
প্রিন্ট: ০১ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৪১ পিএম
১০ দোকানে তালা দিলেন বিএনপি নেতার দুই ছেলে

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৫, ০৮:১১ পিএম

আরও পড়ুন
জমির মালিকানা দাবি করে ১০টি দোকানে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সভাপতির দুই ছেলে।
বৃহস্পতিবার সকালে সৈকত সংলগ্ন শুঁটকি মার্কেটে এ ঘটনা ঘটে। বর্তমানে ওই ১০ দোকানির জীবিকা বন্ধ হয়ে গেছে। তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। দোকান বুঝে পেতে ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন পৌর বিএনপির অন্যান্য নেতারা।
ওই ১০ দোকানি ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ছয় বছর আগে বেল্লাল মোল্লা নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে তারা দোকানগুলো ভাড়া নেন। এ সময় একেক দোকানি ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা করে বেল্লালকে জামানত দেন; কিন্তু ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর ওই জমি তিন ব্যক্তি দাবি করেন। এর মধ্যে কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সভাপতি আজিজ মুসল্লি, রাশেদুল-আফতাব ও বেল্লাল মোল্লা।এ তিন ব্যক্তিকে বসে বিষয়টি সমাধানের জন্য বার বার অনুরোধ জানান দোকানিরা। কিন্তু দীর্ঘদিনেও বিষয়টি সমাধান না করে পৌর বিএনপির সভাপতির ছেলে লতাচাপলী ইউনিয়ন যুবদলের সহসাধারণ সম্পাদক রিয়াজ মুসল্লি দোকানিদের নতুন করে ভাড়ার চুক্তিপত্র করার চাপ প্রয়োগ করেন। জমির মালিকানার বিষয়টি সমাধান না হওয়ায় দোকানিরা রিয়াজ মুসল্লির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ করতে রাজি হননি।
পরে বৃহস্পতিবার সকালে রিয়াজ ও তার ভাই মহিপুর থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সালাউদ্দিন মুসল্লিসহ তাদের অনুসারীরা দোকানগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক দোকানি বলেন, আমরা সবাই বেল্লাল মোল্লার সঙ্গে চুক্তিপত্র করেছি। তাকে আমাদের লাখ লাখ টাকা অগ্রিম দেওয়া। আমরা রাজনীতি বুঝি না। আমাদের সামান্য শুটকি বিক্রি করে পেট চলে। কিন্তু বৃহস্পতিবার রিয়াজ ও তার ভাইসহ আট থেকে ১০ জন আমাদের দোকানে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে সে আমাদের হুমকি ধমকি দিচ্ছে। তার সঙ্গে আমাদের চুক্তি করতে বলেছে। দুইদিন পর ঈদ। রোজার একমাস কোনো বিক্রি ছিল না, লোকসানে দিন কেটেছে। ঈদে দোকান খুলতে না পারলে আমাদের ব্যবসা লাটে উঠবে।
বেল্লাল মোল্লা বলেন, ১৯৯৬ সালে পটুয়াখালী পৌরসভার কমিশনার মিলন মিয়ার স্ত্রী উম্মে সালমার কাছ থেকে আমি এ জমি ক্রয় করেছি। তিনি আমাকে সাড়ে ১৬ শতাংশ জমির দলিল দিয়েছেন। পরে সেখানে দোকান তুলে ভাড়া দিয়েছি। দোকান তোলার সময় বা পরে অন্যকেউ এ জমির মালিকানা দাবি করেননি। কিন্তু বৃহস্পতিবার হঠাৎ ক্ষমতার অপব্যবহার করে তারা দোকানগুলো দখলে নিয়েছেন। এর আগে মুসল্লি বাড়ির ছেলেরা আমাকে মারধর করেছেন। আমি দীর্ঘদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম।
জমির মালিকানা দাবি করা রাসেদুল ও আফতাব বলেন, সাবেক লতাচাপলী মৌজার ১১২৭নং খতিয়ানে ৫১৭৮/১০০২ এবং ৫১৮০/১০০৩ দাগের মালিক সাতজন- আরজ আলী, ওয়াজেদ আলী, আবদুল আলী, সোমেদ আলী, সেকান্দার আলী, সুলতান শেখ ও চান মিয়া। এসব মালিকের কাছ থেকে ৫ একর ৯৯ শতাংশ জমি লাল মিয়া ১৯৭০ সালে ক্রয় করেন। লাল মিয়ার ওয়ারিশরা সাত মাস আগে আমাদের নামে আমোক্তারনামা দেন। জমি বুঝে পাওয়ার জন্য অনেকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। বর্তমানে আমাদের জমি বুঝে পাওয়ার জন্য দেওয়ানি মামলা চলমান রয়েছে।
কুয়াকাটা পৌর বিএনপির ১নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন ঘরামী বলেন, সভাপতির দুই ছেলে জোরপূর্বক ক্ষমতা খাটিয়ে এ কাজটি করেছে। দোকানে তালা দেওয়ার পর আমি ওখানে গিয়ে রিয়াজের কাছে জানতে চাইলে সে উলটা পালটা কথা বলে এবং দোকানিদের ভয়ভীতি দেখায়। এভাবে তাদের দোকানে তালা মারা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। এটা আসলে দলের জন্য একটা বিপর্যয়।
কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সভাপতি আজিজ মুসল্লি বলেন, আমার ওই জমির বৈধ মালিকানার কাগজপত্র রয়েছে; যারা আমার সঙ্গে চুক্তি করেছে তাদের দোকান খুলে দেওয়া হয়েছে। বেল্লাল মোল্লা আওয়ামী লীগের ক্ষমতার জোরে ওই জমি দখল করে মার্কেট নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছিল। রাসেদুল-আফতাব ওই জমি দাবি করলেও তাদের দাগ অন্য জায়গায়। আমার দাগের মধ্যে তাদের জমি নেই।
এ বিষয়ে আজিজের ছোট ছেলে লতাচাপলী ইউনিয়ন যুবদলের সহসাধারণ সম্পাদক রিয়াজ মুসল্লি বলেন, এ জায়গা আমার বাবার। আমরা বিষয়টি সমাধানের জন্য প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। পরে দোকানিদের আমাদের সঙ্গে চুক্তি করতে বলেছি। কিন্তু কোনো সমাধান না পেয়ে বৃহস্পতিবার দোকানগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছি।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।