
প্রিন্ট: ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:২৩ এএম
অপহৃত ৪ শিশুকে উদ্ধার অভিযানে পুলিশের ওপর হামলা, ২২ জন কারাগারে

রংপুর ব্যুরো
প্রকাশ: ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৪৯ পিএম

আরও পড়ুন
রংপুরে অপহৃত ৪ শিশুকে রেলস্টেশন এলাকা থেকে উদ্ধার করতে গিয়ে উত্তেজিত জনতার হামলার ঘটনায় ২২ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেছে পুলিশ। কোতোয়ালি রংপুর মেট্রোপলিটন থানা পুলিশের এসআই কারিবুল হাসানের দায়েরকৃত ওই মামলায় আরও অজ্ঞাতনামা ৩শ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় এজাহারনামীয় ২২ জন আসামিকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
মামলার সংক্ষিপ্ত বর্ণনায় বলা হয়েছে- অপহরণকারীকে গ্রেফতার ও ৪ শিশুকে উদ্ধার করার সময় উত্তেজিত জনতা পুলিশকে অবরুদ্ধ করে রাখে। পুলিশের গায়ে হাত তোলে এবং বেআইনি জনতা সংঘবদ্ধভাবে সরকারি কাজে বাধা দান করে।
বাদীর এজাহারের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার বিকালে এই মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।
মামলায় ২২ জন আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তারা হলেন- রংপুর রেলস্টেশন সংলগ্ন মুসলিমপাড়া এলাকার রুবেল মিয়া (২৪), হৃদয় হোসেন (২০), শাহ পরান (২৫), জাহিদ হোসেন (১৯), সাদ্দাম হোসেন (৩১), সাকিব হোসেন (১৯),শাহাদৎ হোসেন (৩৫), শমসের আলী (৩৫), ইসমাইল হোসেন (৪৫), মোহাম্মদ সনু মিয়া (২৩), সাজু মিয়া (৩৮), জাবেদ হোসেন (৪৪), জাহিদ হোসেন গোল্ডেন (২৪),বাদল মিয়া ( ১৯), মোহাম্মদ সোহেল (২৫), দুলাল মিয়া (২৭), আফসার আলী (২২), মোহাম্মদ সাঈদ হোসেন (২০), শাহাজান হোসাইন (২৫), আব্দুল হামিদ হিরা (৪৪), নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর থানার গোলাহাট এলাকার বাসিন্দা জাবেদ আলী (৩০) ও রংপুরের পীরগাছা উপজেলার নজর মামুদ গ্রামের রেজাউল করিম (৩৭)। এছাড়া আরও দুই-তিনশ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
পুলিশ এজাহারভুক্ত নামীয় ২২ জন আসামিকে গত ২৪ ঘণ্টায় গ্রেফতার করে। এরপর তাদের বৃহস্পতিবার বিকালে রংপুর মেট্রোপলিটন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠায় পুলিশ। আদালতের বিচারক সোয়েবুর রহমান আসামিদের রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর পুলিশ প্রহরায় আসামিদের আদালত থেকে কারাগারে নেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, শুক্রবার ২৭ মার্চ বৃহস্পতিবার নগরীর তপোধন এলাকার আশিকুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন আদুরী বেগম। এ সময় তিনি অসহায় দাবি করে গৃহকর্তার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করলে তাকে আশ্রয় দেন তিনি। পরদিন শুক্রবার ইফতারের পর কৌশলে ওই বাড়ির মমিনুরের ছেলে ইসমাইল (৭) ও মেয়ে মিনু (১২), আকিফুল ইসলামের মেয়ে আঁখিমনি (১১) এবং মো. মকবুলের ছেলে রিফাতকে (৮) অপহরণ করে পালিয়ে যাওয়ার জন্য রংপুর রেলস্টেশনে অপেক্ষা করতে থাকেন।
বিষয়টি জানাজানি হলে পুলিশকে জানায় পরিবার। এরই মধ্যে নগরীর সব চেকপোস্ট এবং বাসস্ট্যান্ড ও স্টেশন এলাকায় নজরদারি বাড়ায় পুলিশ।
মহানগর পুলিশ কমিশনার জানান, রাত সাড়ে ১০টার দিকে স্টেশন এলাকায় জনতা দেখতে পান চারটি শিশু নিয়ে টানাহেঁচড়া করছে এক নারী। সন্দেহ হলে তাকে আটক করে সেখানে থাকা রেলওয়ে পুলিশকে জানায়। রেলওয়ে পুলিশ শিশু চারটিকে উদ্ধার এবং ওই নারীকে আটক করে মহানগর পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় অপহরণের সঙ্গে জড়িত ওই নারীকে উত্তেজিত জনতা মারধর করেন। অপহরণের শিকার শিশুদের উদ্ধার ও অপহরণকারী নারীকে আটক করতে গেলে উত্তেজিত জনতা পুলিশের গায়ে হাত তোলে ও রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে পুলিশসহ তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ওই নারী ও শিশুদের বিক্ষুব্ধ জনতার হাত থেকে উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় আটক হওয়া অপহরণকারী আদুরী বেগমকে (৩৫) অপহরণ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ। শুক্রবার দিবাগত রাতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই নারীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে তাকে পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়। পরদিন শনিবার তাকে অপহরণ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
গ্রেফতার আদুরী বেগম কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ফকিরচর গ্রামের মনছুর আলীর স্ত্রী। তিনি রংপুর নগরীর বাবুপাড়া এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। শিশু অপহরণের ঘটনায় হারাগাছ এলাকায় লিটন নামে এক ব্যক্তিকে খুঁজছে পুলিশ।