
প্রিন্ট: ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৩৭ এএম
ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানজট নিয়ে এবারও শঙ্কা

হোসেন চিশতী সিপলু, আল আমিন তুষার সিদ্ধিরগঞ্জ ও সোনারগাঁ থেকে
প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২৫, ০৮:০৭ পিএম

আরও পড়ুন
ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক। পূর্বাঞ্চলের ১৮ জেলার ৩৩ রুটের গুরুত্বপূর্ণ এ দুই মহাসড়ক ঈদ উপলক্ষ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয় এ রুটে চলাচল করা যাত্রীদের মাঝে। এ আতঙ্ক থাকে যানজটের, ছিনতাইকারীদের। আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষেও এ আতঙ্ক বিরাজ করছে যাত্রীদের মাঝে।
তবে তারা বলছেন, যদি কোনো প্রকার দুর্ঘটনা না ঘটে এবং পুলিশ যদি সক্রিয় থাকে তবে এ দুই মহাসড়কে কোনো প্রকার যানজট ও ছিনতাইয়ের শঙ্কাই থাকবে না। পুলিশের ভাষ্যও প্রায় একই রকম।
পুলিশ বলছেন, আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে আমরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। যানজট পুরোটাই এড়ানো যাবে। রোধ করা যাবে ছিনতাইয়ের ঘটনাও। তাছাড়া ঈদের ছুটি এবার ৯ দিন হওয়ায় যাত্রীদের চাপও কম থাকবে বলে প্রত্যাশা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দূরপাল্লার যাত্রীবাহীবাসের কয়েকজন কাউন্টার মালিকদের।
ঈদের সময় প্রিয়জনদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে নাড়ির টানে রাজধানী থেকে ঘরে ফেরা যাত্রীদের নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে হয়। প্রতি বছরই এ যাত্রাকে কেন্দ্র করে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে কম-বেশি যানজটের কবলে পড়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়। এবারও সেই যানজটের আশঙ্কা এ দুই মহাসড়কের কয়েকস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছেন সাধারণ যাত্রী ও এ দুই মহাসড়কের চলাচলরত বাস কাউন্টার শ্রমিকদের।
নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ভিটিকান্দি সড়ক উপ-বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনির হোসেন জানায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাঁচপুর থেকে বিশ্বনন্দী পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার রাস্তা। অপরদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড থেকে মেঘনা ব্রিজ পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার রাস্তা। এ দুই মহাসড়কে আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে আমাদের কোনো সংস্কার কাজ নেই। ইতোমধ্যে আমরা এ মহাসড়কে প্রয়োজনীয় সংস্কার করেছি। আমাদের কারণে এ দুই মহাসড়কে কোনো যানজট হবে বলে আমি মনে করি না। তারপরও মহাসড়কে কোনো সমস্যা হলে আমাদের টিম প্রস্তুত রয়েছে দ্রুত কাজ সমাধান করে এ মহাসড়কে নির্বিঘ্নে গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করার।
সরেজমিন এ দুই মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্ট্যান্ডগুলোতে খবর নিয়ে দেখা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড প্রো-এ্যকটিভ হাসপাতাল, মাদানীনগর মাদ্রসা, চিটাগাংরোড, কাঁচপুর ব্রিজ, মদনপুর বাইপাস মুখ, মুগড়াপাড়া, কেওঢালা, চৈতী গার্মেন্টস, মেঘনা ইকোনমিক জোনসহ ছোট-খাট বাসস্ট্যান্ডগুলো এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাঁচপুর মোড়, তারাব, বরাব, যাত্রামুড়া, রূপসী, গোলাকান্দাইল, গাউছিয়াসহ ছোট-ছোট বাসস্টান্ডগুলো যানজট সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এ পয়েন্টগুলোতে লেগুনা, সিএনজি, অটোরিকশা ও লোকাল বাসের যাত্রী উঠা-নামার কারণেই এ স্ট্যান্ডগুলোতে যানজটের সম্ভাবনা রয়েছে।
তাছাড়া ২৭ মার্চ চৈতি গার্মেন্টস ও মেঘনা ইকোনোমিক জোনে বিকালে ছুটির সময় শ্রমিকদের একসঙ্গে গার্মেন্টসসহ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বের হওয়ার সময় যানজটের সম্ভাবনা রয়েছে। একইভাবে এ স্থানগুলো ছিনতাইয়ের শঙ্কাও করছেন এ মহাসড়কে চলাচল করা যাত্রীরা।
তবে ছিনতাইয়ের শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহীনুর আলম বলেন, সাইনবোর্ড থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত মহাসড়কে যাতে ছিনতাইয়ের ঘটনা না ঘটে, তা তদারকির জন্য এবং ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার করার জন্য আমদের দুইটি মোবাইল টিম, দুইটি হোন্ডা টিম ও একটি সিএনজি টিম রয়েছে।
অপরদিকে শিমরাইল হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ টিআই আবু নাঈম সিদ্দিকী বলেন, এ মহাসড়কে ঈদ উপলক্ষ্যে যানজটের সৃষ্টি যেন না হয়, সে জন্য সাইনবোর্ড, শিমরাইল, তারাব পৌরসভা গেট, যাত্রামুড়া ব্রিজ, মেঘনা, যাত্রামুড়া, মদনপুরসহ স্ট্যান্ডগুলোতে অতিরিক্ত টিম কাজ করবে। পাশাপাশি আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ঘোষিত নির্দেশনা অনুযায়ী ২৫ মার্চ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত এবং ঈদের পরবর্তী ৩ দিন ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, লরি এ দুই মহাসড়কে চলতে দেব না। তবে শুধু গার্মেন্ট, খাদ্যদ্রব্য, ওষুধ, সার, জ্বালানিবাহী ও কাঁচামালবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যান চলতে দেওয়া হবে। ফলে এ দুই মহাসড়কে পরিবহণ অনেকটা কমে আসবে।
এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ চিটাগাং রোড এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাসের কাউন্টার মালিকের মতে, পুলিশের আন্তরিকতা থাকলে এবং এ দুই মহাসড়কে কোনো প্রকার দুর্ঘটনা না ঘটলে যানজটের বিড়ম্বনা এড়ানো যাবে। পাশাপাশি কোনো ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটবে না। একইভাবে এবার যানজট না হওয়ার পেছনে লম্বা বন্ধের কথাও তিনি উল্লেখ করেন।
ফেনীর ফুলগাজী এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া, যিনি সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিল এলাকায় বসবাস করেন; তার মতে, প্রতি বছরেই এ মহাসড়কে ভোগান্তিতে তাদের ঈদ করতে বাড়িতে যেতে হয়। এবারও তিনি যানজটের শঙ্কা করছেন। তবে তিনিও বলছেন, লম্বা ছুটি, পুলিশের আন্তরিকতা এবং কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলে নির্বিঘ্নে বাড়িতে যেতে পারব।