
প্রিন্ট: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:১৯ এএম
কোটি টাকার নতুন সেতু অচল

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ১০:৫৬ পিএম

সেতু আছে সড়ক নেই। একপাশে লাফিয়ে নামতে হয়, আরেক পাশ দিয়ে উঠতে হয় সিঁড়ি বেয়ে। সেই সিঁড়িও তৈরি করেছেন স্থানীয় লোকজন বস্তায় মাটি ভরাট করে। কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নতুন সেতুটি এখন অচলাবস্থায় পড়ে আছে।
২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ১ কোটি ৫ লাখ ৭০ হাজার ৪১৬ টাকার সেই সেতুটি জনমানুষের তেমন কোনো কাজে আসছে না। এমনই এক সেতু নির্মাণ করা হয়েছে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের বলুহা গ্রামে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের উদ্যোগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ সেতু নির্মাণের টেন্ডার হয়। ময়মনসিংহের মেসার্স বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে ১ কোটি ৫ লাখ ৭০ হাজার ৪১৬ টাকার প্রাক্কলিক ব্যয়ে চুক্তিবদ্ধ হয়। উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের বলুহা-শিবপুর সড়কে এ সেতু নির্মাণ করা হয়।
২০২৩ সালের ২০ জুন এ কাজের অনুমোদন দেওয়া হয়। মেয়াদ ছিল ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। নির্মাণ কাজ শেষ হলেও রাস্তার দু’পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় পুরো সেতুর কার্যক্রমে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
শিবপুরের সোহেল রানা বলেন, সেতু তো ঝুলে আছে। কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। জনদুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন এলাকাবাসী।
রামগোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জুই আক্তার, আছমা আক্তার, তাসনুভা মেহেরিন জানায়, গত বর্ষা মৌসুমে তাদের নৌকা দিয়েই পারপার করতে হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই ব্রিজে ওঠা যায় না।
বলুহা গ্রামের তাইজুল ইসলাম বলেন, আমরা মাছ চাষ করি। রেণু আনা ও গাড়িতে মাছ ব্রিক্রি করতে চরম সমস্যা হচ্ছে।
শিবপুরের আলিম উদ্দিন বলেন, ব্রিজের কারণে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন অসুস্থ মানুষ। অ্যাম্বুলেন্সও আসে না, কোনো যানবাহন না থাকায় রোগী নিতে কষ্ট হয়।
একই গ্রামের ফয়েজ উদ্দিন বলেন, ব্রিজটির জন্য দুই গ্রামের মানুষ চরম কষ্ট করছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ইকবাল হাসান খান জানান, ৭১-এর রণাঙ্গনে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধ করার রণকৌশলের অংশ হিসেবে এ ব্রিজটি তখন উড়িয়ে দেওয়া হয়। ব্রিজটি ৭১-এর স্মৃতি বহন করে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ জানুয়ারি দ্রুত কাজ সম্পন্ন করার জন্য তাগিদ দিয়ে পত্র দেওয়া হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। সেই তাগিদপত্রে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে কাজ বিলম্বের জবাব দিতেও বলা হয়।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মোহাম্মদ আলাল উদ্দিন জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত কাজ করার জন্য তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম সাজ্জাদুল হাসান জানান, জনদুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত কাজ সম্পন্ন করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপরও কাজ শেষ না হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।