জেপি নেতা সালাম বাহাদুর খুনে মিলল চাঞ্চল্যকর তথ্য
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২৩, ০৪:৫১ পিএম
জেপি নেতা সালাম বাহাদুর খুনের মামলায় এক তরুণী ও তার মা গ্রেফতার। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান সড়কে গত শনিবার রাত ১২টার দিকে জাতীয় পার্টির (জেপি) কেন্দ্রীয় অর্থবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম বাহাদুরের লাশ উদ্ধার করা হয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে লাল রঙের একটি প্রাইভেটকার থেকে তার লাশটি সড়কে ফেলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুলিশ গাড়িটি শনাক্ত করেছে।
ঘটনার তিন দিন পর জানা গেল চাঞ্চল্যকর তথ্য। এক তরুণীর সঙ্গে সম্পর্কের পর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ছড়ানোর ভয় দেখানো এবং তার বাড়িতে গিয়ে ‘শারীরিক সম্পর্কের’ চেষ্টা করায় স্থানীয়দের বেধড়ক মারধরে সালাম বাহাদুরের মৃত্যু হয়েছে।
সেই তরুণী ও তার মাকে গ্রেফতারের পর ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরতে আজ (বুধবার) সংবাদ সম্মেলনে আসেন ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার একেএম আজিমুল হক।
সংবাদ সম্মেলনে আজিমুল হক বলেন, ‘শনিবার মানিকগঞ্জে ওই তরুণীর বাসায় গিয়ে জবরদস্তির সময় চিৎকারে স্থানীয়রা এসে সালামকে মারধর করে। যদিও সালামের সেখানে যাওয়ার বিষয়টি স্থানীয়রা সবাই জানতেন। তারা (মা-মেয়ে) চিৎকার করলে যেন স্থানীয়রা ছুটে আসে, এই বিষয়গুলো ছিল অনেকটা পরিকল্পিত।’
তিনি বলেন, ‘মেয়েটি ধানমণ্ডির একটি সুপারশপের বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করতেন। পাশেই সালাম বাহাদুরের বাসা। পাঁচ-ছয় বছর আগে সেখানে মেয়েটির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেসময় মেয়েটিকে সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে সম্পর্ক গড়ে তোলেন সালাম বাহাদুর। কিছুদিন পর মেয়েটি বুঝতে পারে, সালাম তার সঙ্গে প্রতারণা করছেন। পারিবারিকভাবে সম্পর্কের বিষয়টি জানাজানি হলে মেয়েটি এই সম্পর্ক থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি চলে যান। কিন্তু সালাম তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও মেয়েটির পরিচিতজনদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তাকে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকেন, সম্পর্ক রক্ষায় চাপ দেন। মেয়েটির পরিবার এ নিয়ে বিব্রত হয়ে পড়ে এবং পরিত্রাণের উপায় খুঁজতে থাকে।’
পুলিশ কর্মকর্তা আজিমুল বলেন, ‘ঘটনার দিন (শনিবার) মেয়েটির সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয় সালামের। একপর্যায়ে সন্ধ্যার দিকে তাদের বাড়িতে গিয়ে হাজির হন সালাম।মেয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, তার ঘরে ঢুকে সালাম তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করার চেষ্টা করেন, তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। সে সময় মা-মেয়ের চেঁচামেচি ও চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে সালামকে বেধড়ক মারধর করে দীর্ঘ সময় আটকে রাখে। তাতেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে সালামকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যুর বিষয়টি বুঝতে পেরে স্থানীয় কয়েকজন মাঝপথেই সটকে পড়ে। তখন তার লাশ হাসপাতালের সামনে ফেলে পালিয়ে যায় অন্যরা।’
উপকমিশনার বলেন, ‘সালামের মানিকগঞ্জে আসার খবর ওই তরুণী ও তার মা স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে আগেই জানিয়ে রেখেছিলেন। ওই প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ঘটনাস্থলে এসে সালামকে দ্বিতীয় দফায় বেধড়ক মারপিট করেন। তারা মূলত আহত সালামকে আটকে রেখে অর্থনৈতিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছিলেন।’
হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত স্থানীয়দেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।