আন্ডারওয়ার্ল্ডের আধিপত্যের দ্বন্দ্বে শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনের ওপর হামলা-গুলি, মামলা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:২৫ পিএম
ছবি: ভিডিও ফুটেজ থেকে নেওয়া
রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে বিজি প্রেস মাঠ সংলগ্ন গলিতে শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাঈদ মামুনসহ ৩ জনকে কুপিয়ে ও গুলি করে আহতের ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। এতে আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাতনামা ৭-৮ জনকে। গুলিবিদ্ধ পথচারী ভুবন চন্দ্র শীলের স্ত্রী বাদী হয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় বুধবার এ মামলা দায়ের করেন। তবে রাত ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
সোমবার রাতের এই ঘটনার পর থেকেই পুলিশের পাশাপাশি, ডিবি, সিআইডি, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট ছায়াতদন্ত করছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের আধিপত্যের দ্বন্দ্বের জেরেই এই হামলার ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে, ঘটনার পরই পুলিশ তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের ওই ঘটনাস্থল ও আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে। শুধু তাই নয়, ঘটনাস্থল থেকে চারপাশে যেসব রাস্তা আছে, প্রায় সব এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব ফুটেজ পর্যালোচনা করে এরইমধ্যে একাধিক হামলাকারীকে শনাক্ত করা হয়েছে।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসি আজিমুল হক জানিয়েছেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদেরকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই কারও নাম প্রকাশ করা যাবে না।
আরও পড়ুন: প্রাইভেটকার থামিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি, যে তথ্য দিলেন ডিবির হারুন
এদিকে হামলার সময় সঙ্গে থাকা মামুনের দুই সহযোগীকে নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সন্ত্রাসী মামুনকে কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হলেও তার দুই সহযোগী মিঠু ও খোকনের গায়ে একটি আচড়ও লাগেনি। এমনকি তারা প্রতিরোধও করেনি। হামলার পরপরই মামুনের সহযোগী মিঠু ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। আর খোকন থানায় গিয়ে খবর দেয়। পুলিশ খোকনকে হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে। এছাড়া নজরদারিতে রয়েছেন আহত শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনও।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মাজহারুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় তদন্ত অব্যাহত আছে। পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। তিনি জানান, আহত ভুবন চন্দ্র শীলের স্ত্রী রত্না মজুমদার বাদী হয়ে এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ৭-৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।
গত সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে শিল্পাঞ্চল থানার সিটি পেট্রোল পাম্প এবং বিজি প্রেসের মাঝামাঝি গলির রাস্তায় পৌঁছালে ৪টি মোটরসাইকেলে ৭-৮ জন হামলাকারী মামুনের প্রাইভেটকার থামিয়ে তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এরপর মামুনের পিঠে ও ঘাড়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করে। এ ঘটনায় পথচারীর ভুবন চন্দ্র শীলের (৫৫) মাথার পেছনে গুলি লাগে। এছাড়াও আহত হন আরেক পথচারী আরিফুল হক ইমন (৩০)। তাদেরকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে ভুবন চন্দ্র শীলকে মুমূর্ষু অবস্থায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়। আর মামুন চিকিৎসা নিয়ে ঢাকা মেডিকেল থেকে চলে আসেন।
ভুবন চন্দ্র শীলের স্ত্রী রত্না মজুমদার যুগান্তরকে জানান, তার স্বামীকে বেসরকারি পপুলার হাসপাতালের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ৭২ ঘণ্টার আগে কিছু বুঝা যাবে না।
সন্ত্রাসী মামুন তার ওপর এই হামলার নেপথ্যে তারই এক সময়ের ঘনিষ্ট বন্ধু কারাগারে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনকেই দায়ী করেছেন। তিনি ঘটনার পর পুলিশকে জানিয়েছেন, গত ১২ সেপ্টেম্বর আদালতে হাজিরা দিতে গেলে তার সঙ্গে দেখা হয় ইমনের। এ সময় ইমন তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়।
এদিকে গত মঙ্গলবার গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের ইমন-মামুনের দ্বন্দ্বের জেরেই এই হামলা ও গুলির ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে জানান। আহত শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুন এবং কারাগারে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন দুজনই চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার আসামি।