Logo
Logo
×

ক্রিকেট

কোহলি-রোহিতকে ‘ট্যাপ অন দ্য সোল্ডার’ বলার সময় এসেছে

Icon

স্পোর্টস ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১১ পিএম

কোহলি-রোহিতকে ‘ট্যাপ অন দ্য সোল্ডার’ বলার সময় এসেছে

ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে লজ্জাজনক হার দেখল ভারত। আগের সিরিজে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করে ফুরফুরে থাকা টিম ইন্ডিয়া নিউজিল্যান্ডকে একই কায়দায় হারাতে গিয়ে নিজেরাই ধবলধোলাই হয়েছে। 

তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলিদের ভারত। সেই লজ্জাকর হার প্রসঙ্গে ভারতের জনপ্রিয় ক্রীড়া সাংবাদিক গৌতম ভট্টাচার্য নিজের অফিসিয়াল ফেসুবকে একটি বিশ্লেষণমূলক ভিডিও পোস্ট করেছেন। তা হুবহু তুলে ধরা হলো- 

এতক্ষণ টিভি চলছিল। সাউন্ড মিউট করে দিয়েছি। এজন্য নয় যে রেকডিংটা করছি বলে। আসলে টিভি দেখার ইচ্ছাই চলে গেছে। একটু পরে টিভির সুইচ অপ করে দেব। এরকম একটা ছবি রোববারের সকালে দেখতে হবে এবং সেই সকালজুড়ে দুপুরে গিয়েও সেই একই রকম থাকবে ভাবিনি। যদি এক কথায় বলি- ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বকালের সবচেয়ে লজ্জাজনক ব্যাপার। এর চেয়ে লজ্জার দিন ভারতীয় ক্রিকেটে কখনো আসেনি। 

কারণ ভারত নিয়মিত ঘরোয়া ক্রিকেট খেলছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছে ১৯৩২ সাল থেকে। গত ৯২ বছরে ভারত কখনো নিজেদের ঘরের মাঠে এভাবে চুনকাম (পরাজিত) হয়নি। তাও আবার এমন একটা দলের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ হলো- যারা কিন্তু বিশ্ব ক্রিকেটে সুপার পাওয়ার হিসেবে চিহ্নিত নয়, নিউজিল্যান্ড। এটা খুবই লজ্জাজনক একটা ব্যাপার; যে ভঙ্গিতে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা এদিন যেভাবে পরপর আউট হয়ে গেলেন।

ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট বললে- ঋষভ পন্থের আউট হওয়াটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। যেভাবে তিনি আউট হলেন। তাকে যেভাবে পল রাইফেল আউট ঘোষণা করলেন।

আমরা জানি ‘বেনিফিট অব ডাউট অলওয়েজ গোজ ইন ফেবার অব দ্য ব্যাটসম্যান’ এটা ক্রিকেটের অলিখিত একটা নিয়ম। চিরকাল এটা হয়ে আসছে। থার্ড আম্পায়ার পল রাইফেল যখন ৬৪ রানে থাকা ঋভষ পন্থকে দেখলেন; যখন তিনি ডিফেন্স করতে গেলেন, ব্যাট বলটাতে লেগেছে নাকি প্যাডে লেগেছে। এটা নিয়ে ঋষভ পন্থ সন্দেহে ছিলেন। এখানে কোনো হসপট নেই, কাজেই কনক্লুসিভ এবিডেন্স নেই যে ব্যাটে লেগেছেই! ফিল্ড আম্পায়ার কিন্তু অউট দেননি। যেখানে সূক্ষ্মাতিক সূক্ষ্মাতি টাস লেগেছে। সেখানে টিভি আম্পায়ার কিভাবে এত নিঃসন্দেহ হলেন জানি না। 

