
প্রিন্ট: ০১ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:১১ পিএম
মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এতিমদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

মাধবদী (নরসিংদী) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৫, ০৩:৩৪ পিএম

আরও পড়ুন
নরসিংদীর মাধবদী উপজেলার জামিয়া মোহাম্মদিয়া দারুল উলুম এতিমখানা চরভাসানিয়া মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মুফতি হাবিবুল্লাহর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, এতিমদের জন্য সরকারিভাবে আসা প্রতি মাসের টাকা আর্তসাৎ করছেন ওই শিক্ষক।
এদিকে, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে জানতে ওই মাদ্রাসায় গেলে এক সাংবাদিকের
ওপর হামলা চালান ওই শিক্ষক। ওই সাংবাদিকের ক্যামেরার স্ট্যান্ড ভেঙে মাইক্রোফন ও মোবাইল
ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। দিয়েছেন হুমকিও। এ ঘটনায় মাধবদী থানায় একটি লিখিত
অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ওই সাংবাদিক।
জানা গেছে, নরসিংদী সদর উপজেলার পাইকারচর ইউনিয়নে অবস্থিত জামিয়া মোহাম্মদিয়া
দারুল উলুম এতিমখানা চরভাসানিয়া মাদ্রাসা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সমাজসেবা
অধিদপ্তরের ক্যাপিটেশন গ্র্যান্টপ্রাপ্ত মাদ্রাসা। দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে
রয়েছেন মুফতি হাবিবুল্লাহ। স্থানীয় ইউপি সদস্যের কাছ থেকে প্রত্যায়নপত্র নিয়ে দীর্ঘদিন
ধরে অর্থ আত্মসাৎ করছেন তিনি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, একই প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন থাকার সুবাদে মাদ্রাসা
পরিচালনা কমিটিকে ম্যানেজ করে বিভিন্ন সময় দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন প্রধান শিক্ষক হাবিবুল্লাহ।
এতিম শিক্ষার্থীদের জন্য আসা সরকারি বরাদ্দ আত্মসাৎ করেছেন তিনি। একাধিকবার এ প্রধান
শিক্ষকের অপসারণ চেয়ে স্থানীয়রা মানববন্ধন ও ঝাড়ু মিছিল করলে তাকে নিজের পদ থেকে সরানো
যায়নি।
চরভাসানিয়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত আলাউদ্দিনের ছেলে আকসানুল্লাহ বলেন,
‘প্রায় ৭ বছর ধরে আমি ওই মাদ্রাসায় লেখাপড়া
করি। আমার নামে মাদ্রাসায় একাধিক টাকা বরাদ্দ আসলেও কোনোদিন এক টাকাও পাইনি।’ জিসান নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমার বাবা নেই।
অনেক কষ্টে সংসার চলে। টাকা জন্য লেখাপড়াও করতে পারছি না। অথচ আমার নামে সরকারিভাবে
যে টাকা আসতো তা মুফতি হাবিবুল্লাহ হুজুর আত্মসাৎ করে খেয়ে ফেলেছে।’
ওই গ্রামের বাসিন্দা আজিুজুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ছেলে জহিরুল ইসলামকে
মাদ্রাসায় ভর্তি করানোর জন্য হাবিবুল্লাহ স্যার তিন হাজার টাকা নিয়েছে। ছেলেকে বরণপোষণ
দিতে পারি না। তার নামে সরকারি টাকা আসতো। কিন্তু আমাকে কোনো দিন টাকা দেওয়া হয়নি।’
এতিম শিশুদের নামে তাদের বরণপোষণ, চিকিৎসা ও শিক্ষা প্রদানের জন্য আর্থিক
সহায়তা করা হবে বলে সরকারি বরাদ্দের জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্যের কাছ থেকে প্রত্যায়নপত্র
নেন অভিযুক্ত শিক্ষক হাবিবুল্লাহ। ওই সব প্রত্যায়ন পত্র ব্যবহার করে টাকা তুলে আত্মসাৎ
করা হয় বলেও অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
এ বিষয়ে পাইকারচর ইউপি সদস্য মো. শাহীন মিয়া বলেন, ‘সরল বিশ্বাসে হুজুরকে
প্রত্যায়নপত্র দিয়েছি। আমি কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নয়।
অভিযোগের বিষয়ে হাবিবুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি বক্তব্য দিতে
রাজি হননি। আর নরসিংদী সদর সমাজসেবা কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেলে
তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মাধবদী থানার ওসি মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ভুক্তভোগী সাংবাদিক থানায় লিখিত
অভিযোগের পর ঘটনাস্থলে পুলিশের একটি দল পাঠানো হয়। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা
নেওয়া হবে।’