টমটম চালককে কুপিয়ে হত্যা, ৮ ঘণ্টায় গ্রেফতার ৪

কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২৫, ০৯:৫৯ পিএম
-67d846fe719b8.jpg)
কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলী এলাকায় পূর্ব বিরোধের জেরে মুজিবুর রহমান (৩৭) নামে এক টমটম চালককে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনার ৮ ঘণ্টার মধ্যে যৌথবাহিনীর অভিযানে তিন সহোদরসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এ সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিসহ বেশকিছু আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
সোমবার বিকালে কক্সবাজার র্যাব কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, হত্যার পরপরই আমরা জড়িতদের শনাক্ত করে অভিযান চালাই। ৮ ঘণ্টার মধ্যে মূলহোতা শাওনসহ ৪ জনকে গেফতার করতে সক্ষম হয়েছি।
গ্রেফতাররা হলেন- মোস্তফা প্রকাশ শাওন (২২), আনোয়ার হোসেন (৩৩), ইমরান হোসেন (১৯), মো. করিম (২৮)।
অন্যদিকে নিহত মুজিবুর রহমান কক্সবাজার পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের হালিমা পাড়ার বাসিন্দা মৃত আবদুল জলিলের ছেলে।
র্যাবের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রথমে কক্সবাজারের লাইটহাউস পাড়া থেকে আনোয়ারকে দেশিয় বন্দুক ও ৭ রাউন্ড গুলিসহ গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর থেকে শাওন ও তার ভাই ইমরানকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরাসহ বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
এছাড়া, কক্সবাজার শহরের কুতুবদিয়া পাড়া থেকে তাদের সহযোগী করিমকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকেও একটি দেশিয় বন্দুক উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব জানায়, আসামিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভোর রাতে কক্সবাজার শহরের তারবনিয়ারছড়া এলাকায় সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের গোপন আস্তানায় অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে নয়টি লম্বা কিরিচ ও চারটি ছোরা উদ্ধার করা হয়েছে। তবে অভিযানের খবর পেয়ে সন্ত্রাসী সাদ্দাম হোসেন পালিয়ে যায়।
র্যাব আরও জানায়, গ্রেফতাররা পেশায় ইজিবাইক চালক হলেও প্রকৃতপক্ষে তারা সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা কক্সবাজারে দীর্ঘদিন ধরে ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও অপহরণের সঙ্গে জড়িত। শাওনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর থানায় ৩টি ডাকাতি ও একটি অস্ত্র মামলা রয়েছে। আনোয়ারের বিরুদ্ধে রয়েছে দস্যু মামলা।
স্থানীয়রা জানান, একটি ইজিবাইক সংক্রান্ত বিরোধ থেকে ঘটনার সূত্রপাত হয়। কিছুদিন আগে আনোয়ার কিস্তিতে একটি ইজিবাইক কেনেন, যা পরে চুরি হয়ে যায়। মুজিবুর ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে সেটি চোর চক্রের কাছ থেকে উদ্ধার করে আনোয়ারের কাছে হস্তান্তর করেন। তবে আনোয়ার দাবিকৃত টাকা পরিশোধ না করলে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়।
রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পাহাড়তলী নতুন বাজার এলাকার ইয়াসিন আরাফাতের টমটম গ্যারেজে মুজিবুর অবস্থান করছিলেন। এ সময় আনোয়ার ও তার দুই ভাই শাওন ও ইমরানসহ কয়েকজন অতর্কিত হামলা চালায়।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, মুজিব এক চালকের সঙ্গে কথা বলছিলেন। হঠাৎ ৩ থেকে ৪ যুবক এসে তাকে মারধর শুরু করে। তাদের হাতে ছুরি ও আগ্নেয়াস্ত্র দেখা যায়। মুজিবকে গ্যারেজের বাইরে টেনে নিয়ে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী দেলোয়ার নামের এক অটোচালক বলেন, কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা মুজিবকে মারতে শুরু করে। একপর্যায়ে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।
স্থানীয় সেলিম বলেন, হামলাকারীদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখেছি। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা মুজিবকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ হত্যাকাণ্ডের পরপরই এলাকাজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষুব্ধ জনতা হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এ সময় তারা তিনটি বুলেট উদ্ধার করে।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি ইলিয়াস খান বলেন, এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী সেলিনা আক্তার বাদী হয়ে ৫ জনের নামে মামলা করেছেন। পুলিশের অভিযানে একজন এবং র্যাবের অভিযানে ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।