
প্রিন্ট: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:১৯ এএম
‘টোকেনে’ মেঘনায় চলছে জাটকা শিকার

চাঁদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:২০ পিএম

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার এলাকায় ইলিশ মাছ ধরায় চলছে নিষেধাজ্ঞা। জাটকা মাছ রক্ষায় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে চলতি মাসের ২৮ তারিখ পর্যন্ত নদীর এ অংশে সব ধরণের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। মাছ ধরা বন্ধে নদীর সীমানায় বসানো হয়েছে উপজেলা প্রশাসন ও কোস্টগার্ডের ক্যাম্প। তবে এতেও থামছে না মা ইলিশ শিকার।
দিনের আলোয় নদীতে মাছ ধরার দৃশ্য তুলনামূলকভাবে কম দেখা গেলেও রাতের
আঁধারে সরকার ঘোষিত অভয়াশ্রম থাকছে মৎস্য শিকারি জেলেদের দখলে। ভোরের আলোয় মেঘনা নদীর
তীরে সারি সারি নৌকায় ভর্তি ভেজা জাল লক্ষ্য করা যায়।
অভিযোগ উঠেছে, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলছে মাছ শিকার। বিষয়টি শিকারও
করেছেন অনেক জেলে।
শনিবার সকালে নদীর পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, শতাধিক জেলে নৌকায় ভেজা জাল পরিষ্কার
করছেন। দূরে কিছু নৌকা তখনও মাছ ধরায় ব্যস্ত। কিছু নৌকা থেকে পাইকাররা মাছ উঠাচ্ছেন
বাজারে বিক্রির জন্য।
উপজেলার ষাটনল মালোপাড়া সংলগ্ন বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রকাশ্যে বিক্রি
হচ্ছে জাটকা। দুপুরে আমিরাবাদ মৎস্য আড়তে গিয়ে একই চিত্র দেখার মেলে। আড়তে অসংখ্য পাইকারি
ক্রেতা-বিক্রেতার কোলাহল। মাছ বেচাকেনার দামদরের কাজে ব্যস্ত সবাই। খানিকটা দূরে অপেক্ষমাণ
কয়েকটি পিকআপ ভ্যান। সেসব যানে করে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় যাবে মাছ।
মতলব উত্তরের জেলে ইসমাইল, মালেক বেপারী, আরশাদ প্রধান, রমিজ ছৈয়ালসহ
একাধিক জেলে জানান, তারা মৎস্য অফিসে ইমান আলীর মাধ্যমে টোকেন নিয়েছেন। এ টোকেন দিয়ে
তারা নদীতে মাছ ধরেন। টোকেন ছাড়া নদীতে মাছ ধরতে নামলে প্রশাসন তাদের জেল-জরিমানা করে।
উপজেলার ষাটনল এলাকার মৎস্য ব্যবসায়ী নেতা ফুলচান বর্মনের সঙ্গে কথা
হলে তিনি বলেন, ‘জেলেদের পর্যাপ্ত সুবিধা ও বিকল্প কর্মসংস্থান দিতে না পারলে সরকারের
উদ্দেশে বাস্তবায়ন হবে না।’
এখলাসপুর, আমিরাবাদ, বাবুবাজার ও কালিরবাজার আড়ৎ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতিরা বলেন, মাছ না ধরলে মানুষ না খেয়ে মরবে। জেলেরা আছে খুবই অভাব অনটনে। জাল দিয়ে মাছ ধরে চলে তাদের সংসার। তাই আমরা সবকিছু ম্যানেজ করেই বাজার চালিয়ে যাচ্ছি।
অভিযোগের বিষয়ে ইমান আলী বলেন, ‘টাকা নিয়ে টোকেন দেওয়ার কেথা সম্পূর্ণ মিথ্যা। মূলত জেলেদের তাদের মতো করে নদীতে নামায় আড়তদাররা।’
রাতে মেঘনা নদী জেলেদের দখলে থাকে আপনারা কি রাতে অভিযান করেন এমন প্রশ্নের
জবাবে মোহনপুর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘ফোর্স কম। তাই রাতে অভিযান
পরিচালনা করতে কিছুটা কষ্ট হচ্ছে। তারপরও আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি।’
মতলব উত্তর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস বলেন, ‘আমরা
নদীতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। যারা আইন অমান্য করে নদীতে মাছ শিকার করছে তাদের
বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
জেলেদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘তারা আমাদের নামে যে অপপ্রচার
চালাচ্ছে তা সঠিক নয়।’
মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা কুলসুম মনি জানান, ‘প্রশাসনের
পক্ষ থেকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে মৎস্য বিভাগকে আরও আন্তরিক হতে হবে।’