
প্রিন্ট: ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:২৪ এএম

মহিউদ্দিন মিশু, আখাউড়া
প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:২৭ এএম

আরও পড়ুন
পূর্বাঞ্চল রেলপথের আখাউড়ায় গত ১৫ মাসে ট্রেনে কাটা পড়ে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ঈদের তৃতীয় দিন বুধবার দুপুরে আখাউড়া উপজেলার গঙ্গাসাগর রেলওয়ে স্টেশন অদূরে রেলব্রিজ এলাকায় আন্তঃনগর পাহাড়িকা এক্সপ্রেস চলন্ত ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে ২ তরুণ নিহত হয়।
একই দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয় আরও দুজন। ওই তরুণরা ট্রেনের ছাদে টিকটক ভিডিও বানাতে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন-কুমিলার দেবীদ্বার উপজেলার কাইয়ুম (২৩) ও কসবা উপজেলার পুরক‚ইল এলাকার তারেক। এদের মধ্যে কাইয়ুম ঘটনাস্থলেই মারা যান।
এদিকে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২ এপ্রিল বুধবার পর্যন্ত ওই দুজনসহ ১৩ জনের লাশ উদ্ধার করে আখাউড়া রেলওয়ে পুলিশ। তাদের মধ্যে দুইজন নারী ও ১ জন শিশু রয়েছে।
অপরদিকে গত বছর ২০২৪ সালে এক বছরে ৩৫ জনের লাশ উদ্ধার করে আখাউড়া রেলওয়ে থানা পুলিশ। তাদের মধ্যে ২৬জন পুরুষ, ৯ জন নারী ও দুজন শিশু। নিহতদের বেশিরভাগ অজ্ঞাত পরিচয়ের।
এসব ঘটনায় আখাউড়া রেলওয়ে থানায় ৪৭টি অপমৃত্যু ও দুইটি নিয়মিত মামলা হয়েছে।
আখাউড়া রেলওয়ে থানা সেকশনের আখাউড়া-আশুগঞ্জ, আখাউড়া-মন্দবাগ ও আখাউড়া-মুকুন্দপুরের ১শ কিলোমিটার রেলপথের বিভিন্ন স্থানে গেল ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ২ এপ্রিলে এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। আখাউড়া রেলওয়ে থানা এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
গেল বছর সবচেয়ে বেশি ট্রেনে কাটা পড়ে সেপ্টেম্বর মাসে। এক মাসে ৮ জনের মৃত্যু হয়। এদের মধ্যে ১ জন অজ্ঞাতনামা শিশু রয়েছে।
এদিকে চলতি বছরের জানুয়ারি, এক মাসে ৪ জনের লাশ উদ্ধার করেছে আখাউড়া রেলওয়ে থানা পুলিশ। তাদের মধ্যে একজন অজ্ঞাতনামা নারী রয়েছে। বাকি ৩ জন পুরুষের মধ্যে পরিচয় পাওয়া ফরিদ মিয়াকে (৭০) তার পরিবারের কাছে তুলে দেওয়া হয়েছে। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার গোকর্ন উত্তরপাড়ার বাসিন্দা ছিলেন। অন্যরা অজ্ঞাত পরিচয়।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, চলন্ত অবস্থায় ট্রেনে ওঠানামা, ছাদে ভ্রমণ, দুই বগির সংযোগস্থল বাফারে বসা, ট্রেনের দরজার হাতলে ঝুলে যাতায়াত, রেল লাইনের পাশ দিয়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে হাঁটা বা লাইনে বসে থাকা, অবৈধ রেলক্রসিং ও অসতর্কভাবে রেললাইন পার হওয়া এবং ওভারব্রিজ ব্যবহার না করায় এসব দুর্ঘটনার শিকার হন তারা।
আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশন নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তা (সিআই) মো. জাহাঙ্গীর আলম যুগান্তরকে বলেন, কানে হেডফোন লাগিয়ে রেললাইনে হাঁটাহাঁটি করা অথবা লাইনে বসে গল্পগুজবে মশগুল থাকায় অনেকেই ট্রেন দুর্ঘটনার শিকার হন। এসব বিষয়ে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী এবং রেলপুলিশ যৌথভাবে প্রতি মাসেই সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করা হয়।
এছাড়াও রেলস্টেশন, রেললাইন সংলগ্ন এলাকার মসজিদ ও স্কুলে সচেতনামূলক কার্যক্রম চালানো হয়। তবে জনগণকে আরও সচেতন হতে হবে।
আখাউড়া রেলওয়ে থানার ওসি মো. জসিম উদ্দিন খন্দকার জানান, ট্রেন যাত্রী ও সাধারণ মানুষের অসতর্কতার কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে।
আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশন সুপারিন্টেন্ডেন্ট মো. নুর নবী বলেন, ট্রেনে কাটা পড়ে প্রতিবছরই বহু মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। স্টেশনের প্লাটফর্মে আগত যাত্রীদের মাইকিং করে নিয়মিত সচেতন করা হয়। যাত্রীরা যেন রেললাইন পারাপারের সময় ওভারব্রিজ ব্যবহার করেন এবং ভ্রমণে সতর্কাবস্থায় থাকলে দুর্ঘটনা কমে আসবে বলে তিনি মনে করেন।