স্থাপত্যশৈলীর অপূর্ব নিদর্শন বরিশালের গুঠিয়া মসজিদ
প্রতিদিন দেখতে আসেন অগণিত পর্যটক

আকতার ফারুক শাহিন, বরিশাল
প্রকাশ: ০৬ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

মোগল আর আধুনিক স্থাপত্য শিল্পের মিশেলে অপূর্ব নির্মাণশৈলী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বরিশালের ‘বায়তুল আমান জামে মসজিদ’ এখন পর্যটকদের অন্যতম গন্তব্য। অবশ্য পোশাকি এই নামে মসজিদটি খুব একটা চেনেন না লোকজন। স্থানীয়দের কাছে এর পরিচিতি গুঠিয়া কিংবা সান্টুর মসজিদ নামে। মাত্র ১৮ বছর আগে তৈরি করা এই মসজিদ দেখতে এখন প্রতিদিনই ভিড় জমান শত শত মানুষ। শুধু ইসলাম ধর্মাবলম্বী নয়, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানসহ অন্যান্য ধর্মের মানুষও আসেন মসজিদের অপরূপ সৌন্দর্য আর নির্মাণশৈলী দেখতে।
বরিশাল নগরী থেকে ২১ কিলোমিটার দূরে উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের চাংগুরিয়া গ্রাম। নীরব-নিভৃত এই গ্রামে বরিশাল-বানারীপাড়া সড়কের পাশে গড়ে তোলা হয়েছে বায়তুল আমান মসজিদ। ১৪ একর জমির ওপর মসজিদটি নির্মাণ করেন স্থানীয় বাসিন্দা শিল্পপতি সরদার সরফুদ্দিন সান্টু। ২০০৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর শুরু হয়ে ২০০৬ সালে শেষ হয় এর নির্মাণ। ব্যয় হয় প্রায় ২০ কোটি টাকা। এটি তৈরিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সৌন্দর্য সামগ্রী আনা হয়। মসজিদের গায়ে থাকা রংবেরঙের পাথর থেকে শুরু করে টাইলস, ঝাড়বাতি, আলোকসজ্জার প্রায় সবটাই এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবের মক্কা-মদিনা থেকে।
বরিশাল নগরী থেকে সড়কপথে মাত্র ২৫-৩০ মিনিটের দূরত্বে থাকা এই মসজিদের প্রবেশপথেই চোখে পড়ে নানা রঙের পাথর আর টাইলস দিয়ে তৈরি সুউচ্চ তোরণ। সড়ক ছেড়ে হাতের ডানদিকে তোরণ অতিক্রম করে ভেতরে ঢুকলেই ডানে বিশাল পুকুর। চারপাশে ফল-ফুলের বাগান। পানিতে সাঁতার কাটছে রাজহাঁসের ঝাঁক। ঝকঝকে তকতকে টাইলসের সড়ক ধরে খানিকটা এগোলেই হাতের ডানে বিশাল আয়তনজুড়ে অনিন্দ্য সৌন্দর্যের বায়তুল আমান মসজিদ। যার মূল মিনার ১৯৩ ফুট উঁচু। মসজিদসংশ্লিষ্টদের বক্তব্য অনুযায়ী, এটি দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় সর্বোচ্চ মিনার। মসজিদের মূল কাঠামোতে রয়েছে ৯টি মিনার। এর মধ্যে ৮টি মিনারে থাকা ঝাড়বাতির আলো রাতের পরিবেশকে করে আরও মোহনীয়। পুরো মসজিদের ভেতর-বাইরে খচিত রয়েছে আরবি হরফের সুদৃশ্য ক্যালিগ্রাফি। সামনেই দুটি দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা। পুরো মসজিদ ও সংলগ্ন এলাকায় নানা রংয়ের আলো রাতের বেলা এক অপার্থিব পরিবেশের সৃষ্টি করে।
মসজিদের ইমাম হাফেজ মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, মসজিদ ঘিরে একটি মাদ্রাসা আর এতিমখানা রয়েছে। মূল ভবনে একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন ২ হাজারের মতো মুসল্লি। এছাড়া ঈদগাহ মাঠসহ মসজিদ প্রাঙ্গণে রয়েছে একসঙ্গে ২০ হাজার মানুষের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা।
কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, মসজিদের পাশেই রয়েছে মেহমানখানা। মসজিদ ও মাদ্রাসায় যারা কাজ করেন তাদের বেতন দেওয়াসহ যাবতীয় দেখভাল করেন প্রতিষ্ঠাতা সরদার সরফুদ্দিন সান্টু। মসজিদের ইমাম আরও জানান, এখানে ৩৫ থেকে ৪০ জন কর্মচারী আছেন।
পুরো মসজিদ কমপ্লেক্সটি ঘুরে দেখার সময় চোখে পড়ে বহু পর্যটক। নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ, সব বয়সের দর্শনার্থীরাই আছেন। এদের একজন যশোরের মনিরামপুরের বাসিন্দা আল আমিন তালুকদার বলেন, বরিশালে বেড়াতে এসেছি। যশোরে থাকতেই শুনেছি এই মসজিদের নাম। সুযোগ পেয়ে আজ দেখতে এসেছি। বরগুনার আয়লা-পাতাকাটা থেকে আসা সুশীল মিস্ত্রি বলেন, স্ত্রী, ছেলেমেয়ে নিয়ে দেখতে এসেছি মসজিদ। মূল ভবনের ভেতরেও ঢুকেছিলাম। কেউ বাধা দেয়নি। বরিশালে এত সুন্দর মসজিদ আছে সেটা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হয় না।
মসজিদের সামনে রাস্তার পাশে থাকা দোকানি ওমর মুন্সি বলেন, প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ আসেন মসজিদ দেখতে। তাদের আবার ফিরে যেতে হয়। এখানে একটি আবাসিক হোটেল কিংবা পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা থাকলে দূর-দূরান্ত থেকে আসা এসব মানুষের কষ্ট অনেক কম হতো।