এর আগে জশ প্যাটেলের বলে ঋষভ পন্থ নিশ্চিত আউট ছিলেন, সেবার কিন্তু টম লাথাম রিভিউ নেননি। তিনি বুঝতেই পারেননি। ইজাজ প্যাটেল মনে হয় ওয়াংখেড়ের এই উইকেটটা নিজের বাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে সযত্নে রাখবেন। যেভাবে অনেক সময় প্রিয়জনের দেওয়া গিফটা মিউজিয়ামে রাখে। 

ভারতীয় মহারথিরা কী করছিলেন। রোহিত শর্মা এমন ভঙ্গিতে আজকেও ব্যাট করতে এলেন- মনে হয়েছে পিচে প্রচুর জু জু আছে। ইনিংসের শুরু থেকেই রিভার্স সুইং খেলা শুরু করলেন। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করা শুরু করলেন। তার ভঙ্গিটা এমন ছিল যে, এই উইকেট বেশি সময় টেকা যাবে না। যতটা পারা যায় রান করে যাই। এই ভঙ্গি যদি অধিনায়ক দেখান তাহলে বাকিরা কী ভাববে; ডেসিংরুম কী ভাববে। তৃতীয় দিনে উইকেট কী এতটা খারাপ ছিল? হ্যাঁ বল টার্ন করছিল।  উইকেট এতটা টার্ন করছিল যে প্রথম থেকেই মারমুখী খেলা খেলতে হবে।  

বিরাট কোহলি উইকেটে এলেন লিটলি কাঁপতে কাঁপতে। তিনি আউট হওয়ার পর অবিরাম মুকুল আর রবি শাস্ত্রীরা প্রত্যেকে বলতে শুরু করলেন, বলটা কতো ভালো ছিল, বিরাট কোহলির কোনো দোষ নেই (হাসি)। মহারথিদের কতদিন এভাকে আটকে রাখা সম্ভব! ক্রিকেট একটা অদ্ভুত খেলা, বিরাট কোহলিকে দেখে মনে হচ্ছিল এই মাঠ তাকে পঞ্চাশতম ওয়ানডেতে শতরান দিয়েছে, আবার এই মাঠেই তাকে একদম দরিদ্র করে দিয়েছে। 

ক্রিকেট সম্পর্কে বলা হয়; কোটিপতি ব্যাটসম্যানও কখনো বিশ্বের বিলাসবহুল গাড়ি লিমুজিনে চড়ে অফিসে যান, আবার কখনো সাইকেলে চড়ে অফিসে যান। বিরাট কোহলি মনে হয় সাইকেলে চড়ে ভ্রমণের সময় এসে গেছে। 

রোহিত শর্মার অধিনায়কত্বে এ লজ্জার মুকুটটা এলো। আমার মনে হয় তাকে আর অস্ট্রেলিয়া সফরে ভারতীয় অধিনায়ক হিসেবে রাখার কোনো মানে হয় না। টেস্ট ম্যাচে তিনি তার জায়গা হারিয়েছেন। রোহিত শর্মা যেই ধরনের মানসিকতার মানুষ, হয়তো নিজেই সরে যাবেন। 

বিরাট কোহলির ফিটের ওপর অস্ট্রেলিয়া সফরে যাওয়া নির্ভর করবে। বাট ক্লিয়ারলি টেস্ট ক্রিকেটে এই দুইজনকে দেখে মনে হচ্ছে- অনেক অনেক কীর্তি বোঝাটা তারা সামলাতে পারছেন না। সেই কীর্তি বোঝাটাও অভিয়াসলি একটা প্রেসার। আপনি যখন প্রতিভার দিকে হেঁটে যান তখন ওই কীর্তিটাও সঙ্গে করে নিয়েই যান! সেটা থেকে সরিয়ে মনকে ব্লান্ড করে বল দেখতে হয়। সবাই তো আর টেন্ডুলকার নন, সবাই সেটা করতে পারেন না। সবাই হয়তো দ্রাবিড়ও নন। তাই হয়তো কোথায়ও অসুবিধাটা হচ্ছে।

রোহিত শর্মাকে দেখে ক্লিয়ারলি মনে হচ্ছে, টেস্ট ক্রিকেট যে ভঙ্গিততে খেলা উচিত সেই ভঙ্গিতে খেলতে তিনি পছন্দ করছেন না। আর যদি পছন্দ নাই করেন, তাহলে টেস্ট ক্রিকেট তাকে বলবে বাপি তুমি বাড়ি যাও। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে এরপর ভারত যেতে পারবে কিনা আমি নিশ্চিত নই। এতদিন মনে হয়েছিল যেতে পারবে। তবে অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়ে অবিশ্বাস্য কিছু ঘটাতে হবে।

এই বিরাট কোহলির জন্য অস্ট্রেলিয়ায় হয়তো এটা সুবিধা হবে। বল ব্যাটে আসবে। মনে রাখতে হবে অস্ট্রেলিয়ানরাও কিন্তু এই সিরিজটা দেখেছে। তারাও তো উইকেট টার্নার করবে, তারা কী বল ব্যাটে আসবে এমন উইকেট রোহিত বা বিরাটকে দেবে। তারাও তো বুঝে গেছে যে অধিনায়ক নিজেই বিপন্ন, তারা চিরকাল এই থিওরিতে অপরেট করেছে যে, অধিনায়ককে গোড়া থেকে ফেল, বাকিরা এমনিতেই পড়ে যাবে। 

ঋষভ পন্থ এই সিরিজে ভারতের জন্য একমাত্র ম্যাজিক। তাকে আইপিএলে দিল্লি ক্যাপ্টেন্সি হিসেবে অকেশনে নিল না। আমি জানি না যারা তাকে কেন অকেশনে নিল না তাদের নিয়ে আজ কী আলোচনা হচ্ছে। আমি ঋষভ পন্থের রান দেখেছি। সে সাড়ে চারশর কাছাকাছি রান করেছে। এমন নয় যে তিনি রান করেননি। তারপরও তাকে অকেশনে রিটেইন করা হলো না এটা অবিশ্বাস্য; কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটটা তিনি যে ভঙ্গিতে খেলছেন তা দেখার মতো এবং আজকেও যে ইনিংসটা খেলল তা অবিশ্বাস্য। ভারতীয় ক্রিকেটে মিডল অর্ডারে বীরেন্দ্রর শেহবাগ হিসেবে দেখা দিয়েছেন ঋষভ পন্থ।

বাকিদের সম্পর্কে যত কম বলা যায় ততই ভালো। শুভমান গিল আবার জাজমেন্ট দিতে গিয়ে বোল্ড। বারবার তিনি কেন এভাবে জাজমেন্ট দিচ্ছেন। তার মানে তার আন্দাজটা অফ স্টাম্পের দিকে ঠিকমতো হচ্ছে না। 

সরফরাজ খান তো  ফুল টস বলে লোপ্পা তুলে দিয়ে আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন। বাকিদেরও একই অবস্থা। ইন্ডিয়ান ক্রিকেট এত বাজে একটা সিরিজ কখনো খেলেনি। ভারতীয় কোচ গৌতম গম্ভীর কী ভাবছেন জানি না। তিনি এই সিরিজে ওয়াশিংটন সুন্দরকে এনে একটা ঠিক কাজ করেছেন; কিন্তু বাকিটা কম্পিলিট ভূমিকম্প!

অস্ট্রেলিয়া সিরিজে মনে হয় দল নতুন করে সাজাতে হবে। দরকার হলে মহারথিদের বলতে হবে দেখ- অস্ট্রেলিয়াতে একটা কথা আছে ‘ট্যাপ অন দ্য সোল্ডার’ অর্থাৎ পিঠে হাত দিয়ে বলা হয় তোমার সময় এসে গেছে। গৌতম গম্ভীর আপনাকে কিন্তু এখন সেই কাজটাই করতে হবে। নইলে আপনাকেও কেউ পিঠে হাত দিয়ে বলবে তোমারও সময় এসে গেছে।   

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম