
প্রিন্ট: ০১ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:২০ পিএম
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধির বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে দুদক

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ১০:৪৯ পিএম

আরও পড়ুন
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কোটালীপাড়া-টুঙ্গিপাড়া আসনের প্রতিনিধি ও সাবেক সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও পিআইসির সভাপতির বিরুদ্ধে প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের দায়ে দুটি মামলাসহ ৭৮টি কাজের বিস্তারিত অনুসন্ধানের অনুমতি চেয়ে দুদক প্রধান কার্যালয়ে প্রতিবেদন দিয়েছে দুদক গোপালগঞ্জ টিম।
বৃহস্পতিবার দৈনিক যুগান্তরে ‘হাসিনার নির্বাচনি প্রতিনিধির দুর্নীতি’ শীর্ষক খরর প্রকাশের পর জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি টিম কোটালীপাড়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দের ৭৮টি প্রকল্পের প্রায় ১১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ বিষয়ে এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযান পরিচালনাকালে কোটালীপাড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তর থেকে প্রকল্পের তালিকা, পিআইসি কমিটি, রেজুলেশন, বিল প্রদান সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়।
পরিদর্শনকালে রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতাধীন গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা-কাবিটা) কর্মসূচির আওতায় (বিশেষ) ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে কোটালীপাড়ায় ৬৫টি প্রকল্পের বিপরীতে ১৫ কোটি ৭৯ লাখ ৮৭ হাজার টাকা ও ১৩টি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দকৃত ৪ কোটি ৬৫ লাখ ৮৩ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়।
গৃহীত ওই সব প্রকল্পের মধ্য থেকে দুদক টিম কয়েকটি প্রকল্পে এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনকালে সরেজমিনে পরিদর্শন করে দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রমাণ পায়।
উত্তর আটাশীবাড়ী কবরস্থানের মাঠ ভরাট প্রকল্প পরিদর্শন ও রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রকল্পের বরাদ্দ ২৬ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। শহীদ উল্লা খন্দকারের মসজিদের ইমাম মোহাম্মদ ইয়াহিয়াকে উক্ত প্রকল্পের পিআইসি কমিটির সভাপতি করে কাজটি করানো হয়।
সরেজমিন যাচাই করে দেখা যায়, উক্ত এলাকায় ওই নামে কোনো কবরস্থান নেই। যে ২৫.২৫ শতাংশ জমিতে মাটি ভরাট দেখানো হয়েছে তা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনি এলাকার প্রতিনিধি ও সাবেক সচিব শহীদ উল্লা খন্দকারের ভাই মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম খন্দকারের সাব কবলামূলে ক্রয় করা সম্পত্তি।এছাড়া স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আরও কিছু জমি স্থানীয়রা বিক্রি না করলেও জোর করে দখলের উদ্দেশে ভরাট করা হয়েছে। সম্প্রতি মারা যাওয়া কোনো ব্যক্তিকে ওই স্থানে কবর দেওয়া হয়নি।
অর্থাৎ জনগণের ট্যাক্সের কাবিটার টাকা দিয়ে সাধারণ জনগণের জন্য প্রকল্প গ্রহণ না করে তৎকালীন পিআইও রাশেদুর রহমান, পিআইসি কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি শহীদ উল্লা খন্দকার ও তার ভাই মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম খন্দকারসহ অন্যদের যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে কবরস্থান না হওয়া সত্ত্বেও কবরস্থান বলে ব্যক্তির জমিতে মাঠ ভরাটের নামে প্রকল্প গ্রহণ করে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে বর্ণিত অর্থ আত্মসাৎ করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়।
উত্তর আটাশীবাড়ী হেফজখানার সামনের মাঠ ভরাট প্রকল্প পরিদর্শনে গিয়ে দুদক টিম দেখতে পায় হেফজখানার মাঠ ভরাটের জন্য ২৬ লাখ ৪৯ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মোহাম্মদ ইয়াহিয়াকে ওই প্রকল্পের পিআইসি কমিটির সভাপতি করে কাজটি করা হয়। এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান পরিচালনা করে দেখতে পায় ওই নামে সেখানে কোনো হেফজখানা নেই। যে জমিতে বালু ভরাট করা হয়েছে তা হলো শহীদ উল্লা খন্দকারের পৈতৃক জমি। ক্ষমতার অপব্যবহার করে হেফজখানার নামে গায়েবি প্রকল্প দেখিয়ে পৈত্রিক জমিতে বালু ভরাট করে বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
এছাড়া দুদক টিম রামশীল ইউনিয়নের ডগলাস মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শন করে দেখতে পান ওই কাজের বরাদ্দ ৩৯ লাখ ১৬ হাজার টাকা। পিআইসির সভাপতি করা হয়েছে মোহাম্মদ ইয়াহিয়াকে। বিদ্যালয়ের মাঠের মধ্যে ব্যক্তি মালিকানার জমি রয়েছে। সামান্য কিছু বালু ভরাট করা বরাদ্দের প্রায় সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাৎ করা হয়।
নামসর্বস্ব কাজ করে গাবভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাটের জন্য বরাদ্দের ৪৯ লাখ ২৩ হাজার টাকা, শেখ হাসিনা আদর্শ সরকারি মহাবিদ্যালয়ের মাঠ ও পুকুরপাড় ভরাটের জন্য বরাদ্দ ১০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে- দুদক টিম এনফোর্সমেন্ট অভিযানে প্রমাণ পায়।
অপরদিকে এনফোর্সমেন্ট অভিযানে ৭৮টি প্রকল্পের বেশিরভাগ কাজের বিষয়ে অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পায় দুদক। তবে অভিযান পরিচালনাকালে বর্ণিত ৫টি প্রকল্পের প্রত্যেকটিতেই দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে নিশ্চিত করেন এনফোর্সমেন্ট টিমের লিডার দুদক গোপালগঞ্জের সহকারী পরিচালক বিজন কুমার রায়।
তিনি জানান, অন্যান্য প্রকল্পের কাজগুলো বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করে পরিমাপ গ্রহণের মাধ্যমে প্রকৃত কাজের পরিমাপ ও অর্থ আত্মসাতের পরিমাণ বের করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রকাশ্য অনুসন্ধানের অনুমতি দানের সুপারিশসহ এনফোর্সমেন্টের প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তসাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দুদক গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. সোহরাব হোসেন, উপসহকারী পরিচালক মো. আল আমিন হোসেন ও আফছার উদ্দিন এনফোর্সমেন্ট অভিযানে ছিলেন।