Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের নামে ত্রাসের রাজত্ব

ডাকাতি-চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রক মিথুন

ধানমণ্ডি ও হাজারীবাগ এলাকা থেকে মাসে কোটি টাকা চাঁদা তুলতেন ছাত্রদলের সদ্য বহিষ্কৃত এই নেতা * গ্রেফতারের পর মিথুনকে ছাড়িয়ে নিতে নিউমার্কেট থানায় হামলার নেতৃত্ব দেন দুর্জয় ও শরিফুল

ইমন রহমান

ইমন রহমান

প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ডাকাতি-চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রক মিথুন

রাজধানীর ধানমন্ডি ও হাজারীবাগ এলাকায় চাঁদাবাজির অন্যতম নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা (সদ্য বহিষ্কৃত) মোহাম্মদ হোসাইন মিথুন। বিদেশে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল হক ওরফে ইমনের ডানহাত হিসাবে কাজ করেন তিনি। মিথুনের নেতৃত্বে ধানমন্ডি লেকসহ এসব এলাকার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট থেকে মাসে কোটি টাকার বেশি চাঁদা তোলা হয়। এলাকাজুড়ে ইমনের নামে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন তিনি। 

চাঁদাবাজি ছাড়াও মিথুনের বিরুদ্ধে ডাকাতিতে অংশ নেওয়ার প্রমাণ পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত বছরের ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে ধানমন্ডি ও হাজারীবাগ এলাকায় দলবল নিয়ে বাসাবাড়িতে ঢুকে একাধিক ডাকাতির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া সড়কের গাড়ি থামিয়েও ডাকাতিতে অংশ নেন মিথুন। ওইসব এলাকা থেকে সংগৃহীত সিসিটিভি ফুটেজে ডাকাতিতে ছাত্রদলের এই বহিষ্কৃত নেতার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় তাকে কোনো ডাকাতির মামলায় আসামি করা হয়নি-এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে এতদিন ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন তিনি। 

গত ১০ জানুয়ারি রাতে এলিফ্যান্ট রোডের মালটিপ্ল্যান সেন্টারের সামনে এলিফ্যান্ট রোড কম্পিউটার সোসাইটির সভাপতি ওয়াহিদুল হাসান দিপু ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হককে কুপিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় মিথুনের সংশ্লিষ্টতা পায় পুলিশ। মূলত এলিফ্যান্ট রোডে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন গ্রুপের চাঁদা তোলার বাধা হয়ে দাঁড়ান এই দুই ব্যবসায়ী নেতা। এ ঘটনায় সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে মিথুনকে শুক্রবার ভোররাতে রাজধানীর ৩০০ ফিট এলাকা থেকে গ্রেফতার করে নিউমার্কেট থানা পুলিশ। গ্রেফতারের পর তাকে ছাড়িয়ে নিতে থানার সামনে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। আহত হন নিউমার্কেট জোনের এসিসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য। পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনায় নিউমার্কেট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ওমর ফারুক বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলায় ১৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৩০ থেকে ৩৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। এজাহার নামীয় আসামিরা হলেন-মোহাম্মদ হোসাইন ওরফে মিথুন, মো. বশির ইসলাম, মো. হাসান, মো. ইমন, মো. মাসুম মাহমুদ, মো. আলামিন, মো. আকবর আলী, শরীফ, তরিকুল (কাঁঠালবাগান যুবদল), হীরা, তৈফিক, পারভেজ, দুর্জয় ও চঞ্চল। এদের মধ্যে বশির ইসলাম, মোহাম্মদ হাসান, মোহাম্মদ ইমন, মাসুম মাহমুদ, মোহাম্মদ আলামিন ও আকবর আলীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের শুক্রবার আদালতে পাঠালে বশিরকে একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। অন্যদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। রিমান্ড শেষে শনিবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে বশিরকে। 

