সড়ক দুর্ঘটনা প্রাণ হারালেন বাবা-ছেলে
শিশুটি লড়তেই পারেনি, লড়েও পারেননি বাবা

ভাঙ্গুড়া (পাবনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৫, ০১:৫৪ এএম

সংগৃহীত ছবি
সন্তানের নিথর দেহ ফেলে রেখে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছিলেন বাবা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনিও হার মানলেন। পাবনার ভাঙ্গুড়ায় ট্রাকচাপায় পিষ্ট হয়ে জুনায়েদ আহমেদ (৪) নামের এক শিশুর মৃত্যুর পর তার বাবা সুলাইমান খাঁও (৩৫) মারা গেছেন।
শনিবার বিকালে উপজেলার দিলপাশার ইউনিয়নের পাটুল বাজারে ঘটে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। বিকেল পাঁচটার দিকে ছোট্ট জুনায়েদ ট্রাকের চাকার নিচে পড়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায়। গুরুতর আহত বাবা সুলাইমানকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও শেষরক্ষা হয়নি। ঢাকায় নেওয়ার পথে তিনিও পাড়ি দেন না ফেরার দেশে।
জানা যায়, সকালবেলা ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেলে শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিলেন সুলাইমান। সেখানে সবার সঙ্গে সময় কাটিয়ে বিকেল চারটার দিকে গ্রামের বাড়ি পাথরঘাটায় ফিরছিলেন বাবা-ছেলে। কিন্তু কে জানত, এটাই হবে তাদের শেষ পথযাত্রা। পাটুল বাজারে পৌছালে ভাঙ্গুড়া থেকে চন্ডিপুরগামী একটি ট্রাক আচমকা ধাক্কা দেয় তাদের মোটরসাইকেলে। ছিটকে পড়ে ছোট্ট জুনায়েদ। চাকায় পিষ্ট হয়ে মুহূর্তেই নিষ্প্রাণ হয়ে যায় ছোট্ট দেহ। আর্তনাদ করতে করতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আহত বাবা সুলাইমান।
স্থানীয়রা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। কিন্তু সেখানে চিকিৎসকেরা বুঝতে পারেন, তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। দ্রুত পাঠানো হয় ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে। কিন্তু পথিমধ্যেই, টাঙ্গাইলে পৌঁছানোর আগেই নিভে যায় আরেকটি প্রাণ।
সুলাইমান ছিলেন একজন এনজিও কর্মী। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো গ্রামে। শিশুপুত্রকে হারানোর পরও বেঁচে ছিলেন তিনি। কিন্তু বাঁচার সেই সুযোগও পেলেন না।
সুলাইমানের চাচাতো ভাই রমজান আলী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘কী হয়ে গেল। মোটরসাইকেল চালিয়ে ফিরছিল। ও জানতোও না এই ফেরা হবে চিরবিদায়ের ফেরা।’
ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ট্রাকটি আটক করা হলেও চালক ও হেলপার পালিয়ে গেছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।