জব্বারের বলীখেলায় আবারও চ্যাম্পিয়ন বাঘা শরীফ
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:০৯ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী আবদুল জব্বারের বলীখেলার ১১৬তম আসরে আবারও চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন কুমিল্লার বাঘা শরীফ।
শুক্রবার বিকালে নগরীর লালদীঘি মাঠে এ খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা খেলেন বাঘা শরীফ এবং তার প্রতিপক্ষ রাশেদ। দুজনই কুমিল্লার বাসিন্দা। পরে প্রধান রেফারি হাফিজুর রহমান ‘টেকনিক্যাল আউট’ ঘোষণা করেন রাশেদকে।
শরীফ কুমিল্লা জেলার হোমনা উপজেলার বাসিন্দা। তিনি স্থানীয়দের কাছে বাঘা শরীফ হিসেবে পরিচিত।
জানা গেছে, এবার ১১৬ জন বলীখেলায় অংশ নিতে রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন। এর মধ্যে বাছাই করে প্রথম রাউন্ডে ৮০ জন অংশ নেন। পরে প্রথম রাউন্ডের চারজন ও আগের বছরের শীর্ষ চারজন নিয়ে চ্যালেঞ্জ রাউন্ড অনুষ্ঠিত হয়। চ্যালেঞ্জ রাউন্ডে চট্টগ্রামের কাঞ্চনকে হারিয়ে কুমিল্লার কামাল, নিজ জেলা কুমিল্লার দিপুকে হারিয়ে শরীফ, সীতাকুণ্ডের রাসেলকে হারিয়ে ১১৪তম আসরের সেরা কুমিল্লার শাহজালাল ও রাঙামাটির রুবেলকে হারিয়ে কুমিল্লার রাশেদ সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেন।
সরেজমিন দেখা যায়, সেমিফাইনালে অংশ নেন বাঘা শরীফ, কামাল, শাহ জালাল ও রাশেদ। তারা চারজনই কুমিল্লার বাসিন্দা ছিলেন। এর মধ্যে বাঘা শরীফ ও কামালের মধ্যে প্রথম রাউন্ডের খেলা হয়। এতে কামালকে হারিয়ে বাঘা শরীফ বিজয়ী হন। দ্বিতীয় রাউন্ডে শাহ জালাল ও রাশেদের মধ্যে অনুষ্ঠিত খেলায় শাহ জালাল পরাজিত হন। পরে দুই রাউন্ডের পরাজিত দুইজনের মধ্যে খেলা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে কামাল বিজয়ী হন। নিয়ম অনুযায়ী তৃতীয় রাউন্ডের বিজয়ীকে তৃতীয় এবং পরাজিতকে চতুর্থ স্থান অধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
সে অনুযায়ী কামালকে তৃতীয় এবং ১১৪তম আসরের চ্যাম্পিয়ন শাহ জালাল বলীকে চতুর্থস্থান অধিকারী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
সর্বশেষ বাঘা শরীফ এবং রাশেদের মধ্যে ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। বিকাল সোয়া ৫টায় শুরু হওয়া খেলা প্রায় ৬টা পর্যন্ত চলে। এ সময় কেউ কাউকে হারাতে পারছিলেন না। পরে উভয় খেলোয়াড়কে যে মাটিতে ফেলবে তাকেই বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করার নির্দেশনা দেন রেফারি। এ কথা শুনেই বাঘা শরীফ রাশেদকে মাটিতে ফেলে দিতে চাইলে তিনি রিংয়ের রশি ধরে ফেলেন। পরে রেফারি রাশেদকে টেকনিক্যাল আউট ঘোষণা করেন।
এদিকে বলীখেলাকে ঘিরে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে তিন দিনের বৈশাখী মেলা। এ বৈশাখী মেলার জন্য অপেক্ষায় থাকেন চট্টগ্রাম নগরীসহ আশপাশের উপজেলার বাসিন্দারা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দোকানিরা নানা ধরনের মালামাল নিয়ে আসেন মেলায়।
এসব জিনিসপত্রে মধ্যে রয়েছে- মাটির তৈরি তৈজসপত্র, খেলনা, ফুলদানি, পুতুল, বেত-কাঠ ও বাঁশের তৈরি আসবাব, হাতপাখা, মাছ ধরার পলো, বেতের তৈরি ডালা, কুলো, ফলদ ও বনজ গাছের চারা, ফুল গাছের চারা, মুড়ি মুড়কি, পাটি, মাদুর, চুড়ি, প্রসাধনী সামগ্রী, দা-বটি, ছুরিসহ প্রায় সব পণ্যই পাওয়া যায় এ মেলায়।
১৯০৯ সালে নগরীর বদরপাতি এলাকার আবদুল জব্বার সওদাগর এই বলীখেলার প্রবর্তন করেছিলেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে তরুণ ও যুবকদের উদ্বুদ্ধ করতে কুস্তি বা বলীখেলা শুরু করেছিলেন লালদীঘি মাঠে। সেই থেকে প্রতিবছর বৈশাখ মাসের ১২ তারিখ বলীখেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনার কারণে দুবছর এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দুই বছর বলীখেলা হয়নি। এছাড়া ধারাবাহিকভাবে এ বলীখেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
