Logo
Logo
×

অপরাধ

উপসচিব পরিচয়ে শিক্ষকদের ৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:৩৫ পিএম

উপসচিব পরিচয়ে শিক্ষকদের ৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ

মাদ্রাসা শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি ও নবনিয়োগপ্রাপ্ত লাইব্রেরিয়ানদের বেতনভাতাদি নিয়মিত করে দেওয়ার আশ্বাসে চার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে একটি চক্র। বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য করতে শিক্ষকদের কাছে তারা নিজেদেরকে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের উপসচিব ও প্রোগ্রাম অফিসার পরিচয় দেন। কাজ করে দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়ে বন্ধ করে দেন যোগাযোগ। বদলে ফেলেন মোবাইল ফোনের সিম। 

ভুক্তভোগী শিক্ষকরা অধিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন উপসচিব ও প্রোগ্রাম অফিসার পরিচয় দেওয়া নামে কোনো কর্মকর্তা সেখানে নেই। প্রতারণার এসব ঘটনায় মামলা হলে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অভিযান চালিয়ে দুই প্রতারককে গ্রেফতার করে।

পিবিআই জানায়, সারা দেশে অসংখ্য শিক্ষককে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে চক্রটি হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক কোটি টাকা। কেউই টাকা ফেরত পাননি। প্রতারণার শিকারদের একজন বাদী হয়ে ২০২৩ সালের ৯ ডিসেম্বর বংশাল থানায় মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে পিবিআই। প্রাপ্ত তথ্য ও প্রতারিতদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জুবায়ের ওরফে আসাদুজ্জামান মানিক ওরফে লুৎফর রহমানকে (৪৭) ১৫ ফেব্রুয়ারি রাত ২টায় গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ থানার ফলগাছা গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি নিজেকে প্রোগ্রাম অফিসার পরিচয় দিতেন। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপর সহযোগী আব্দুল গফফার ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে সাইফুলকে (৭৭) রাজধানীর উত্তরা-পশ্চিম থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) একটি দল। তিনি পরিচয় দিতেন উপসচিব হিসাবে।

রোববার দুপুরে আগারগাঁওয়ে পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত ডিআইজি মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের ভুয়া উপসচিব, প্রোগ্রাম অফিসার কখনো সিস্টেম এনালিস্টের পরিচয়ে মাদ্রাসা শিক্ষকদের টার্গেট করে। এরপর এমপিওভুক্তি ও নবনিয়োগপ্রাপ্ত লাইব্রেরিয়ানদের বেতন ভাতাদি নিয়মিত করে দেওয়ার আশ্বাসে চার কোটির বেশি ঢাকা প্রতারণা করে আত্মসাৎ করেছে।

পিবিআই বলছে, প্রতারকচক্রটির খপ্পরে পড়েছেন ভোলা চরফ্যাশনের কুচিয়ামোড়া ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা আছলামিয়া হামেলা খাতুন বালিকা দাখিল মাদ্রাসা, দক্ষিণ চরফ্যাশন শামছুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা, আমিনাবাদ হাকিমিয়া দাখিল মাদ্রাসা, আছলামপুর মোহাম্মদীয়া দাখিল মাদ্রাসা, দক্ষিণ আছলামপুর মোবারক আলী দাখিল মাদ্রাসা, কুন্ডের হাওলা রাশিদীয়া দাখিল মাদ্রাসা, নূরাবাদ হোসাইনীয়া ফাজিল মাদ্রাসা, লালমোহন ইসলামীয়া কামিল মাদ্রাসা, উত্তর চরমানিকা লতিফীয়া দাখিল মাদ্রাসা এবং পূর্ব ফরিদাবাদ ইউনূসীয়া জিহাদুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক, প্রিন্সিপাল ও সুপাররা প্রতারিত হয়েছেন। এর বাইরে আরও ভুক্তভোগী রয়েছেন।

পুলিশ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, চক্রটি আসলে টার্গেট করে ফাঁদ পেতে প্রতারণা করত। এ চক্রের সম্পর্কে জানা যায় ২০২৩ সালে। তবে তারা ২০১৯ সাল থেকে এ ধরনের অভিনব প্রতারণায় জড়িত। এমপিওভুক্তি বাতিল করার ভয়ভীতি দেখিয়ে এবং এমপিওভুক্তি বহাল রাখা, আবার মাদ্রাসার নবনিযুক্ত লাইব্রেরিয়ানদের বেতন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শাখা থেকে নিয়মিত করে দেওয়ার কথা বলে আসাদুজ্জামান মানিকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও সুপারদের সাক্ষাৎ করতে ঢাকায় ডাকা হয়। এরপর ২০২১ সালের ২ আগস্ট উল্লি­খিত মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও সুপাররা বিশ্বাস করে সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশ সচিবালয়ের বিপরীতে ওসমানী মিলনায়তনের সামনে দেখা করেন জোবায়ের রহমানের সঙ্গে। যিনি নিজেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শাখার প্রোগ্রাম অফিসার পরিচয় দেন। সেখান থেকে মামলার বাদী ভোলা চরফ্যাশনের কুচিয়ামোড়া ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল কামরুজ্জামানসহ অন্য সব মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও সুপাররা বংশাল থানা রায়সাহেব বাজারে যান। সেখানে ১২ লাখ টাকা চান জোবায়ের। সেদিন নগদ দেওয়া হয় ৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা। চারটি মোবাইল ফোন নম্বরে নগদ ও বিকাশের মাধ্যমে আরও মোট ৪ লাখ ৬১ হাজার ১০০ টাকা পাঠান শিক্ষকরা।

জাহাঙ্গীর আলম আরও জানান, টাকা দিয়েও কাজ না হওয়ায় এবং মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন বন্ধ হয়ে যায় এবং নিয়োগপ্রাপ্ত লাইব্রেরিয়ানদের বেতনের অগ্রগতি না দেখতে পেয়ে সবাই খোঁজ নিতে থাকেন। মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে খোঁজখবর নিয়ে তারা জানতে পারেন, জুবায়ের ওরফে আসাদুজ্জামান মানিক নামে কোনো প্রোগ্রাম অফিসার কর্মরত নেই। তখন ভুক্তভোগী শিক্ষকরা নিরুপায় হয়ে একরকম রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছিলেন। টাকা ফেরত পাচ্ছিলেন না। পিবিআই মামলাটি তদন্তের ভার নিয়ে দুই মাসের মধ্যেই মূল দুই প্রতারককে গ্রেফতার করে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম