মনিরুল ইসলাম ও শফিকুল। ফাইল ছবি
পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী শফিকুল আলম। অর্থের বিনিময়ে জমি দখল করে দেওয়া, বালু ব্যবসা, পোস্টিং বাণিজ্য, মাদক ব্যবসায়ীদের আশকারা দেওয়া, ওসির কাছ থেকে ঘুস নেওয়া এবং ঝুট ব্যবসাসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ গাজীপুরের সদ্য সাবেক এই এসপির বিরুদ্ধে।
তিনি এসপি থাকাকালীন পাড়া-মহল্লার অলিতে-গলিতে মাদকের বিস্তার ঘটে। দুর্নীতি ও ক্ষমতা অপব্যবহার করাই ছিল যার নেশা। একদিকে বাড়ি গোপালগঞ্জ এবং অন্যদিকে এসবির সাবেক প্রধান (অতিরিক্তি আইজিপি) মনিরুল ইসলামের ভায়রা ভাই। তাকে আর ঘাঁটায় কে। যে কারণে অসীম ক্ষমতার দম্ভে তিনি কাউকে পরোয়া করতেন না। সম্প্রতি তাকে ময়মনসিংহের ডিআইজি অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এসপি শফিকের ভায়রা প্রভাবশালী মনিরুল ইসলামকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়। মনিরুল ও শফিকুল দুজনের বাড়িই গোপালগঞ্জে। বাড়ি গোপালগঞ্জে হওয়ায় এবং শীর্ষ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তার আত্মীয় হওয়ায় ধরাকে সরা জ্ঞান করতেন এসপি শফিকুল। সাধারণ মানুষ কোনো অভিযোগ নিয়ে তার কাছে গেলে কোনো পাত্তা দিতেন না। গাজীপুরের এসপি হিসাবে যোগদানের মাস দেড়েকের মধ্যেই কালীগঞ্জের নাগরী ইউনিয়নের উলুখোলা এলাকায় সাড়ে তিন কোটি টাকা দিয়ে জমি কেনেন শফিকুল। খবর সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের।
সূত্র জানায়, শফিকুল ইসলাম কয়েক বছর আগে যখন ঢাকায় ডিবিতে কর্মরত ছিলেন তখন ব্যাপকভাবে ক্ষমতার ছড়ি ঘুরিয়েছেন। তৎকালীন ঢাকার পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমানের লাঠিয়াল বাহিনী হিসাবে শফিকুল বহুবিধ অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। তখন শফিউর ও শফিকুলের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম সালমান এফ রহমানের ভাড়াটিয়া বাহিনী হয়ে ঢাকা শহরে আইনবিরোধী বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করে। শাহ মিজান শাফিউর রহমান বর্তমানে ডিআইজি।
সম্প্রতি তাকে সিলেটের ডিআইজি পদ থেকে সরানো হয়েছে। ভুক্তভোগীরা ক্ষমতার চরম অপব্যবহারকারী এই শ্রেণির পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানান। এদিকে উল্লিখিত অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে যুগান্তরের পক্ষ থেকে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও এসপি শফিকুল ইসলাম ফোন রিসিভ করেননি।
সূত্র জানায়, গাজীপুর সদর (জয়দেবপুর) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) থাকার সময় প্রায় এক বছর আগে সৈয়দ মিজানুর রহমান একজন সুন্দরী কলেজছাত্রীকে মানিকগঞ্জ থেকে ফুসলিয়ে গাজীপুরে আনেন। তাকে শালবন ইকো রিসোর্ট নামের একটি রিসোর্টে ১০ দিন আটকে রেখে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি জানান পর এসপি কাজী শফিকুল আলম ওই ওসিকে তার অফিসে ডেকে আনেন। রাতভর নানা নাটকীয়তার পর ওসির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুস নেন। এরপর ধর্ষণ মামলা থেকে বাঁচতে ওসির সঙ্গে কলেজছাত্রীর বিয়ের ব্যবস্থা করেন। বিয়ের পর ওসি মিজান কলেজছাত্রীকে নিয়ে একটি ভাড়া বাসায় উঠলেও পরে এড়িয়ে চলেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সানোয়ার হোসেনকে দিয়ে তদন্ত চালানোর পর ঘটনাটি ধামাচাপা দেন এসপি শফিকুল।
