কুমিল্লার আদালতে ব্যতিক্রমী রায়
মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে মিলিয়ে দেনমোহর পাবেন নারী

কুমিল্লা ব্যুরো
প্রকাশ: ০৬ মার্চ ২০২৫, ১০:৫৯ পিএম

কুমিল্লায় পারিবারিক আদালতে একটি যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন বিচারক। মুদ্রাস্ফীতির তারতম্যের সঙ্গে মিলিয়ে বাদী দেনমোহর পাবেন মর্মে রায় দেওয়া হয়। ফলে দেশে এই প্রথম দেনমোহর নিয়ে এমন ব্যতিক্রমধর্মী রায় হলো বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
বৃহস্পতিবার কুমিল্লার পারিবারিক আদালতের বিচারক শেখ সাদী রহমান এ রায় ঘোষণা করেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. আজাদ হোসেন বলেন, রায়ে উল্লেখ করা হয়, বাদী ও বিবাদীর বিয়ে হয়েছিল ২০২২ সালে। এখন ২০২৫ সাল; প্রতি বছর মুদ্রাস্ফীতির কারণে টাকার মানের তারতম্য ঘটে যা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে স্পষ্ট। এমতাবস্থায় দেওয়ানি কার্যবিধি আইনের ১৫১ ধারা প্রয়োগ করে মুদ্রাস্ফীতির তারতম্য অনুসারে বাদীর দেনমোহরের প্রকৃত মূল্য ২ লাখ ৬২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হলো এবং বাদী ওই টাকা পাওয়ার হকদার।
এছাড়া আরও উল্লেখ করা হয়, বাদীর প্রার্থিতা মতে ছয় মাসের খোরপোষ ভরণপোষণ বাবদ ৪২ হাজার টাকা এবং তিন মাসের ইদ্দতকালীন বাবদ ২১ হাজার টাকা হকদার।
সিনিয়র সহকারী জজ ও পারিবারিক জজ আদালতের বিচারক শেখ সাদী রহমান রায়ে আরও উল্লেখ করেন, ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে আদালতে নির্দিষ্ট টাকা পরিশোধ করতে হবে।
নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-১ এর সরকারি কৌঁসুলি বদিউল আলম সুজন বলেন, অবহেলিত নারী সমাজের জন্য যুগান্তকারী রায় বলে মনে করছি। কারণ আমাদের মুসলিম রীতিতে বিবাহ বিচ্ছেদের পর দেন মোহর নিয়ে নারীদের অনেক বঞ্চনা ও অবহেলার শিকার হতে হয়; কিন্তু বিচারক বাস্তবতা উপলব্ধি করে যে রায় দিলেন তা অবশ্যই ব্যতিক্রম ও যুগান্তকারী।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের কুমিল্লা জেলার আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মনির হোসেন পাটোয়ারী বলেন, এ রায়ের মধ্য দিয়ে সচেতনতা তৈরি হবে যেন কেউ নারীদের পাওনা দেনমোহর নিয়ে কোনো ধরনের অবহেলা করতে না পারে। বরং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দেনমোহর পরিশোধের সচেতনতা তৈরি হবে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালে কুমিল্লার চান্দিনার দেলোয়ার হোসেনের কন্যা সুমাইয়ার সঙ্গে একই এলাকার বিল্লাল হোসেনের ছেলে ইব্রাহিম খলিলের ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেনমোহরে বিয়ে হয়। এর মধ্যে ৫০ হাজার টাকা উসুল দেখিয়ে ২ লাখ টাকা বাকি রাখা হয়। পরবর্তীতে ইব্রাহিম সুমাইয়াকে তালাক দেয়। দেনমোহর ও ভরণপোষণের প্রার্থনা করে সুমাইয়া কুমিল্লা পারিবারিক আদালতে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার শুনানি শেষে আদালত বাদীর পক্ষে এ রায় ঘোষণা করেন।