ট্রলার মালিক হিসেবে সিদ্ধিরগঞ্জে বাসাভাড়া নেয় আরসা সদস্যরা

সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৫, ১১:০৫ পিএম

ট্রলার মালিক হিসেবে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের নাসিক ৪নং ওয়ার্ডের ভূমিপল্লি এলাকায় ‘ভূমিপল্লি টাওয়ার’ নামে বহুতল (১০ তলা) একটি ভবনের ৩য় ও ৮ম তলায় ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া নেন মিয়ানমারের আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (এআরএসএ) প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনী ওরফে আতাউল্লাহ (৪৮)।
ভাড়া বাসায় ওঠার সময় তাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৯ জন বলে জানিয়েছে ফ্লাটের কেয়ার টেকারকে। সেই থেকেই এ ফ্লাটে তাদের বসবাস। এর আগে গত নভেম্বর মাসে একই ভবনের তৃতীয় তলায় জনৈক কবির হোসেনের ফ্লাট বাসা ভাড়া নেয় আরসা প্রধানসহ সহযোগীরা।
সেই সময় কবির হোসেনকে পরিচয় দিয়েছিল তারা ট্রলারের ব্যবসায়ী। অসুস্থ বিধায় তারা ডাক্তার দেখাতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার কাছে এসে বাসা ভাড়া নিতে ইচ্ছুক। কিন্তু তিনতলার ওই ফ্লাট বাসা ছোট বিধায় ৮ তলার এ ফ্ল্যাট ভাড়া নেন ২০ হাজার টাকায়।
আব্দুল হালিম সরকারসহ ১৮ জন সিদ্ধিরগঞ্জের ভূমিপল্লি এলাকার ওই ১০ তলা ভবনটি নির্মাণ করেন। যার আটতলার দুইটি আব্দুল ফ্ল্যাটের মালিক আব্দুল হালিম সরকার। আব্দুল হালিম সরকার ইতালি প্রবাসী। তিনি তার বেয়াইট খোরশেদকে এ ফ্লাট দুইটির ভাড়া দেওয়া এবং ভাড়া উঠানোর দায়িত্ব দেন। তাদের গতিবিধি সন্দেহ করার মতো কেউ কখনো পায়নি এলাকাবাসী।
নামাজের সময় আরসা প্রধান মসজিদেই নামাজ পড়তে যেতেন। তাছাড়া তারা শুধু নিত্যপণ্য ক্রয় করা এবং বাসার আবর্জনা ফেলতে বাসার বাইরে আসতো তাদের কোনো না কোনো সদস্য। এছাড়া তারা এলাকার আর কারো সঙ্গে তেমন একটা যোগাযোগ করতো না।
র্যাব-১১ সদস্যরা তাদের গ্রেফতার করার পর সন্ত্রাস আইন ও অবৈধ অনুপ্রবেশ মামলায় প্রতিটির ১০ দিন রিমান্ড চেয়ে আদালতে প্রেরণ করে। আদালত দুই মামলায় তাদেরকে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
সোমবার দিবাগত রাতে সিদ্ধিরগঞ্জের ভূমিপল্লি আবাসিক এলাকার ভূমিপল্লি টাওয়ার থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- মায়ানমারের আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনী ওরফে আতাউল্লাহ (৪৮), মোস্তাক আহাম্মদ (৬৬), সলিমুল্লাহ (২৭), মোসা. আসমাউল হোসনা (২৩), হাসান (১৫) ও মনিরুজ্জামান (২৪)।
এদিকে র্যাব-১১ এর আরেকটা টিম ময়মনসিংহের সদর থানাধীন নতুন বাজার মোড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (এআরএসএ) আরও ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে। তবে তাদের নাম পাওয়া যায়নি। এদের মধ্যে মনিরুজ্জামান (২৪) বাংলাদেশের নাগরিক বলে র্যাবের দায়ের করা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। তার বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ থানার চরআলগী এলাকায়। মনিরুজ্জামানের পিতার নাম আতিকুল ইসলাম ও মাতার নাম মার্জিয়া আক্তার চম্পা।
এ সময় তাদের কাছে নগদ ২১ লাখ ৩৯ হাজার ১শ টাকা, একটি ধারালো চাকু ও একটি স্টিলের ধারালো চেইন (ধারালো দাতবযুক্ত ও দুই পাশে হাতলবিশিষ্ট) উদ্ধার করা হয়েছে।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, আরাকান রোহিঙ্গা বিদ্রোহী স্যালভেশনের (এআরএসএ) গ্রেফতারকৃত সদস্যরা নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহে নাশকতা ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার উদ্দেশ্যে গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছিল। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাদেরকে গ্রেফতার করে র্যাব। এসময় তাদের কাছ থেকে নগদ টাকা, ধারালো চাকু ও চেইন উদ্ধার করা হয়।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শাহিনূর আলম জানান, র্যাব-১১ সদস্যরা গ্রেফতারকৃতদের সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করলে তাদের আদালতে প্রেরণ করা হয় অবৈধ অনুপ্রবেশ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘটনায় দুইটি মামলায়। দুই মামলায় ১০ দিন করে রিমান্ড চাওয়া হয়।
আদালতের পুলিশ পরিদর্শক কাইউম খানও জানান, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাঈনুদ্দিন কাদিরের আদালত দুই মামলায় ৫ দিন করে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
ভূমিপল্লি টাওয়ারের তৃতীয় তলার মালিক কবির হোসেন জানান, গত নভেম্বর মাসে তার কাছ থেকে বাসা ভাড়া নেয় আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনী ওরফে আতাউল্লাহ। এ সময় তার সঙ্গে দুজন ব্যক্তি ছিলেন যারা নিজেদেরকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়েছিলেন। অপর আরেক ব্যক্তি ছিলেন যিনি নিজেকে একটি সংস্থার সদস্য হিসাবে পরিচয় দিয়েছিলেন।
আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনী ওরফে আতাউল্লাহ নিজেকে ট্রলার ব্যবসায়ী এবং নিজের শারীরিক অসুস্থতার কথা উল্লেখ করেন কবির হোসেনের কাছে। সেই কারণে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার পাশে এখানে ভাড়া থাকতে চান ঢাকায় গিয়ে সহজে চিকিৎসা করানোর জন্য। সরল বিশ্বাসে তখন তিনি তাদের ভাড়া দেন বলে উল্লেখ করেন।
এ ভবনের কেয়ারটেকার ইমরান জানান, মাঝে মধ্যে তাদের বাজারসহ নিত্যপণ্য ক্রয় করে বাসায় প্রবেশ করতে দেখতাম। একইভাবে বাসার ময়লা-আবর্জনা ফেলতে মাঝে মধ্যে বের হতেন। আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনী ওরফে আতাউল্লাহ ও আরও দুইজনকে তারা নামাজ পড়তে মসজিদে যেতে দেখতেন। তবে তাদের সাথে তেমন কথা হতো না।
পাশের ছায়া ভবন নামের ভবনের কেয়ারটেকার আবুল কালাম জানান, আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনী ওরফে আতাউল্লাহর সঙ্গে আমি নামাজ পড়তে মসজিদে যেতাম-আসতাম। আমাগো লগে থাইক্কা গেল কিন্তু আমরাই কইতে পারলাম না তারা এত বড় কিছু।