
প্রিন্ট: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০২:০৯ এএম
ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ‘মাংস সমিতি’

মুহ. মিজানুর রহমান বাদল, সিংগাইর (মানিকগঞ্জ)
প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২৫, ০৬:১২ পিএম

ফাইল ছবি
আরও পড়ুন
মানিকগঞ্জের সিংগাইরে গ্রাম, পাড়া ও মহল্লায় ব্যাপক আলোচনায় ব্যতিক্রমী উদ্যোগ মাংস সমিতি। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষেরা মিলেমিশে ৩০/৫০ জনের সমিতি রয়েছে। সমিতির প্রধান উদ্দেশ্য হলো সমিতির জমানো টাকায় গরু বা মহিষ কিনে ঈদের আগে জবাই করে মাংস ভাগ করে নেওয়া। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতেই এই ‘মাংস সমিতি’র মূল উদ্দেশ্য।
প্রায় ২-৩ বছর আগে থেকে সিংগাইর উপজেলায় এ প্রথা চালু হলেও এখন ঘরে ঘরে সমিতি রয়েছে। প্রথম দিকে সমিতির কথা শুনে অনেকে অবাক হলেও বর্তমানে লোকজন এ সমিতির প্রতি বেশ আকৃষ্ট। এরপর থেকে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় এর প্রচলন ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছে। ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে এ ধরনের মাংস সমিতি গঠন করা হয়।
সমিতিতে যুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বছর বাড়ছে মাংস সমিতির সংখ্যা। প্রতিটি মাংস সমিতির সদস্য সংখ্যা ৩০ থেকে ৫০ ও ১০০ জন পর্যন্ত হয়ে থাকে। সমিতির অন্তর্ভুক্ত প্রতিজন সদস্য প্রতি মাসে সমিতিতে ৫শ থেকে ১ হাজার অর্থ জমা রাখেন। বছর শেষে ঈদুল ফিতরের ঈদের আগে জমাকৃত অর্থ একত্র করে পশু কেনা হয়। ঈদের দিন বা তার দু-একদিন আগেই এই পশু জবাই করে সমিতির প্রত্যেক সদস্যকে ভাগ করে দেওয়া হয়। এতে ঈদ উদযাপনের ক্ষেত্রে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের ওপর আর্থিক চাপ যেমন কমে, তেমনি ঈদের আগে সবাই বাড়তি আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে পারেন।
স্থানীয়দের ভাষায় এই সমিতির নাম ‘গোশত বা মাংস সমিতি’। অনেকের কাছে ‘গরু সমিতি’ নামেও পরিচিত।
উপজেলার পৌরসভাসহ ১১টি ইউনিয়নে এ ধরনের আরও অনেক সমিতি গড়ে উঠেছে। ২৭ রমজান থেকে শুরু হয় সমিতির পশু জবাইয়ের কাজ। চলে ঈদের দিন পর্যন্ত।
উপজেলার চারিগ্রাম ইউনিয়নের মধ্য চারিগ্রাম এলাকার একটি সমিতির উদ্যোক্তা আরিফ হোসেন যুগান্তরকে জানান, সমিতিতে এবার ৩০ জন সদস্য। প্রতি মাসে সদস্য প্রতি ৫শ টাকা করে ১১ মাসে ৫ হাজার ৫ শত টাকা জমা রেখেন। সেই টাকা দিয়ে এ বছর কেনা মহিষ ২৫ রমজান জবাই করে সমিতির সদস্যদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। তুলনামূলক বাজার দরের চেয়ে কম দামে এবং একসঙ্গে বেশি পরিমাণ গোশত পেয়ে প্রত্যেকেই খুব খুশি।
সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান জাহিনুর রহমান সৌরভ বলেন, এলাকায় গোশত সমিতি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ সমিতির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। গরুর মাংসের উচ্চমূল্য থাকলেও সমিতির কারণে ঈদুল ফিতরে এখন ঘরে ঘরে গরুর গোশত রান্না হয়। এ ধরনের সমিতির কারণে সমাজে ভ্রাতৃত্ববোধ আরও জোরদার হয়।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসএম আবদুল্লাহ বিন শফিক বলেন, এ ধরনের সমিতি কথা শুনে অনেক ভাল লাগল। একটি গরু জবাই করে মিলেমিশে মাংস বণ্টন করে নেন। এলাকার মানুষ অনেক ভালো মনের। সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ঈদের আনন্দটাও অনেক বাড়িয়ে দেয়। এটা খুবই ইতিবাচক উদ্যোগ।