
প্রিন্ট: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০২:১৩ পিএম
ঈদ নেই মাদারীপুরে ১৭ শহীদ পরিবারের

টেকেরহাট (মাদারীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২৫, ১১:৪২ এএম

দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদুল ফিতর। তবে তাদের মাঝে ঈদের আনন্দ নেই। শোকের ছায়ায় বিভোর তারা। বলছি, মাদারীপুরের ১৭ পরিবারের কথা, যারা কি না পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছেন জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে।
গণঅভ্যুত্থানে মাদারীপুরের ১৭ পরিবারের কেউ হারিয়েছেন বাবা, কেউবা সন্তান অথবা কেউ স্বামী। পরিবারের উপার্জনক্ষম একমাত্র ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশাহারা অনেক পরিবার। স্বজন হারিয়ে এবারের ঈদ যেন ফিকে হয়ে গেছে পরিবারগুলোর। ঈদের প্রস্তুতি নেই তাদের। স্বজন হারানো শোক কাটিয়ে উঠতে না পারায় ঈদ যেন ধূসর হয়ে ধরা দিয়েছে। কিছুটা আক্ষেপও রয়েছে প্রশাসন আর বর্তমান সরকারের প্রতি। তবে প্রশাসন সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছেন।
জেলা সদরের ঘটমাঝি ইউনিয়নের খাগদী এলাকায় বাসিন্দা রিনা বেগম। গণঅভ্যুত্থানে ছেলে রোমান বেপারীকে হারিয়ে শোকে কাতর এ মা। দিনের অধিকাংশ সময় কাটাচ্ছেন ছেলের কবরের পাশে। ছেলের পুরারো জামা-কাপড় আর কাগজপত্র ঘেটে সময় কাটান তিনি।
গত বছরের ১৯ আগস্ট সদরের যুব উন্নয়ন অফিসের সামনে যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ প্রশাসনের সঙ্গে ত্রিমুখী সংর্ঘষে ঘটনাস্থলেই মারা যায় রোমান বেপারী। ছেলের মৃত্যুর পর তার মা যেন শোকে পাথর।
শুধু রোমান বেপারীই নয়, মাদারীপুরের আরও ১৬ শহীদ পরিবারে একই চিত্র। উপার্জনক্ষম একমাত্র ব্যক্তিকে হারিয়ে পরিবারগুলোয় এখন নুন আনতে পান্তা ফুরানোর জোগাড়। সেখানে ঈদ সামনে তাদের হারানোর ক্ষতকে নতুন করে জাগিয়ে তুলছে। সপরিবারে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার কথা মনে হলেই কেঁদে উঠছেন স্বজনরা। তাদের অভিযোগ, শহীদের রক্তে অনেকে বাড়ি-গাড়ি পেলেও তারা রয়েছে অধরায়।
শহিদ রোমান বেপারীর মা রিনা বেগম বলেন, ‘এবার আমাদের ঈদ নাই। গতবার আমার পোলায় সবাইকে জামা কাপড় দিছে। সেই কথা মনে পড়লে রাতে ঘুমাতে পারি না। ছেলের কবরের পাশে বসে থাকি। রোমানের স্ত্রী ও ছোট নাতনি তাদের নানা বাড়িতে থাকে। আমাদের শুরুতে কিছুটা সহযোগিতা করলেও এখন কেউ খোঁজটুকু নেয় না।’
একই সুরে কথা বলেন শহিদ মামুনের স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তার। তিনি বলেন, ‘আমার একমাত্র মেয়ে এখনও তার বাবাকে খোঁজে। সারাদিন বাবার ছবি নিয়ে চুমা দেয়। গতবার পুরো পরিবার আনন্দে কাটিয়েছি। এবার আমাদের ঈদের কোন চিহ্ন নাই। এছাড়া এখনও কোন টাকা পয়সা আমরা পাইনি। দিবে দিবে করেও তারা টাকা দেয়নি।’
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও শহিদ পরিবারের পাশে আছেন বলে জানান জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহ মো. সজীব। তিনি বলেন, ‘যারা এখনও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে সহযোগিতা পায়নি, তাদের কাগজপত্রের কারণে হয়তো পায়নি। তবে আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি হিসেবে মাদারীপুর জেলায় এ পর্যন্ত শহিদে তালিকায় ১৮ জন, এর মধ্যে একজন হিন্দু সম্প্রদায়ের। এছাড়া আহতের তালিকায় রয়েছেন ১৫৩ জন। এদের বিভিন্নভাবে চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।’