
প্রিন্ট: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৫১ পিএম
চট্টগ্রামে জোড়া খুন, শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ শ্যোন অ্যারেস্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩১ পিএম

আরও পড়ুন
চট্টগ্রামে আড়াই কিলোমিটার পথ ধাওয়া করে প্রাইভেটকারে ব্রাশফায়ারে দুইজনকে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় কারাবন্দি শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে। পৃথক একটি হত্যা মামলায় তাকে আনা হয়েছে পাঁচ দিনের রিমান্ডে।
রোববার ছোট সাজ্জাদকে চট্টগ্রাম আদালতে তোলার সময় ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। জোড়া খুনের মামলায় গ্রেফতার সাজ্জাদের দুই সহযোগী বেলাল ও মানিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার দিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার ও জড়িত অন্য সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যেই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে সিএমপি সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে জোড়া খুনে যে অস্ত্রটি ব্যবহৃত হয়েছিল সেটি নাইন এমএম পিস্তল। সেই পিস্তল থানা থেকে লুট হয়েছিল বলেই প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এ অস্ত্রটি চালিয়েছিল হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণকারী সন্ত্রাসী বেলাল। বেলালসহ দুই সন্ত্রাসীকে ঘটনার পরপরই গ্রেফতার করা হলেও লুণ্ঠিত অস্ত্রটি এখনো উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। গ্রেফতার করতে পারেনি জড়িত অন্য সন্ত্রাসীদেরও।
গত ৩০ মার্চ গভীর রাতে প্রায় আড়াই কিলোমিটার রাস্তা ধাওয়া করে প্রাইভেটকারে ব্রাশফায়ার করলে আবদুল্লাহ ও মানিক নামে দুইজন নিহত হন। এরা আরেক সন্ত্রাসী সারওয়ার হোসেন বাবলার অনুসারী ছিলেন। এ ঘটনায় আহত হন রবিন ও হৃদয় নামে আরও দুইজন। তারা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদকে ধরিয়ে দেওয়ার প্রতিশোধ নিতেই ছোট সাজ্জাদের অনুসারীরা পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে। মূলত তারা সারওয়ার হোসেন বাবলাকে হত্যার টার্গেট করলেও ওই গাড়িতে থাকা অন্য দুই অনুসারী মারা যান। বেঁচে যান সরওয়ার হোসেন বাবলা।
চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের ঘটনায় গত মঙ্গলবার দুপুরে নগরের বাকলিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন নিহত মোহাম্মদ মানিকের মা ফিরোজা বেগম। মামলায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ ও তার স্ত্রী তামান্না শারমীনসহ সাতজনকে আসামি করা হয়। সাজ্জাদ ও তার স্ত্রীকে করা হয় হুকুমের আসামি।
জোড়া খুনের মামলার এজাহারে বলা হয়- দুই ‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ ও সারোয়ার হোসেনের বিরোধের জের ধরে জোড়া খুনের ঘটনাটি ঘটেছে। শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেওয়ার নেপথ্যে সরওয়ার হোসেন বাবলার নেপথ্য ইন্ধন বা ভূমিকা ছিল- এমন ধারণা থেকেই ছোট সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্না শারমিনসহ তাদের অনুসারীরা জোড়া খুনের ঘটনা ঘটায় বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ আছে।
এ মামলায় অন্য আসামিরা হলেন- মোহাম্মদ হাছান, মোবারক হোসেন ইমন, খোরশেদ, রায়হান ও বোরহান। তবে মামলায় বেলাল ও মানিকের নাম ছিল না। সিসিটিভি ফুটেজে তাদের সরাসরি কিলিং মিশনে অংশ নিতে দেখা যায়।
বেলাল ও মানিক চার দিনের রিমান্ডে:
রোববার ১২টার দিকে জোড়া খুনের অন্যতম দুই আসামিকে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সরকার হাসান শাহরিয়ারের আদালতে তোলা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাকলিয়া থানা পরিদর্শক (তদন্ত) মোজাম্মেল হক ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। দুপুর পৌনে ১টার দিকে রিমান্ড শুনানি শুরু হয়। এ সময় লকআপে থাকা আসামি বেলাল ও মানিককে বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। শুনানি শুরুর পর আদালত তাদের নাম জিজ্ঞাসা করেন। তারা নিজেদের নাম বলেন। এরপর আদালতে তাদের নথি পর্যালোচনা করেন।
পাশাপাশি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ রিমান্ডের যৌক্তিকতা তুলে রিমান্ড আবেদনে উল্লেখ করেছেন- মামলার মূল রহস্য উদঘাটন, অপরাধ প্রক্রিয়া উদঘাটন, গ্রেফতারকৃত আসামিদ্বয়কে সাথে নিয়ে মামলার ঘটনায় জড়িত পলাতক আসামিদের অবস্থান নির্ণয়সহ গ্রেফতার, মামলার ঘটনায় জড়িত অপরাপর আসামিদের নাম-ঠিকানা উদঘাটন ও গ্রেফতার, ঘটনায় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র ও মোটরসাইকেল উদ্ধার ও ঘটনার মূলহোতাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা। পরে আদালত শুনানি শেষে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আসামিদের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
তদন্তকারী কর্মকর্তা বাকলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোজাম্মেল হক যুগান্তরকে বলেন, দুই আসামির চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করা হবে।
হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র ও গুলি থানা থেকে লুট করা কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে আমরা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে বিষয়টি নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হবে।
তাহসিন হত্যা মামলায় ৫ দিনের রিমান্ডে শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ:
নগরীর চান্দগাঁও থানার তাহসিন হত্যা মামলায় পুনরায় চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে প্রকাশ ছোট সাজ্জাদের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রোববার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (ষষ্ঠ) মো. আলাউদ্দিনের আদালত এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
সিএমপির এডিসি (প্রসিকিউশন) মো. মফিজ উদ্দীন বলেন, তাহসিন হত্যা মামলায় পুনরায় সাজ্জাদ হোসেন প্রকাশ ছোট সাজ্জাদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত শুনানি শেষে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
২০২৪ সালের ২১ অক্টোবর চান্দগাঁও থানার অদুরপাড়া এলাকায় দোকানে বসে চা পানের সময় তাহসিন নামে এক যুবককে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে কালো রংয়ের একটি গাড়িতে করে আসা লোকজন। ওই ঘটনায় চান্দগাঁও থানায় তাহসিনের বাবার করা মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছিল পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদকে।