
প্রিন্ট: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:১৪ এএম
ওএমএসের চাল বিক্রিতে অনিয়মের অভিযোগ

কুমিল্লা উত্তর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২০ পিএম

আরও পড়ুন
কুমিল্লার হোমনায় সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ন্যায্য মূল্যে ওএমএসের চাল বিক্রিতে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীদের দাবি, মেপে না দিয়ে বালতিতে করে চাল দিচ্ছেন ডিলার মো. মোশারফ হোসেন। এতে কম চাল পাচ্ছেন তারা। তবে বিষয়টি মানতে নারাজ ডিলার। তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে একটা গ্রুপ আছে। সেই লোকেরা এসব মিথ্যা বলছে।
বৃহস্পতিবার উপজেলার জয়পুর ইউনিয়নে গেলে ন্যায্য মূল্যের চাল পেয়েছেন
এমন বেশ কয়েকজন চাল বিতরণে অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার
কার্যালয়ে যান ভুক্তভোগীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জয়পুর ইউনিয়নের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ডধারী
৩৮৫ জন। এসব কার্ডধারীরা ১৫ টাকা কেজি দরের ৩০ কেজি করে চাল চান। ওএমএসের চাল বিতরণ
কার্যক্রমের দ্বিতীয় দিনে ইউনিয়নের আব্দুল্লাপুর-খন্দকারচর, জয়পুর ও মির্জানগর চাল
বিক্রি করেন ডিলার মোশারফ। সরকার নির্ধারিত সিলমোহরযুক্ত বস্তা ব্যতীত বালতি দিয়ে তিন
বালতি করে সুবিধাভোগীদের চাল বিতরণ করেন ডিলার। চাল নেওয়ার পরে বিষয়টি কার্ডধারীদের
সন্দেহ হলে পাশের একটি দোকানের ওজন করে তারা মাপে গরমিল দেখতে পান।
জয়পুর গ্রামের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শাহিন। ওএমএসের কার্ডধারী শাহিন
বলেন, ‘আমাদের ৩০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা। বালতি দিয়ে মেপে দেওয়ার পরই আমার সন্দেহ
হয়। এর জেরে মেপে দেখি আমার বস্তায় ২৪ কেজি চাল। এরপর বিষয়টি মেম্বারকে জানালে তিনি
ইউএনও, খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ জানাতে বলেন।’
একই গ্রামের বাসিন্দা শাহিনা আক্তার বলেন, ‘গরীব মানুষ হওয়ায় আমরা কার্ড
করছি। আজকে যখন চাল নিয়েছি তখনই সন্দেহ হয়। মেপে দেখি আমার বস্তায় ২৩ কেজি চাল আছে।
কিন্তু দেওয়ার কথা ৩০ কেজি। এক থেকে দুই কেজি হলে মানতাম। কিন্তু সাত কেজি কম। আমরা
গরীব মানুষ। মোশারফ ভাই কেন এ কাজগুলো করতেছেন জানি না। যদি তার কাছে অভিযোগ দিতাম
তাহলে সে হয়ত মারধর করতেন।’
অভিযোগের বিষয়ে ডিলার মোশারফ বলেন, ‘আমি পরিমাণে কম দেই নাই। আমার বিরুদ্ধে
একটা গ্রুপ আছে, সেই লোকেরা এগুলো করতেছেন। যাদের চাল দিয়েছি তারা বস্তা থেকে চাল বাড়িতে
রেখে আমার নামে বদনাম করার জন্য অভিযোগ করছেন।’
সরকারের সিলমোহর সম্বলিত ৩০ কেজি বস্তার পরিবর্তে খোলা বস্তায় কেন চাল
দেওয়া হলো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গোডাউন থেকে ৫০ কেজি চালের বস্তা করে দিয়েছে।
তাই খুলে ওজন করে দিতে হয়েছে। আমার আরও ২০০ জন লোক আছেন, তারা তো সঠিকভাবে পেয়েছেন।
সরকারি বস্তায়ও চাল কম হয় মাঝে মাঝে।’
এ বিষয়ে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওয়াসিম বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে
আমি অবগত না।’ অফিসে ভুক্তভোগীরা আসছিল তখন তিনি বলেন, ‘আধা ঘণ্টা আগে আমার অফিসের
একজন কর্মকর্তা আমাকে বিষয়টি জানিয়েছে।’ ইউউএনওর সামনে তো ভুক্তভোগীরা আপনাকে জানিয়েছে
আপনি বললেন অবগত নন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি এখন জেনেছি। বিষয়টি তদন্ত করে
ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ ব্যাপারে জয়পুর ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা ট্যাগ অফিসার হোমনা উপজেলা
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আমানউল্লাহর কাছে জানতে ফোন দেওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমি
কি করতাম কন?’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ক্ষেমালিকা চাকমাকে বলেন, ‘অভিযোগকারীরা
এসেছিল। চাল কম দেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। তবে তারা চালটা নিয়ে অন্য জায়গায় গিয়ে মেপেছে
এরপর হোমনাতে এসেছে। ডিলার ১০ কেজির বালতি দিয়ে মেপে দিয়েছেন। ওখানে মেশিন ছিল সেটা দিয়ে দিলে হয়তো এমন
হতো না। আমরা বিষয়টি আমলে নিয়েছি তদন্ত সাপেক্ষে
পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’