এদিকে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, এ ধরনের ক্ষমতা অপব্যবহাকারী দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ অফিসারকে শুধু বদলি কিংবা সংযুক্ত করলে হবে না তার বিরুদ্ধে দ্রুততার সঙ্গে কার্যকর তদন্ত শুরু হতে হবে। এরপর বিভাগীয় মামলা দায়েরসহ দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে সম্পদের হিসাবও নিতে হবে। একইসঙ্গে বিদেশ যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ‘গভীর জলের মাছ’ কাজী শফিকুল আলম বেশিরভাগ ঘটনাতেই কাজ করেছেন নেপথ্যে থেকে। সামনে রাখতেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সানোয়ার হোসেন ও মিরাজুল ইসলামকে। অতিরিক্ত এসপি সানোয়ার হোসেনের সহযোগী ছিলেন জয়দেবপুর থানার এসআই খালেক ও এএসআই মাহফুজ।
গাজীপুর সদর উপজেলার সড়কঘাট পার হয়ে কালিয়াকৈর উপজেলার সীমান্তবর্তী কাথাচুড়া গ্রামের সোনাতলা মৌজা। ওই মৌজায় ঘন গজারিবনের পাশে শালদহ ইকো রিসোর্ট নামে একটি বিনোদন পার্ক তৈরি করা হয়েছে। ওই রিসোর্টে যাওয়ার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে বিপুল অর্থ ব্যয়ে একটি নতুন রাস্তাও তৈরি করা হয়েছে। এসপি শফিকুলের ছত্রছায়ায় এখানে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি দখল করেছেন পুলিশসহ সাবেক-বর্তমানে কর্মরত বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী কর্মকর্তা।
শালদহ ইকো রিসোর্টটি ‘আদি ভাওয়াল কর্মজীবী সমবায় সমিতির নামে বলা হলেও এর বেশিরভাগ অংশের মালিক গাজীপুর মহানগরের পূবাইল এলাকার বাসিন্দা ও রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিসুর রহমানসহ গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী এলাকার বাসিন্দা ও সিলেটের এসপি আব্দুল মান্নান, এসপি বাবুল এবং গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাড. রীনা পারভীনের। এখানকার জমি দখলসহ নানা অপকর্ম জায়েজ করতে সমিতির সদস্য করা হয় সাবেক মুক্তিযদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের।
স্থানীয়রা জানান, সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে জোরপূর্বক জমি দখলের কাজে সহযোগিতা করতেন গাজীপুরের এসপি শফিকুল আলম। তিনি প্রায়ই ওই রিসোর্টে যেতেন। রিসোর্টের জমি দখলের বিষয়ে জানতে বেসরকারি টেলিভিশনের একজন সাংবাদিক এসপি অফিসে গেলে তিনি (শফিকুল) ওই সাংবাদিকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। গাজীপুরের মাওনা এলাকার একজনের স্থাপনাসহ মূল্যবান জমি জোরপূর্বক দখল করে নেয় শেখ সেলিমের মেয়ের জামাইয়ের নেতৃত্বাধীন একটি চক্র।
ওই বিষয়ে সাহায্য পেতে ভুক্তভোগী ব্যক্তি এসপি কাজী শফিকুল আলমের কার্যালয়ে যান। কিন্তু এসপি শফিকুল এ বিষয়ে কিছু করতে পারবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। এমনকি এও বলেন, শেখ সেলিমের মেয়ের জামাইয়ের সঙ্গে বসে ঝামেলা শেষ করা ছাড়া আর কোনো পথ নেই। গাজীপুরের এসপি থাকাকালীন কাজী শফিকুল আলম ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, সাংবাদিকদের ফোনও ধরতেন না। কারণে-অকারণেই সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন।
সূত্র জানায়, শফিকুল ইসলাম কয়েক বছর আগে যখন ঢাকায় ডিবিতে কর্মরত ছিলেন তখন ব্যাপকভাবে ক্ষমতার ছড়ি ঘুরিয়েছেন। তৎকালীন ঢাকার পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমানের লাঠিয়াল বাহিনী হিসাবে শফিকুল বহুবিধ অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। তখন শফিউর ও শফিকুলের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম সালমান এফ রহমানের ভাড়াটিয়া বাহিনী হয়ে ঢাকা শহরে আইনবিরোধী বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করে। শাহ মিজান শাফিউর রহমান বর্তমানে ডিআইজি।
সম্প্রতি তাকে সিলেটের ডিআইজি পদ থেকে সরানো হয়েছে। ভুক্তভোগীরা ক্ষমতার চরম অপব্যবহারকারী এই শ্রেণির পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানান। এদিকে উল্লিখিত অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে যুগান্তরের পক্ষ থেকে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও এসপি শফিকুল ইসলাম ফোন রিসিভ করেননি।