Logo
Logo
×

সারাদেশ

নারী আইনজীবীর কাছে চাঁদা দাবি, ১১ মাস পর এসআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা

Icon

রাজবাড়ী প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬ মার্চ ২০২৫, ০৬:৩১ পিএম

নারী আইনজীবীর কাছে চাঁদা দাবি, ১১ মাস পর এসআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা

রাজবাড়ীতে প্রতারণার মামলায় গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়ে নন-জুডিশিয়াল ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রেখে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে পুলিশের এক এসআইসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে রাজবাড়ীর আদালতে মামলা দায়ের করেছেন এক নারী আইনজীবী।

ওই ঘটনার ১১ মাস পর মঙ্গলবার রাজবাড়ী সদর আমলি আদালতে মামলাটি করেন ভুক্তভোগী নারী আইনজীবী মুক্তা পারভীন। আদালত মামলাটি গ্রহণপূর্বক অনুসন্ধানের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার আসামিরা হলেন- রাজশাহী মহানগরের বোয়ালিয়া থানার সাবেক এসআই মো. মাহফুজুর রহমান, রাজশাহী মহানগরের চন্দ্রিমা থানার ছোট বনগ্রামের শেখ আব্দুল্লাহ, লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী থানার আদিতমারী গ্রামের বাসিন্দা ও রাজশাহী শাহমখদুম থানার শাহমখদুম এলাকার বাসিন্দা জাহিদ উল আলম, রাজশাহীর রাজপাড়া থানার চন্ডিপুর গ্রামের রোমান ইসলাম ও মো. ছালাম।

এর আগে ধর্ষণচেষ্টা, শ্লীলতাহানি ও ৩০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর গ্রহণের অভিযোগে মুক্ত পারভীন গত ১৩ জানুয়ারি রাজবাড়ীর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল আদালতে এসআই মাহফুজুর রহমানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার পর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) শেখ মফিজুর রহমান রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এফআইআর করার নির্দেশ দেন। পরে ১৭ জানুয়ারি মামলাটি সদর থানায় এফআইআর হিসেবে রেকর্ডভুক্ত হয়।

মঙ্গলবার আদালতে দায়েরকৃত মামলার অভিযোগে প্রকাশ, ২০২৪ সালের ১ এপ্রিল দুপুর আড়াইটার দিকে রাজবাড়ী জেলা পরিষদ ডাকবাংলোর সামনে ট্রাফিক আইল্যান্ডের নিকট অভিযুক্ত আসামি এসআই মাহফুজ একটি সৃজিত মামলায় ওই নারী আইনজীবীকে গ্রেফতার করেন। ওই দিন রাত ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার দিকে নারী আইনজীবীকে নিয়ে এসআই মাহফুজ রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় পৌঁছার পর একটি কক্ষে তাকে আটক রাখেন। তাকে আদালতে পাঠানো হলে রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এসআই মাহফুজ ২০২৪ সালের ১৬ এপ্রিল থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত রিমান্ডে এনে নারী আইনজীবীকে শারীরিক, মানসিক নির্যাতন করেন। সাধারণ লোক রিমান্ড কক্ষে উপস্থিত না থাকার আইনানুগ সুযোগ না থাকা সত্ত্বেও এসআই মাহফুজ অন্যায়ভাবে রিমান্ডে নিয়ে রিমান্ডের কক্ষে শেখ আব্দুল্লাহ, জাহিদ উল আলম, রোমান ইসলাম ও মো. ছালামকে রাখেন।

অভিযোগ রয়েছে- আইনজীবীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, শারীরিক, মানসিক নির্যাতন করে ভিডিওচিত্র, স্থিরচিত্র ধারণ করে। রিমান্ড চলাকালে থানা হাজতে আটকে রেখে এসআই মাহফুজসহ অন্যরা নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ১০০ টাকা মূল্যের তিনটি নন-জুডিশিয়াল সাদা স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিয়ে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। 

আইনজীবী মুক্তা পারভীন বুধবার রাতে মোবাইল ফোনে বলেন, ১৩ জানুয়ারি আদালতে মামলা দায়েরের পর ১৭ জানুয়ারি সদর থানায় রেকর্ডভুক্ত হয়। মামলা দায়েরের প্রায় দুই মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত কোনো আসামি গ্রেফতার হয়নি। আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। নানাভাবে আমাকে হয়রানি করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। 

মামলার অন্যতম আসামি বর্তমানে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা শাখায় ওয়ারি ডিভিশন শাখায় কর্মরত এসআই মাহফুজুর রহমান বলেন, মুক্তা পারভীন নিজে ম্যাজিস্ট্রেট, স্বামী তৌহিদুল ইসলাম শুভ ডিজিএফআইয়ের মেজর, শ্বশুর মোয়াজ্জেম হোসেন বিজিবির ব্রিগেডিয়ারসহ একেক সময় একেক পরিচয় দিয়ে রেলওয়ে, পুলিশ ও সেনাবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ৭০-৮০ জনের কাছ থেকে দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। তাদের বিরুদ্ধে রাজবাড়ী, সিলেট, রাজশাহী, ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতারণা ও রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় তিনটি প্রতারণা মামলা রয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা থাকাকালীন তাকে (মাহফুজ) টাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তিনি গ্রহণ না করে পাওনাদারদের সঙ্গে আপসের প্রস্তাব দেন। নারী আইনজীবী নিজ থেকে ব্যবহৃত ব্যক্তিগত গাড়িটি পাওনাদারকে দিয়ে মেটানোর চেষ্টা করেন। অথচ হয়রানি করতে তিনি নানাভাবে মিথ্যা অভিযোগ করে আসছেন। ভালো করে তদন্ত হলেই সত্য ঘটনা বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন। 

এ বিষয়ে রাজবাড়ী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খোন্দকার হাবিবুর রহমান বাচ্চু বৃহস্পতিবার  যুগান্তরকে বলেন, মঙ্গলবার মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামজিদ আহম্মেদ অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) রাজবাড়ী কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম