কেশবপুরে আদিবাসী ছাত্রীর মৃত্যু, খ্রিস্টান মিশনারি ঘেরাও

কেশবপুর(যশোর) প্রতিনিধি,
প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫, ০৩:৪৬ এএম
-67d9e99ad63df.jpg)
ছবি: সংগৃহীত
যশোরের কেশবপুরে খ্রিস্টান মিশনারিতে আবাসিক এক আদিবাসী ছাত্রীর লাশ পাওয়ার ঘটনায় মঙ্গলবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা খ্রিস্টান মিশনারি অফিস ঘেরাও করে। তাদের দাবি ওই মেয়েকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনার তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন তারা।
গত শুক্রবার রাতে রাজেরং ত্রিপুরাকে (১৫) ঘরের গ্রিলের সঙ্গে ওড়না দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় মিশনারির একটি আবাসিক কক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশ ও খ্রিস্টান মিশনারি সূত্রে জানা গেছে, কেশবপুর সাহাপাড়ায় খ্রিস্টান আউটরিস্ট সেন্ট্রাল ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ প্রকল্পের অধীনে ৪৪ জন আদিবাসী কিশোরীরা থাকেন। তারা সেখানে থেকে লেখাপড়া করেন। বান্দরবান জেলার থানচি থানার কালুপাড়া গ্রামের রমেশ ত্রিপুরার মেয়ে রাজেরং ত্রিপুরা (১৫) ওই প্রকল্পের অধীনে কেশবপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় নবম শ্রেণীতে লেখাপড়া করেন।
সন্ধ্যার পরে তার কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে মেট্রন জেসিকা সরকার ঘরের তালা খুলে ওই কিশোরীকে গ্রিলের সাথে ফাঁস দেয়া অবস্থায় দেখতে পান। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে সন্ধ্যা ৭ টা ৩৫মিনিটে কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নিয়ে গেলে সেখানে মেয়েটি মারা যায়।
এ ব্যাপারে কেশবপুর সাহাপাড়ায় খ্রিস্টান আউটরিস্ট সেন্ট্রাল ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ প্রকল্পের হোস্টেল সুপার প্রদীপ সরকার জানান, রাজেরং ত্রিপুরা তার বাড়ি থেকে এত দূরে এসে লেখাপড়া করতে চাইনি। পরিবারের লোক তাকে জোর করে পাঠানোর কারণে সে মানসিক অবসাদগ্রস্ত ছিল। সেই কষ্ট থেকেই সে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
এদিকে মিশনারিসের পক্ষ থেকে ওই মেয়েটির বাবাকে মৃত্যুর খবর না দেওয়ায় পরিবারের লোকজন খুব হতাশা ব্যক্ত করেছেন। গত সোমবার সন্ধ্যায় মেয়েটির বাবা রমেশ ত্রিপুরা, বিজয় ত্রিপুরা গোবিন্দ ত্রিপুরা আব্রাহাম ত্রিপুরা নেলসন ত্রিপুরা, হেমরা ত্রিপুরা কেশবপুর প্রেসক্লাবে এসে অভিযোগ করেন চার দিন আগে তাদের মেয়ে মারা যাওয়ার পরও তাদেরকে কোন খবর দেওয়া হয়নি। তাদের ধারণা মেয়েটিকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। তারা মেয়েটির লাশ পেতে চান এবং ওই এলাকার আরো তিন আদিবাসী মেয়েকে তারা ওই আবাসিক হোম থেকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান। এরপর তারা কেশবপুর থানায় গিয়ে তাদের অভিযোগ করেন।
এদিকে মৃত রাজেরং ত্রিপুরার বাবা রমেশ ত্রিপুরা কেশবপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে তিনি বলেন তার মেয়েকে নির্যাতন করে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে। সংস্থার পরিচালক খ্রিস্টপদ সরকারসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন। তিনি অভিযোগ করেন বান্দরবানের লামা থানার সত্য মানিক ত্রিপুরা ও হানিচরণ ত্রিপুরাকে টাকার লোভ দেখিয়ে তার মেয়েকে অভিভাবক হিসেবে সাজিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভাড়া করে আনা হয়। তারা প্রেসক্লাবে এসে অভিযোগ করেন তাদেরকে ওই মেয়েকে নেওয়ার জন্য সংস্থার পরিচালক খ্রিষ্টফার সরকার কেশবপুরে আসতে বলেন।
লাশ হস্তান্তর ও আদিবাসী মেয়ে রাজের রং ত্রিপুরার হত্যার বিচার দাবিতে মঙ্গলবার শহরের খ্রিস্টান মিশনারিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছেলেমেয়েরা সকাল সাড়ে নয়টা থেকে বিক্ষোভ শুরু করে। তারা ওই ছাত্রী হোস্টেলে ভিতরে ঢোকার দাবী জানাই এবং ওখানে থাকা ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলতে চাই। কিন্তু ওইখানে থাকা দায়িত্বশীলরা তাদেরকে সাড়ে নটা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ঢুকতে না দেওয়ায় ছাত্রছাত্রীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। কেউ কেউ প্রাচীর টপকে ভিতরে ঢুকে মূল গেট খুলে দিলে ছাত্র-ছাত্রীরা ভিতরে ঢুকে বিক্ষোভ দেখায় তারা দাবি করেন ছাত্রী নিবাসে থাকা ছাত্রীদের সাথে তারা কথা বলতে চান। তুমুল বিক্ষোভের মুখে থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। দেড় ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভের ঘটনা ঘটার পর পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
ছাত্রী হোস্টেলে থাকা রেবেকা ত্রিপুরা জোসিস্তা ত্রিপুরা, স্বস্তিকা ত্রিপুরাকে হস্তান্তর করার আশ্বাস দেয়া হয়। এ ব্যাপারে সার্কেল পুলিশ কর্মকর্তা ইমদাদুল হক বলেন, মেয়েটির বাবার দেওয়া অভিযোগ তারা পেয়েছেন। সেখানে নির্যাতন, হত্যা এমনকি যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ও করা হয়েছে। মেয়েটির লাশ ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসলে এ ধরনের উপাদান থাকলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, ভুল বোঝাবুঝি থেকে খ্রিস্টান মিশনারিতে ছাত্র-ছাত্রীরা ঢুকে পড়েছিল। পরবর্তীতে সকলকে বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়েছে। এখন পরিবেশ শান্ত রয়েছে।
খ্রিস্টান আউটরিস্ট সেন্ট্রাল ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ প্রকল্পের পরিচালক খ্রীষ্টফার সরকার বলেন, মেয়েটির বাড়ি দুর্গম এলাকায় সেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় তাদের সাথে যোগাযোগ করা যায়নি। পরবর্তীতে থানার মাধ্যমে ওয়ারলেস মেসেজ দিয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। মোটেই যোগাযোগ করা হয়নি এ অভিযোগ সত্য নয়। তিনি বলেন এখানে তারা এসেছেন সেবা করার জন্য। তিনি অভিযোগ করেন অকারণেই তাদের চার্চ এর ওপরে হামলা ও ছাত্রীনিবাসে হামলা হয়েছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান তিনি।