র্যাব পরিচয়ে তুলে নিয়ে ছিনতাই, দুইশ সিসিটিভি ফুটেজ দেখে গ্রেফতার ৫
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:২৮ পিএম
প্রতীকী ছবি
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ব্যাংকে টাকা জমা দিতে যাওয়া ব্যবসায়ীকে র্যাব পরিচয়ে তুলে নিয়ে সাড়ে ৫ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, তাদের শনাক্ত করতে ঘটনাস্থল ও আশপাশের ২০০ সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করতে হয়েছে। তবে দুর্বৃত্তরা গ্রেফতার হলেও উদ্ধার হয়নি লুণ্ঠিত টাকা।
নিজ কার্যালয়ে মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার এইচএম আজিমুল হক। গ্রেফতাররা হলেন- সুমন মিয়া, মাসুদ মিয়া, আশরাফুল ইসলাম ওরফে আপেল, ইকবাল হোসেন ও সাইদুল হক।
তিনি জানান, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় মোহাম্মদপুর টাউন হলের ইউসিবি ব্যাংকের সামনে থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজতে থাকা ভুয়া নম্বর প্লেট লাগানো একটি প্রাইভেটকার, চারটি ভুয়া নম্বর প্লেট, র্যাবের দুটি কালো কটি, একটি ক্যাপ, একটি খেলনা পিস্তল, একটি হ্যান্ডকাফ, একটি লাঠি ও পুলিশের দুটি স্টিকার জব্দ করা হয়।
উপকমিশনার এইচএম আজিমুল হক জানান, ১৭ সেপ্টেম্বর দুপুর পৌনে ২টায় মোহাম্মদপুরের রিং রোডের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক থেকে টাকা তুলে পূবালী ব্যাংকে জমা দিতে যাচ্ছিলেন ব্যবসায়ী মো. ইসরাফিল। হঠাৎ তার পথরোধ করে দাঁড়ায় একটি প্রাইভেটকার। র্যাবের জ্যাকেট পরা দুজন গাড়ি থেকে নেমে ইসরাফিলের কাছে জানতে চায় তার ব্যাগে কি আছে। তারা একপর্যায়ে ইসরাফিলকে মারধর করে জোর করে প্রাইভেটকারে তুলে নেয়। এরপর তার দুই হাতে হ্যান্ডকাফ পরায়। গামছা দিয়ে বেঁধে দেয় তার দুচোখ। গুলি করে হত্যার হুমকি দিয়ে ব্যাগে থাকা ৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ও পকেটে থাকা আড়াই হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় তারা। এরপর দুপুর সোয়া ২টার দিকে শেরেবাংলা নগরে গণভবন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে তাকে নামিয়ে দিয়ে দ্রুত চলে যায় প্রাইভেটকারটি।
এ ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে আরও কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনার তথ্য পায় পুলিশ। চক্রের সদস্যরা নিজেদের র্যাব পরিচয় দিলেও তারা বাহিনীটির সদস্য নয়। পরে ইসরাফিলের ভগ্নিপতি মো. আবু তালেব খোরশেদ বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন।
এ ঘটনায় তদন্তে নেমে শ্যামলী ডাচ্-বাংলা ব্যাংক এবং ব্র্যাক ব্যাংকের আশপাশের এলাকা ও আসামিদের যাত্রাপথের প্রায় ২০০ সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে একটি সন্দেহজনক গাড়ির অবস্থান শনাক্ত করা হয়। এ ছাড়া কয়েকজন ব্যক্তির সন্দেহজনক গতিবিধি লক্ষ্য করা যায়। পাশাপাশি সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের অভ্যন্তরে সন্দেহজনক ব্যক্তিদের মধ্যে একজনের অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যায়। পরে প্রযুক্তির সহায়তা ও নির্ভরযোগ্য সোর্সের মাধ্যমে ঘটনার সঙ্গে জড়িত চক্রটিকে স্বল্প সময়ে মধ্যে শনাক্ত করা হয়।
উপপুলিশ কমিশনার জানান, চক্রটি রাজধানীসহ আশপাশের জেলাগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে র্যাব পরিচয়ে দিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ফেরা ব্যক্তিদের জোর করে তাদের গাড়িতে তুলে সর্বস্ব লুট করত। তদন্তে একই ধরনের ঘটনায় গাজীপুর সদর, তুরাগ ও কালিয়াকৈরসহ বিভিন্ন থানায় মামলার তথ্য পাওয়া যায়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা পুলিশকে জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে র্যাব পরিচয়ে তারা অপহরণ ও ছিনতাইসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে আসছিল। র্যাব পরিচয়ে তারা গত ৩ মাসে এ ধরনের ২৫টি ঘটনা ঘটিয়েছে। তুরাগ, কালিয়াকৈর, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর, হবিগঞ্জের মাধবপুর এবং ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় এসব ছিনতাই ও লুটের ঘটনা ঘটিয়েছে তারা।
গ্রেফতার সুমনের নামে ১১টি, মাসুদের নামে ৬টি, আপেলের নামে ১১টি ও ইকবালের নামে ৩টি মামলার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এরা বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার হয়েছে। এরপর জামিনে বের হয়ে ফিরেছে পূর্বের পেশায়।