এদিকে এ ঘটনায় ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসাইন মিথুন ও সহসাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল হাসান রাসেলকে সংগঠন থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। সূত্র বলছে, গ্রেফতার বশির ইসলামের বিরুদ্ধে কলাবাগান থানায় দুটি মামলা রয়েছে। পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেফতাররা বেশির ভাগই কলাবাগান এলাকার যুবদলের ক্যাডার বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৩০০ ফিট এলাকা থেকে মিথুনকে পুলিশ গ্রেফতারের পর তিনি দুর্র্জয় ও কালা বিল্লাল নামের দুই সহযোগীকে ফোনে বিষয়টি জানান। তাদের নিউমার্কেট থানার সামনে আসতে বলেন। তারা থানার সামনে এসে মিথুনকে ছাড়িয়ে নিতে পুলিশের ওপর হামলা করে। দুর্জয় ও বিল্লাল এখনো পলাতক রয়েছে। রিমান্ডে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বশির হামলায় অংশ নেওয়াদের বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছেন। 

নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহসিন উদ্দিন আতিক যুগান্তরকে বলেন, আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় গ্রেফতার একজন রিমান্ডে ছিলেন। তাকে শনিবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত অব্যাহত আছে। 

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (বহিষ্কৃত) মোহাম্মদ হোসাইন মিথুন ঢাকা কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। থাকেন ধানমন্ডি এলাকায়। আগে থেকেই তিনি আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে যুক্ত। তবে ৫ আগস্টের পর তার লোকদের শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত করে দেন। এরপর থেকে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। তার বিরুদ্ধে ধানমন্ডি এলাকায় জোর করে স্কুল দখলের অভিযোগও রয়েছে। মূলত স্থানীয় সন্ত্রাসী এজাজকে সঙ্গে নিয়ে ধানমন্ডি ও হাজারীবাগ এলাকায় চাঁদাবাজিসহ সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন মিথুন। বিশেষ করে ধানমন্ডি লেককেন্দ্রিক ও বিভিন্ন রেস্টুরেন্টকেন্দ্রিক চাঁদা তোলেন তারা। শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের নামে এসব চাঁদা তোলা হয়। চাঁদা তোলা নিয়ে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালের সঙ্গেও বিরোধ ছিল তাদের। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তারা দুজনই ‘হারানো সাম্রাজ্য’ ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। 

ইমনের ডানহাত মিথুনের অন্যতম সহযোগী চঞ্চল ও মুন্না রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। এসব চাঁদাও তোলা হয় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের নামে। চাঁদার একটি অংশ নিয়মিত ইমনকে পাঠানো হয়। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের নিয়ন্ত্রিত এলাকা হাজারীবাগ, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট ও কলাবাগান। অপর শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালের নিয়ন্ত্রিত এলাকা মোহাম্মদপুর ও আদাবর। তবে পিচ্চি হেলালের (পটপরিবর্তনের পর কারামুক্ত) ছোট ভাই ওয়াহিদুল হাসান দিপুর (এলিফ্যান্ট রোড কম্পিউটার সোসাইটির সভাপতি) সহযোগিতায় এলিফ্যান্ট রোড এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করে পিচ্ছি হেলাল। দিপুর কারণে এসব এলাকায় চাঁদা তোলা বন্ধ হয়ে যায় ইমন গ্রুপের। এ থেকেই দুই গ্রুপের মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত। 

সূত্র বলছে, ১০ জানুয়ারির হামলার নেপথ্যে ছিল এলিফ্যান্ট রোড কম্পিউটার সোসাইটিতে শতাধিক দোকানের চাঁদা। এসব দোকানের ইন্টারনেট, পানি সাপ্লাইয়ের ব্যবসা, সামনের ফুটপাতের চাঁদাবাজিতে চঞ্চল ও মুন্নার পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ান পিচ্চি হেলালের ছোট ভাই ওয়াহিদুল হাসান দিপু। ফলে দিপুকে শিক্ষা দিতেই এই হামলা করে তারা। ১০ জানুয়ারির ওই হামলায় অংশ নেওয়া ক্যাডাররা ছিল হাজারীবাগ, মোহাম্মদপুর ও জেনেভা ক্যাম্প এলাকার। ছাত্রদল নেতা মিথুনের অনুসারী ছিল তারা। 

সম্প্রতি ধানমন্ডিতে অনুষ্ঠিত এলিফ্যান্ট রোড কম্পিউটার সোসাইটির নির্বাচন পণ্ড করার দায়িত্বও ছিল ওই সময়ের ছাত্রদল নেতা মিথুনের ওপর। মিথুন দলবল নিয়ে সেখানে গেলেও বিপুলসংখ্যক পুলিশের উপস্থিতির কারণে মিশন বাস্তবায়ন হয়নি।


Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম