
প্রিন্ট: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৫১ এএম
৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা কমিয়ে ৫৮ দিন, খুশি জেলেরা

চরফ্যাশন প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৫২ পিএম

আরও পড়ুন
বঙ্গোপসাগরের উত্তল ঢেউয়ের সঙ্গে লড়াই, প্রকৃতির ভয়াল দুর্যোগ, কখনো দস্যুদের হামলা, আবার কখনো দাদনের দায়ে আটকা চির দারিদ্র্যের সঙ্গে জিম্মি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার জেলেরা।
সব সমস্যা মোকাবিলার পর তিন বেলা খেয়ে বেঁচে থাকার প্রয়োজনেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারে যান তারা। এছাড়া বছরের প্রায় সারাটা মৌসুম সরকারি বিধি-নিষেধসহ জেলেদের বহুমুখী প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়।
উপকূলজুড়ে ইলিশের মৌসুম শুরু হয়েছে। এরই মাঝে ১৪ এপিল মধ্যরাত থেকে শুরু হয়েছে মাছ ধরায় ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা, বলবৎ থাকবে ১১ জুন পর্যন্ত।
আগে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় এ নিষেধাজ্ঞা শুরু হতো ২০ মে থেকে, চলতো ২৩ জুলাই পর্যন্ত।
রোববার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা পুনর্বিন্যাস করেছে সরকার।
এতে ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রায় একই সময়সীমা কমিয়ে ৫৮ দিন নিষেধাজ্ঞার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার সময় সাত দিন কমানোর ফলে মৎস্য গবেষক, জেলে ও ব্যবসায়ীরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
চরফ্যাশন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু জানান, মাছের বংশবিস্তার, বেড়ে ওঠা ও টেকসই আহরণের জন্য বঙ্গোপসাগরে ভারত ও বাংলাদেশ সরকার বছরের নির্দিষ্ট একটি সময়ে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেয়।
প্রতি বছর বাংলাদেশের জলসীমায় এই নিষেধাজ্ঞা থাকে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন। আর ভারতের জলসীমায় তা থাকে ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন ৬১ দিন।
উপজেলা মৎস্য দলের সভাপতি সোহাগ শিকদার জানান, বেশি দিন বাংলাদেশের নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকার মধ্যে প্রায় ৩৯ দিন ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় চরফ্যাশনের উপকূলীয় বঙ্গোপসাগর এলাকাসহ সুন্দরবন, কুয়াকাটার উপকূলে প্রবেশ করে মাছ ধরে নিয়ে যেতেন। এবার নিষেধাজ্ঞা একই সময়ে হওয়ায় এমনটা হবে না।
মেরিন ফিশারিজ অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, ২০১৫ সাল থেকে প্রতি বছর ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। শুরুতে শুধু ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলারগুলো এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকলেও ২০১৯ সাল থেকে সব ধরনের নৌযানকে এর আওতায় আনা হয়। ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই নিষেধাজ্ঞার এ সময়ে উপকূলের কয়েক লাখ জেলে দুর্বিষহ অবস্থার মুখোমুখি হন।
চরফ্যাশনের দক্ষিণ উপকূলের জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মা ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা, ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা ধরায় ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা, মার্চ-এপ্রিলের দুই মাসের অভয়ারণ্যের নিষেধাজ্ঞা এবং সাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা সব মিলিয়ে বছরে ১৪৭ দিনের নিষেধাজ্ঞা পালন করতে হতো তাদের; কিন্তু এখন তা আট দিন কমে যাওয়ায় ১৩৯ দিন নিষেধাজ্ঞা থাকবে।
চরফ্যাশন সামরাজ মাছঘাটের সভাপতি আজ্জি পাটোয়ারী বলেন, সরকারের নতুন সিদ্ধান্তে আমরা খুশি। এখন আমরা এ নিষেধাজ্ঞার যথাযথ বাস্তবায়ন চাই।
চরফ্যাশন উপজেলার বঙ্গোপসাগর তীরের ঢালচর এলাকার রহিম মাঝি ও রাসেদ মাঝি কয়েক বছর ধরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে নিজেদের দুর্দশার কথা তুলে ধরেন।
রহিম মাঝি বলেন, পেটে পাথর বেঁধে আমরা মাছ ধরায় বিরত থাকি। আর আমাদের পাশের দেশের জেলেরা আমাদের সীমানায় ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যায়। এতে না হয় জেলেদের লাভ, না বাড়ে মাছের উৎপাদন। আমরা কষ্ট করতে প্রস্তুত আছি, যদি তাতে দেশের ভালো হয়। দুই দেশে মাছ ধরা বন্ধের একই সময় চাই আমরা।
জেলেদের এ দাবি অনুযায়ী এ বছর ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার সময় পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে।
সরকারের নতুন সিদ্ধান্তে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে চরফ্যাশন উপজেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি শাহিন মালতিয়া বলেন, আমরা শুরু থেকেই এ নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনার দাবি করে আসছিলাম। কারণ এতে সাগর-নদী মাছশূন্য হয়ে পড়েছিল। জেলেরা খুব কষ্টে আছেন। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যও ধ্বংস হওয়ার অবস্থায় পৌঁছেছিল। দীর্ঘদিন পর হলেও এ সরকার এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আমরা খুব খুশি।
এদিকে নিষেধাজ্ঞাকে কেন্দ্র করে সাগর থেকে উপকূলে ফিরতে শুরু করেছে মাছধরা ট্রলারগুলো।
চরফ্যাশন সামরাজ মাছঘাটের সাধারণ সম্পাদক রহমান দালাল বলেন, নিবন্ধিত সমুদ্রগামী ৭৮৫টি ট্রলার রয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ ট্রলার ফিরে আসতে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে পটুয়াখালীর মহিপুর, আলীপুরেও অনেক ট্রলার ঘাটে ফিরে গেছে।