
প্রিন্ট: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৩০ পিএম
সততার অনন্য দৃষ্টান্ত রাখলেন অটোরিকশা চালক

বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৫৬ পিএম

ছবি:সংগৃহীত
আরও পড়ুন
বগুড়ায় এক ব্যবসায়ীর ফেলে যাওয়া ২৫ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের ১৮ ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ ১৫ হাজার টাকা ফিরিয়ে দিয়ে সততার এক অনন্য দৃষ্টান্ত রাখলেন সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক ও কলেজছাত্র খায়রুল ইসলাম খোকন (২৫)।
সিএনজি অটোরিকশা চালিয়ে নিজের লেখাপড়া ও সংসারের খরচ চালান তিনি। জানান, গত ২৯ মার্চ ইফতারের আগে বনানী এলাকায় এক যাত্রী নেমে যাওয়ার পর তিনি পেছনের সিটে কালো রঙের ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখেন। ব্যাগ খুলে দেখেন ভেতরে অনেক স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা। এরপর থেকে তিনি বিভিন্ন স্থানে ওই যাত্রীর খোঁজ করতে থাকেন। সন্ধান না পাওয়ায় বিষয়টি পরিচিত ট্রাফিক সার্জেন্ট আলমগীর হোসেনকে অবহিত করেন। তিনি ছুটি থেকে ফিরে এসে এ ব্যাপারে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
খোকন বলেন, বাড়িতে ফিরে মাকে ঘটনাটি বলি। শুনে মা তাকে দ্রুত ব্যাগটি মালিককে ফিরিয়ে দিতে নির্দেশ দেন।
খোকন বলেন, ওই ব্যাগে কত টাকা ও গহনা ছিল সেটা বড় কথা নয়, অন্যের আমানত ফিরিয়ে দিতে পেরেছেন এটাই তার কাছে গৌরবের।
শুক্রবার রাতে সদর থানায় তার উপস্থিতিতে পুলিশ ওই মালিকের কাছে সবটাই ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি।
শাজাহানপুর থানার এসআই আবদুল কুদ্দুস জানান, এ কারণে তার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ৭ এপ্রিল পুলিশ সুপার তাকে এই সততার পুরস্কার দেবেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, পাবনার ফরিদপুর উপজেলার উত্তর গোপালনগর এলাকার শফিউর রহমানের ছেলে মোহাম্মদ শাহিন জুয়েলারি ব্যবসায়ী। তিনি ঈদের দু’দিন আগে গত ২৯ মার্চ বিকালে কেনাকাটা করার জন্য বগুড়া শহরে আসেন। তিনি শহরের নিউমার্কেট থেকে ২৫ লক্ষাধিক টাকা মূল্যে ১৮ ভরি বিভিন্ন ডিজাইনের স্বর্ণালংকার কিনে একটি কালো ব্যাগে তোলেন। এছাড়া ঈদের কিছু কেনাকাটা করেন। এরপর তিনি বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য শহরের সাতমাথায় এসে বনানীগামী সিএনজি অটোরিকশায় ওঠেন। এ সময় তার হাতে তিনটি ব্যাগ ছিল। বিকাল ৫টা ৫৮ মিনিটের দিকে বনানী পৌঁছানোর পর পাবনাগামী নবীনবরণ বাস দেখতে পান। তিনি দ্রুত অটোরিকশা থেকে নেমে দুটি ব্যাগ নিয়ে বাসে ওঠেন। বাস ছাড়ার পর টের পান ১৮ ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ ১৫ হাজার টাকা থাকা ব্যাগটি সিএনজি অটোরিকশায় রয়ে গেছে। এরপর তিনি বাস থেকে নেমে অটোরিকশা ও এর চালককে খোঁজাখুঁজি করতে শুরু করেন। একপর্যায়ে সদর থানায় গেলে তাকে ঘটনাস্থল শাজাহানপুর থানায় জিডি করতে পরামর্শ দেওয়া হয়। পরে তিনি শাজাহানপুর থানায় জিডি করেন। গহনা ও টাকা হারিয়ে ব্যবসায়ী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।
শাজাহানপুর থানার এসআই আবদুল কুদ্দুস জানান, ডিজি হওয়ার পর তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে তিনি অটোরিকশা ও এর চালককে শনাক্ত করতে সোর্স নিয়োগ এবং বিভিন্ন এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেন। এক পর্যায়ে শহরের কানুচগাড়ি এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে অটোরিকশাটি শনাক্ত করলেও শুধু চালকের নীল গেঞ্জি দেখতে পাওয়া যায়। এরপর ওই ছবি অন্য অটোরিকশা চালকদের দেখালে তারা বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার বেতগাড়ি হাজিপাড়ার রঞ্জু মিয়ার ছেলে ও বগুড়া সরকারি শাহ্ সুলতান কলেজের অনার্স (ব্যবস্থাপনা) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র খায়রুল ইসলাম খোকনকে শনাক্ত করেন।
এসআই আবদুল কুদ্দুস জানান, অটোরিকশায় ব্যাগ পাওয়ার পর চালক ও কলেজছাত্র খায়রুল ইসলাম খোকন শহরের সাতমাথা, বনানীসহ বিভিন্ন স্থানে ওই ব্যবসায়ীর খোঁজ করেন। ঘটনাটি প্রকাশ করলে যে কেউ এত মূল্যবান জিনিস নিতে পারে। তাই তিনি তার পরিচিত বগুড়া ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট আলমগীর হোসেনকে অবহিত করেন। এ সময় ছুটিতে থাকা ওই সার্জেন্ট জানান, তিনি ফিরে এসে এ ব্যাগের মালিককে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন।
এদিকে অটোরিকশা চালককে শনাক্ত করার পর শুক্রবার রাত ১০টার দিকে ফোন দিলে খোকন জানান, এক যাত্রী স্বর্ণালংকার ও টাকাসহ একটি ব্যাগ তার অটোরিকশায় ফেলে গেছেন। তিনি ব্যাগের মালিককে কয়েকদিন ধরে খোঁজাখুঁজি করছেন। এরপর তিনি ট্রাফিক সার্জেন্ট আলমগীর হোসেনকে ফোন দিয়ে তাকে অবহিত করার পর ওই ব্যাগ নিয়ে সদর থানায় আসেন। রাত ১১টার দিকে পুলিশ কর্মকর্তারা পাবনার জুয়েলারি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শাহিনের হাতে স্বর্ণালংকার ও টাকার ব্যাগটি হস্তান্তর করেন।
ওই ব্যবসায়ী ও পুলিশ কর্মকর্তা অটোচালক খোকনকে ধন্যবাদ
জানান। এ সময় কৃতজ্ঞতাস্বরূপ আর্থিক সহযোগিতা করেন। আগামী ৭ এপ্রিল জেলা পুলিশের একটি
অনুষ্ঠানে পুলিশ সুপার তাকে সততার জন্য পুরস্কৃত করবেন।