বিমানের টরন্টোগামী ফ্লাইটে নারী ক্রুকে যৌন হয়রানির অভিযোগ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:১৯ পিএম
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাইলটের পর এবার টরন্টোগামী ফ্লাইটে এক পুরুষ কেবিন ক্রুর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছেন এক নারী ক্রু। বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বরাবর অভিযোগ দেওয়া হলেও এখনো ওই পুরুষ ক্রুর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সম্প্রতি বিমানের সবচেয়ে সুরক্ষিত জায়গা ককপিটে পাইলটের আসনে আরও দুটি যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটে। এ দুটি ঘটনায় যৌন হয়রানির শিকার হন দুই নারী কেবিন ক্রু। তারা অভিযুক্ত পাইলটদের বিরুদ্ধে বিমান এমডির কাছে অভিযোগ করেন। তবে কোনো ঘটনায়ই এখন পর্যন্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
গত ১৯ নভেম্বর বিমানের এমডি বরাবর যৌন হয়রানির অভিযোগ দেন এক কেবিন ক্রু। অভিযোগে বলা হয়, ওই নারী কেবিন ক্রু বিমানের ফ্লাইট সার্ভিস উপ-বিভাগে ফ্লাইট স্টুয়ার্ডেস হিসাবে কর্মরত। ১৮ অক্টোবর তিনি ঢাকা থেকে টরন্টোর ফ্লাইটে ওঠেন। ঢাকা থেকে ইস্তাম্বুল সেক্টরে তার পজিশন ছিল এ ফোর। ওই ফ্লাইটে এ টু ছিলেন আরেক কেবিন ক্রু এফএস শিশির। ঢাকা থেকে ইস্তাম্বুল সেক্টরে গ্যালিতে কাজের সময় শিশির প্রথমে আকস্মাৎ তার শরীর স্পর্শ করেন। বিষয়টি শিশিরকে বুঝতে না দিয়ে তিনি এড়িয়ে যান। কিন্তু ফ্লাইটে অন্যদের অগোচরে কাজের ফাঁকে বারবার শিশির ওই কেবিন ক্রুকে অশালীনভাবে স্পর্শ করতে থাকেন, যা কুরুচিপূর্ণ ও যৌন হয়রানির পর্যায়ে পড়ে। ওই নারী স্তম্ভিত হয়ে ফ্লাইটেই এর প্রতিবাদ করেন।
ওই অভিযোগে আরও বলা হয়, ওই ঘটনায় নারী কেবিন ক্রু মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে যান। বিষয়টি অন্য কলিগদের সঙ্গে শেয়ার করেন। কিন্তু তারপরও ইস্তাম্বুল থেকে টরন্টো যাওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে আবারও শিশিরের সঙ্গে উড়োজাহাজের মিড পজিশন দেওয়া হয়। এ সময় শিশিরের সঙ্গে সখ্য থাকা অন্য পুরুষ ও নারী কেবিন ক্রুরা তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন।
অভিযোগে নারী কেবিন ক্রু বলেন, শিশিরের যৌন হয়রানির বিষয়টি প্রথমে গুরুত্ব দেইনি। কিন্তু যখন দেখি ইস্তাম্বুল থেকে টরন্টো ফ্লাইটে ফের তার সঙ্গে একই সেক্টরে কাজ পড়েছে, তখন আগের ঘটনাটি চিফ পার্সারকে জানাই। তখন চিফ পার্সারসহ শিশিরের পক্ষের কয়েকজন আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়। পরে টরন্টোতে হোটেলে পৌঁছানোর পর ব্রিফিংয়ে আমাকে তারা স্যরি বলতে বাধ্য করেন। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার চাই।
অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করে শিশির বলেন, ‘বিমানের নিয়ম অনুযায়ী টরন্টোগামী ফ্লাইটে ইস্তাম্বুলে ক্রু সেট পরিবর্তন হয়। সেখানে দুদিন থেকে আবার আরেক ফ্লাইটে ওঠেন কেবিন ক্রুরা। এই হিসাবে যেদিন আমরা ইস্তাম্বুল থেকে টরন্টো যাত্রা শুরু করব, তখন ওই নারী কেবিন ক্রু ফ্লাইটের চিফ পার্সারের কাছে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন। তখন চিফ পার্সারসহ অন্য সহকর্মীরা তার প্রতিবাদ জানান। অভিযোগের প্রমাণ দিতে বলেন। কারণ, ঘটনার তিনদিন পর কেন অভিযোগ জানানো হলো। পরে প্রমাণ দিতে না পারায় ওই নারী সহকর্মী সবার কাছে স্যরিও বলেন।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী পরিচালক (সিইও) সাফিকুর রহমান বলেন, ‘নারী সহকর্মী বা কেবিন ক্রুদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে বিমান বদ্ধপরিকর। সম্প্রতি বিমানের আলাদা ফ্লাইটে তিন নারী কেবিন ক্রু যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তাদের অভিযোগ আমলে নিয়ে আলাদা আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখনো তদন্ত কমিটি কাজ করছে। আমরা বিষয় দুটি খুব সিরিয়াসলি নিয়েছি। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণ হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’