আজ আন্তর্জাতিক বন দিবস
চুনারুঘাটের ৯টি বনের সীমানা জরিপ নেই, বাড়ছে জবরদখল

আবুল কালাম আজাদ, চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ)
প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৫, ০৪:২৩ এএম

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের বনের উন্নয়নে কোটি কোটি টাকা খরচ হলেও বনের সীমানা নির্ধারণ করা যায়নি। আনসার্ভে ল্যান্ড নিয়েই চলছে বনবিভাগ। এখনো ব্রিটিশ আমলের পিলার এবং ছড়া নদী দিয়ে ভাগকরা সীমানায় চলছে উপজেলার ৪টি রেঞ্জের ৯টি বিটের প্রায় ২৩ হাজার একর বন। সীমানা নির্ধারণ না থাকায় বনের জমি দখল বাড়ছে। এমনকি জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে থাকা তথ্যের সাথে বনবিভাগের তথ্যে মিল নেই। তবে আশার কথা ডিজিটাল সার্ভে শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে বনবিভাগ।
চুনারুঘাট উপজেলায় রয়েছে প্রায় ২৩ হাজার একর বন। উপজেলার ৪টি রেঞ্জ ও ৯টি বনবিটের অধীনে থাকা কোনটির নেই সীমানা নির্ধারণ। উপজেলার রেমা কালেঙ্গা হচ্ছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন। এ বনে ৪টি বনবিট রয়েছে। বনবিভাগের তথ্যমতে ৪টি বিটে বনের পরিমান হচ্ছে ১৪ হাজার ৮শ ৭৫ হেক্টর। এরমধ্যে ১ হাজার ৯শ ৭৪ হেক্টর জমি বাংলাদেশ বনশিল্প কর্পোরেশনের কাছে লীজ দেওয়া হয়েছে। সাতছড়িতে ৩ হাজার ৭শ ৫৩ একর এবং রঘুনন্দন রেঞ্জে ৪ হাজার ৩শ ৬০ এেকর বনভুমি রয়েছে। বাস্তবে এখন বনভুমির পরিমান অনেক কম।
সাতছড়ি ও রঘুনন্দন রেঞ্জের অধীনে ৫টি বিটে রয়েছে বাকি ভুমি। উপজেলার ৯টি বনবিটের কোনটিরই জরিপ কিংবা সীমানা নির্ধারণ নেই। সাতছড়ি রেঞ্জের ২টি বিট কয়েকবার উদ্যোগ নিয়ে করা যায়নি সীমানা নির্ধারণ। সীমানা নির্ধারন করতে বিপুল বাজেটও নেই তাদের কাছে। এমনটি রেমা কালেঙ্গা অভয়ারন্য ও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানেরও সীমানা নির্ধারণ নেই। ২০০৫ সালে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে রেমা কালেঙ্গার ১৯৯৫ হেক্টরকে অভয়ারন্য এবং সাতছড়ির ২৪৩ হেক্টরকে জাতীয় উদ্যান ঘোষনা করা হয়। যদিও সম্প্রতি সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের আয়তন আরো ৬শ হেক্টর বাড়ানো হয়েছে। কাগজে কলমে এ আয়তন বাড়ানো হলেও বাস্তবে এর কোন সীমানা নেই।
এদিকে রঘুনন্দন রেঞ্জের ৩টি বিটেরও একই অবস্থা। সীমানা না থাকায় জবরদখল হয়ে যাচ্ছে বিপুল পরিমান বনভুমি। অনেকেই ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলেছেন। যদিও বনবিভাগ মাঝে মাঝে অভিযান করে এসব দখলমুক্ত করে। সীমনা চিহ্নিত না করা এবং সার্ভে না করার কারণে ব্রিটিশ আমলের সীমানা নির্ধারণ দিয়েই এখন পর্যন্ত চলছে চুনারুঘাটের বনবিভাগ।
হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী জেলায় বনভূমি ১১ হাজার ৬৪৪ হেক্টর বা ২৮ হাজার ৭ শ ৬০ একর। যা মোট আয়তনের ৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ। তবে বন বিভাগ বলছে, জেলায় কী পরিমাণ বনভূমি রয়েছে, এর কোনো পরিসংখ্যান তাদের কাছে নেই। সারা দেশে বনের ওপর জরিপ করা হলেও অর্থ বাঁচাতে ও দক্ষ জনবলের অভাবে জেলাভিত্তিক কোনো জরিপ হয়নি।
এদিকে পরিবেশবাদীরা বলছেন, বনভূমি রক্ষায় সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো উদাসীন। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে বনভূমির সঠিক তথ্য নিয়েও চলছে লুকোচুরি। সেই সঙ্গে দখল হওয়া বনভূমি উদ্ধারেও কোনো মাথাব্যথা নেই প্রশাসনের। ফলে কমছে বনভূমি, ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ।
বন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় এ পর্যন্ত ৮৩ দশমিক ৬৮ একর সংরক্ষিত বনভূমি দখল হয়েছে। এর মধ্যে ২২ জন ব্যক্তির কাছে স্থায়ী স্থাপনাবিহীন বনভূমি রয়েছে ৪৬ দশমিক ৭২ একর। যেখানে তৈরি হয়েছে বাগান ও কৃষিজমি। ৪ দশমিক ৪৮ একর ভূমিতে স্থায়ীভাবে ঘরবাড়ি নির্মাণ করেছেন ৫২ জন। চারটি শিল্পকারখানা দখল করেছে ৩২ দশমিক ৩২ একর। এ ছাড়া অন্যান্য দখলে রয়েছে দশমিক ১৬ একর সংরক্ষিত বনভূমি।
কালেঙ্গা রেঞ্জ কর্মকর্তা বনের পরিমান খাতা কলমে যা আছে তা জানিয়ে বলছেন, ব্রিটিশ আমলের সীমানা পিলার ও ছড়া দিয়ে ভাগকরা সীমানা দিয়েই আমাদের হিসাব। তিনি বলেন, তবে আশার কথা সিলেট বনবিভাগের বড়লেখা এলাকায় ডিজিটাল সার্ভে শুরু হয়েছে। আমাদের বনও দ্রুত সার্ভের কাজ শুরু হবে।
সাতছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সাতছড়ি বনের তিন দিকে চা বাগান ও একদিকে ভারত সীমান্ত। সীমানা জটিলতা নেই। তবুও দ্রুত ডিজিটাল সার্ভের মাধ্যমে আমাদের বনের সীমানা নির্ধারণ করা শুরু হবে। নানা জটিলতায় দেরি হচ্ছে। তিনি বলেন, সাতছড়িতে কোন জবরদখল নেই। কিছু লেবু বাগান রয়েছে, যা উপজাতিরা চাষবাস করে।