Logo
Logo
×

সারাদেশ

লক্ষ্মীপুরে ৮৪ হাজার টন সয়াবিন উৎপাদনের সম্ভাবনা

Icon

রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৫, ১১:২০ এএম

লক্ষ্মীপুরে ৮৪ হাজার টন সয়াবিন উৎপাদনের সম্ভাবনা

মেঘনার উপকূলে বিশাল চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ। যেদিকে চোখ যায়, শুধু সয়াবিন আর সয়াবিন। মৃদু হাওয়ায় দোল খাচ্ছে সয়াবিনের সবুজের পাতা। কৃষকেরা ব্যস্ত খেত পরিচর্যায়। অনুকূল আবহাওয়া থাকলে চলতি মৌসুমে সয়াবিনের ফলন ভালো হবে বলে আশা কৃষকদের।

চলতি মৌসুমে জেলাটির ৪৩ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে সয়াবিন আবাদ হয়েছে। এখান থেকে ৮৪ হাজার টন সয়াবিন উৎপাদনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। যার বাজার মূল্য হবে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার মতো।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, দেশে মোট উৎপাদিত সয়াবিনের ৮০ শতাংশই পাওয়া যায় লক্ষ্মীপুর জেলার চার উপজেলা থেকে। আমন মৌসুম শেষে সয়াবিনের আবাদ করা হয়। চলতি মৌসুমের সয়াবিনের ফসল আগামী মে মাসের মাঝামাঝিতে তোলা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে সয়াবিন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে আরও ১ হাজার ৬৬০ হেক্টর বেশি জমিতে সয়াবিনের আবাদ করা হয়েছে।

সোমবার লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের চর কাছিয়া ও চরলক্ষ্মী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ইউনিয়নটির প্রায় ৯০ শতাংশ কৃষক করেছেন সয়াবিনের আবাদ। সেখানে কাজ করছে কৃষকেরা। বিস্তৃর্ণ চর জুড়ে শুধু সবুজ আর সবুজ।

রায়পুরের মেঘনা উপকূলীয় বিশাল চরাঞ্চলে জেগে ওঠা উত্তর চরবংশী, দক্ষিণ চরবংশী, উত্তর চর আবাবিল ও দক্ষিন চরআবাবিল ইউনিয়নে সয়াবিন চাষ হয়। বিশেষ করে চরইন্দুরিয়া, চরজালিয়া, চরঘাসিয়া, চরকাছিয়া, চরলক্ষ্মী ও কানিবগার চর এলাকায় কয়েক হাজার একর জমিতে সয়াবিনের চাষ হচ্ছে। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ, হাজীপাড়সহ আটটি ইউনিয়নে চাষ হয় সয়াবিনের। রামগতি ও কমলনগর উপজেলায়ও অনেক এলাকায় সয়াবিনের আবাদ করা হচ্ছে।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এ অঞ্চলের উর্বর মাটি সয়াবিন চাষের জন্য উপযোগী। এখানকার মাটি দোআঁশ জাতীয়। এ মাটিতে একবার লাঙল চালালেই তা সয়াবিন চাষের উপযোগী হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে প্রতিবছর ফলন লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে যায়। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত আবাদের উপযুক্ত সময়। সয়াবিন খেতে খুব একটা সার দিতে হয় না। থেতে নিড়ানি দিয়ে আগাছাও পরিষ্কার করা লাগে না। গাছ বড় হলে এক-দুবার কীটনাশক দিতে হয়। চারা গজানোর ১৩০ দিনের মধ্যে ফসল ঘরে চলে আসে।

কৃষকেরা জানান, সয়াবিন আবাদে খরচ কম। রোগ ও পোকার আক্রমণও কম হয়। চাষাবাদের পদ্ধতি সহজ। বিক্রি করলে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায় ধানের চেয়েও বেশি। যে কারণে সয়াবিন চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে।

রায়পুরের চর কাছিয়ার কৃষক সলেমান খান চলতি বছর প্রায় দুই একর জমিতে সয়াবিনের চাষ করেছেন। গত বছর করেছিলেন দেড় একর জমিতে। এ কৃষক বলেন, ‘ফসল ঘরে আনা পর্যন্ত খরচ হবে ৩৫ হাজার টাকার মতো। উৎপাদন স্বাভাবিক হলে ৭০ মণ সয়াবিন পাওয়া যাবে। প্রতি মণ এক হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি করলেও প্রায় ৫০ হাজারেরও বেশি টাকা লাভ থাকবে।’

রায়পুর উপজেলার দক্ষিন চরবংশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সালেহ মিন্টু ফরায়েজি বলেন, ‘কম পুঁজিতে লাভ বেশি হওয়ায় চরাঞ্চলে সয়াবিনের চাষ দিন দিন বাড়ছে। কৃষকদেরও সয়াবিন চাষের মধ্য দিয়ে ভাগ্য বদল হচ্ছে।’

রায়পুরের হায়দরগঞ্জ বাজারের চেহারা গত ২৫ বছরে অনেকটাই বদলে গেছে কেবল সয়াবিনের কারণে। ছোট বাজারটির ৪৫ থেকে ৫০টি আড়তে এখন পাইকারিভাবে সয়াবিন বিক্রি হয়।

বাজারের সয়াবিন ব্যবসায়ী ইউসুফ হোসেন বলেন, ‘দেশে উৎপাদিত সয়াবিনের ৭০ শতাংশের বেচাকেনা হয় এ বাজারে। বাজারেই গড়ে উঠেছে সয়াবিনের ১২টি চাতাল। পার্শ্ববর্তী বেড়িবাঁধের পাশে খাসের হাট ও মোল্লার হাট বাজারেও আছে সয়াবিনের ২২টি আড়ত। বিশেষ করে এপ্রিল ও মে মাসে ক্রেতাদের আগমন বেড়ে যায় বাজারগুলোতে।’

লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সোহেল মো. শামসুদ্দীন ফিরোজ বলেন, প্রতিবছরই জেলাটিতে সয়াবিনের আবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এ অঞ্চলের মাটি সয়াবিন চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এরই মধ্যে লক্ষ্মীপুর সয়াল্যান্ড হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লক্ষ্মীপুরে এবার সয়াবিনের বাম্পার ফলন হবে। ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না এলে কৃষকদের প্রত্যাশা পূরণ হবে। কাঙ্ক্ষিত ফলন পেতে কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম