারে সব বাবা-মা ভালো থাকুন।
জান্নাতুন নাঈম, নারী উদ্যোক্তা
লালবাগ, আজিমপুর, ঢাকা