পান খাইয়ে সর্বস্ব লুট, অজ্ঞান পার্টির ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে চার্জশিট
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৩, ০৪:৪৭ পিএম
প্রতীকী ছবি
পান খাইয়ে অটোরিকশা চালকের সর্বস্ব লুট করার অভিযোগে এক নারীসহ অজ্ঞান পার্টির ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
মঙ্গলবার সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান যুগান্তরকে জানান, সোমবার জয়পুরহাটের আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করেন সিআইডির পরিদর্শক মাসুদ রানা।
যাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে, তারা হলেন- আবু হায়াত ওরফে সুরুজ ওরফে রেজাউল (৩৫), মোছা. পারুল বেগম (২১), গোলজার হোসেন ওরফে হায়দার (৪২), রাজু মিয়া (৪৪), শফিকুল ইসলাম করিম (৪৫) ও আ. জব্বার (৫০)।
মামলার তদন্ত চলাকালে এই ছয়জনকেই গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে পাঁচজন নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানান সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান।
চার্জশিট প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ভিকটিম কোবাদ আকন্দ (৪৮) ২০২০ সালের ৪ ডিসেম্বর প্রতিদিনের মতো জীবিকার তাগিদে সকাল পৌনে ১০টার দিকে নিজের ৩ চাকা বিশিষ্ট ডায়োডা অটোরিকশা নিয়ে ভাড়ায় চালানোর উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন। তিনি যখন জয়পুরহাট জেলার কালাই থানাধীন জিন্দাপুর ইউনিয়নের সামনে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন, তখন দুইজন ব্যক্তি ইউনিয়ন পরিষদের ভেতর থেকে বের হয়ে আসেন। তারা নিজেদের সমাজসেবা অফিসের কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিয়ে কোবাদের অটোরিকশাটি ভাড়া করেন। কোবাদকে তারা বলেন, জিন্দাপুর ইউনিয়নের জন্য সরকারি ত্রাণের কম্বল ও শীতবস্ত্র নেওয়ার উদ্দেশ্যে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় যেতে হবে। গলায় ঝুলানো আইডি কার্ড দেখে কোবাদ আকন্দ সহজেই তাদের সরকারি লোক বলে বিশ্বাস করেন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এক হাজার টাকা ভাড়ায় রাজি হয়ে তাদের নিয়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা অভিমুখে রওনা করেন কোবাদ। পথিমধ্যে ওই দুই যাত্রী কোবাদ আকন্দকে কালাই উপজেলা সংলগ্ন রাস্তার পাশে একটি হোটেলে নাস্তা করান। পরে তাকে পান খাওয়ার অনুরোধ করে ১ খিলি পান দেন। কোবাদ সরল বিশ্বাসে তা খাওয়ার পর ফের যাত্রা শুরু করেন। দুপুর ১২টার দিকে কোবাদ আকন্দ বুঝতে পারেন যে তার শরীর ক্রমশ নিস্তেজ হওয়াসহ বোধশক্তি লোপ পাচ্ছে। এ সময় কোবাদ যাত্রীদের জিজ্ঞাসা করেন, ‘আমাকে কী খাইয়েছেন?’ তখন বেশধারী যাত্রীরা তাকে গাড়ি থামাতে বলেন। কোবাদ গাড়ি থামালে তাদের আরও দুই সহযোগীকে মোবাইল ফোনে আসতে বলেন।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, কোবাদ আকন্দ অচেতন হওয়ার আগ মুহূর্তে সাহায্যের জন্য ফোন করার চেষ্টা করেন। এ সময় ওই যাত্রীরা তার ফোন কেড়ে নেন। হুমকি দিয়ে বলেন যে, ‘আজকে শুধু মাল হারালি, কিন্তু জীবনে বেঁচে গেলি। পরবর্তীতে বাড়াবাড়ি করলে জানে শেষ করে লাশ গুম করে ফেলব।’ এরপর কোবাদ আকন্দ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে যাত্রীবেশি অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা তার এক লাখ ৫৮ হাজার টাকা মূল্যের অটোরিকশা এবং সাড়ে সাত হাজার টাকা মূল্যের মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায়। এ বিষয়ে ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি জয়পুরহাটের কালাই থানায় একটি মামলা রেকর্ড হয়। পরে এর তদন্তভাব সিআইডির ওপর ন্যস্ত হয়।