ছাত্রলীগ থেকে সমন্বয়ক
পরীক্ষায় ফেল করায় ইনস্টিটিউট ইনচার্জকে মামলার হুমকি

পিরোজপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫, ০২:০০ এএম
-67d9d0d9bfdf1.jpg)
ছবি: সংগৃহীত
নার্সিং পরীক্ষায় ফেল করায় পিরোজপুর নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইনচার্জের বিরুদ্ধে মামলার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ থেকে ভোলপাল্টে সমন্বয়ক হওয়া মিজান নামের এক ছাত্রের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত মিজান সিরাজগঞ্জের তারাস উপজেলার আবু তালেবের ছেলে এবং পিরোজপুর নার্সিং ইন্সটিটিউটের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
১১ মার্চ বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের অধীনে অনুষ্ঠিত পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে এক বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়ার পর থেকে ইনচার্জের বিরুদ্ধে মামলার হুমকিসহ অত্র ইন্সটিটিউটের অনেক ইনস্ট্রাক্টরকে বিভিন্নভাবে হয়রানীর অভিযোগ উঠে ওই ছাত্রের বিরুদ্ধে।
হুমকির কথা স্বীকার করেছেন পিরোজপুর নার্সিং ইনস্টিটিউটের হয়রানীর স্বীকার হওয়া নার্সিং ইনস্ট্রাক্টর ইনচার্জ বেবী রায়। বেবী রায় বলেন, মিজান ৫ আগস্টের পূর্বে এই প্রতিষ্ঠানে আওয়ামীলীগের প্রভাব খাটিয়ে চলেছে। এখনো প্রভাব খাটাচ্ছে। কোন এক অদৃশ্য হাত তার পিছনে কাজ করছে। পরীক্ষার আগে মিজান দলবলসহ এসে পরীক্ষার হল ছেড়ে দেওয়াসহ পাশ করাতে হুমকি দেন। পরে পরীক্ষায় ফেল করলে আমার নামে মিথ্যাচার ও আমাকে মামলাসহ বিভিন্ন রকম হুমকি দিচ্ছে। আমরা এর বিচার চাই।
নার্সিং ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের অধীনে গত নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল গত মঙ্গলবার (১১ মার্চ) প্রকাশিত হয়। তাতে তিনি (মিজান) এক বিষয়ে অকৃতকার্য হন। পরে তিনি প্রভাবশালী নার্স নেতা, কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের দিয়ে নার্সিং ইনস্টিটিউটের কর্তৃপক্ষকে ফোন দিয়ে পাশ করানোর জন্য চাপ দিতে থাকেন। তাতেও কাজ না হলে প্রতিষ্ঠানের ইনস্ট্রাক্টর ইনচার্জ বেবী রায়ের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকিও দেন।
নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইনস্ট্রাক্টর প্রভা রানী বড়াল বলেন, মিজানুর রহমান আমাদের নার্সিং ইনস্টিটিউটের একজন শিক্ষার্থী, গত ১১ মার্চ বিএনএমসির রেজাল্ট দেয়ার পর থেকে সে বিভিন্নভাবে সমন্বয়ক ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মী দিয়ে ফোন দিয়ে আমাদের পাশ করানোর ব্যাপারে হুমকি দেয়। সে যে বিষয়ে ফেল করেছে সে বিষয়ে আমাদের কোন টিচার পরীক্ষা নেয়নি। সাধারণত ঐ বিষয়ে বাহির থেকে টিচার নিয়োগ দেয়া হয়। আমরা টিচার হিসেবে কখনওই কোনো শিক্ষার্থী ফেল করুক সেটা চাই না।
নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইনস্ট্রাক্টর সাজেদা খানম বলেন, মিজান আমাদের অত্র ইনস্টিটিউটে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই ক্লাসে খুব অমনোযোগী ছিল। সে প্রথম বছরে ১ বিষয়ে ফেল করে। তখন বিষয়টি নিয়ে তেমন কোন ঝামেলা না করলেও এবারে ফেল করে সে বিভিন্নভাবে আমাদের হয়রানী করছে। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা সকল ইনস্ট্রাক্টরসহ সকল শিক্ষার্থীরা বিব্রতবোধ করছি। ফেল, পাশ পরীক্ষার একটি অংশ সে আবার কিছুদিন পরে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। কিন্তু তার এই উগ্রতাপূর্ণ এমন আচরণে আমরা খুবই কষ্ট পেয়েছি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, মিজান সব সময় সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিমের প্রভাব দেখাতো। সে আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিতো। গত ৫ আগস্টের পর হঠাৎ তিনি সমন্বয়ক বনে যান। তিনি পরীক্ষায় ফেল করে আমাদের ইনস্ট্রাক্টরদের বিভিন্নভাবে হয়রানী করছেন। পড়া লেখায় পাশ ফেল তো থাকবেই এটা কেন মানতে পারবে না, এখানে কেন প্রভাব দেখাতে হবে। অবিলম্বে তাকে এই প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কার করা উচিত এবং তার ছাত্রত্ব বাতিল করা উচিত।
অভিযোগ অস্বীকার করে মিজানুর রহমান বলেন, তারা আমার শিক্ষক। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা তো দূরের কথা কোন খারাপ কথাও আমি বলিনি। তিনি এর চেয়ে বেশি কিছু ফোনে বলবেন না বলে কল কেটে দেন।