‘বড় হামলার পরিকল্পনা ছিল হুজি নেতার, শিখেছেন রকেট লঞ্চার চালানো’

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:১৩ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত নয়টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে।
গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- ফখরুল ইসলাম (৫৮), সাইফুল ইসলাম (২৪), সুরুজ্জামান (৪৫), হাফেজ আবদুল্লাহ আল মামুন (২৩), দীন ইসলাম (২৫) ও মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন (৪৬)।
শনিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।
সিটিটিসি জানায়, ১৯৮৮ সালে দেশ থেকে পাকিস্তানে যান ফখরুল ইসলাম। সেখান থেকে তিনি আফগানিস্তানে গিয়ে একে-৪৭, এলএমজি ও রকেট লঞ্চার পরিচালনা করার প্রশিক্ষণ নেন। তখন আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আলকায়েদার নেতা ওসামা বিন লাদেন ও মোল্লা ওমরের সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ করেন।
সিটিটিসি আরও জানায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অপারেশন চলমান থাকায় এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের মুফতি হান্নানসহ একাধিক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি গ্রেফতার হওয়ায় হুজি নেতৃত্ব শূন্য হয়ে যায়। আমাদের ধারণা ছিল এই সংগঠনের কার্যক্রম নেই। সম্প্রতি সময়ে জানতে পারি, আফগানফেরত ফখরুল ইসলাম হুজির হাল ধরেছেন। সংগঠনটির জন্য সদস্য ও অর্থ সংগ্রহের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। বাংলাদেশের গুরুপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে বড় ধরনের জঙ্গি হামলা পরিচালনার বিষয়ে নিজেদের মধ্যে পরিকল্পনা করে আসছিলেন ফখরুল।
সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, ফখরুল ইসলাম ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত গাজীপুর জেলার টঙ্গী থানাধীন তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসায় দারোয়ানের চাকরি করতেন। পরে কাজের উদ্দেশে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানের করাচি শহরে যান তিনি। পাকিস্তানে থাকা অবস্থায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মুফতি জাকির হোসেনের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। ওই সময় মুফতি জাকির হোসেন করাচি শহরে ইসলামিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল এবং আলকায়েদার সামরিক কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন।
তিনি বলেন, মুফতি জাকির ফখরুল ইসলামকে জিহাদের দাওয়াত দিলে সে দাওয়াত গ্রহণ করেন। ফখরুল ইসলাম জিহাদি ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহণের জন্য মুফতি জাকিরের সঙ্গে একাধিকবার পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানের কান্দাহার শহরে দীর্ঘকালীন প্রশিক্ষণে যান।
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, আফগানিস্তানে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় হুজি নেতা ফখরুল আফগানিস্তানে ট্রেনিং করার পর আবার করাচিতে ফিরে আসেন। সেখান থেকে তিনি ১৯৯৫ সালে ইরানের রাজধানী তেহরান যান এবং প্রায় ৩ বছর সেখানে থাকার পর আবার করাচিতে ফিরে আসেন। তিনি পরে ইসলামাবাদ থেকে ভারত হয়ে ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে চলে আসেন।
সিটিটিসির এ কর্মকর্তা বলেন, হুজি সদস্যদের বান্দরবান পাহাড়ি এলাকায় প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করেছিলেন গ্রেফতাররা। ফখরুল ও তার ছেলে মো. সাইফুল ইসলাম অন্যান্য হুজি সদস্যদের নিয়ে একাধিকবার কক্সবাজার জেলায় অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যান। সেখানে রোহিঙ্গাদের মোটা অঙ্কের টাকা অনুদান দেন।
সিটিটিসি জানায়, গ্রেফতার ব্যক্তিরা টেলিগ্রাম গ্রুপের মাধ্যমে সক্রিয় থেকে উগ্রবাদী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। তাদের অন্যান্য সহযোগীরা পরস্পরের যোগসাজশে উগ্রবাদী ও আক্রমণাত্মক ভিডিও ও তথ্য শেয়ার এবং নিজেদের মধ্যে গোপন তথ্য আদান-প্রদান করে থাকেন। ওই গ্রুপে উগ্রবাদী ও আক্রমণাত্মক প্রশিক্ষণের বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি সচিত্র প্রশিক্ষণ ডকুমেন্টস (পিডিএফ, ভিডিও, অডিও) আদান-প্রদানও করতেন তারা।
এক প্রশ্নের জবাব সিটিটিসি প্রধান বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তারা একাধিকবার প্রবেশ করেছিলেন এবং অনেক ক্ষেত্রে সদস্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে সফলও হয়েছেন। এছাড়া রোহিঙ্গাদের জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করতে অর্থও খরচ করেছে হুজি।
নির্বাচন কেন্দ্রিক হুজির কোনো পরিকল্পনা ছিল কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, না, তারা নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছিল। মগবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় জঙ্গিসংশ্লিষ্টতা আছে কিনা প্রশ্ন করা হলে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, জঙ্গিসংশ্লিষ্টতা আমরা পাইনি। কোনো টার্গেট ছিল না। জর্দার কোটা দিয়ে দেশীয় পদ্ধতিতে ককটেল তৈরি করছিলেন তারা।