Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন: বগুড়া-৭

জিয়ার জন্মভূমিতে এগিয়ে বিএনপি, জামায়াতও মাঠে

Icon

নাজমুল হুদা নাসিম, বগুড়া

প্রকাশ: ০৬ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জিয়ার জন্মভূমিতে এগিয়ে বিএনপি, জামায়াতও মাঠে

শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মভূমি বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দায়িত্বশীল নেতারা নির্বাচন করে থাকেন। তাই এ আসনটিকেও ভিআইপি আসন বলা হয়। যদিও খালেদা জিয়া সংসদে এ আসনের প্রতিনিধিত্ব করেননি। প্রতিবার উপনির্বাচন হয়েছে। স্বাধীনতার পর গত ১৫টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও উপনির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী ১০ বার, আওয়ামী লীগ দুবার, জাতীয় পার্টি দুবার এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী একবার নির্বাচিত হন। আগামী ডিসেম্বরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় এখন পর্যন্ত বিএনপি ও জামায়াত মাঠে রয়েছে। বিপুলসংখ্যক মামলা মাথায় নিয়ে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির অনেক নেতা আত্মগোপনে। অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এখনো সক্রিয় নন। জামায়াতের একক প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। সবাই চান খালেদা জিয়া বিগত নির্বাচনের মতো এবারও প্রার্থী হোন। তাই কোনো নেতা এখানে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে কিছু বলতে চান না। এরপরও কোনো কারণে তিনি প্রার্থী না হলে অন্তত দুজন সম্ভাব্য প্রার্থী বিএনপির টিকিট প্রত্যাশা করেন।

নির্বাচন অফিস ও অন্যান্য সূত্র জানায়, ১৯৭৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দেশে ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে উপনির্বাচনের কারণে ১৫ বার নির্বাচন হয়েছে। এ আসন থেকে খালেদা জিয়া পাঁচবারসহ বিএনপি প্রার্থী ১০ বার নির্বাচিত হন। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আমানউল্লাহ খান ও ১৯৭৯ সালে বিএনপির হাবিবুর রহমান এমপি নির্বাচিত হন। সীমানা পরিবর্তনের পর ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির আমিনুল ইসলাম সরকার পিন্টু নির্বাচিত হন। এরপর আসনটি বিএনপির হাতে চলে যায়। ২০০৯ সাল পর্যন্ত বিএনপির প্রার্থীরা এ আসনে বারবার নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপির খালেদা জিয়া নির্বাচিত হন। তিনি আসনটি ছেড়ে দিলে ওই বছরের সেপ্টেম্বরের উপনির্বাচনে তার উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু এমপি হন। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি ও ১৯৯৬ সালের জুনের দুটি নির্বাচনে খালেদা জিয়া প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। তিনি আসন ছেড়ে দিলে ১৯৯৬ সালের উপনির্বাচনে আবারও তার আস্থাভাজন হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের অক্টোবরের নির্বাচনে খালেদা জিয়া নির্বাচিত হন। তিনি আসনটি ছেড়ে দিলে ২০০১ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে লালু পুনরায় এমপি হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে খালেদা জিয়া এমপি হন। তিনি আবারও আসনটি ছেড়ে দিলে ২০০৯ সালের উপনির্বাচনে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে প্রার্থী করা হয়। তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। এরপর বিএনপি ও জামায়াত জোট নির্বাচন বর্জন করে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার তাদের শরিক জাতীয় পার্টিকে বগুড়া-৭ আসনটি উপহার দেয়। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির (এরশাদ) মুহাম্মদ আলতাফ আলী এমপি নির্বাচিত হন। পরে ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতের ভোটে বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম বাবলু এমপি হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। সবশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ডা. মোস্তফা আলম নান্নুকে প্রার্থী করা হয়। তিনি বিপুল ভোটে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন।

বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আসনটি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার। তিনি আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও প্রার্থী হবেন বলে সবাই প্রত্যাশা করেন। এরপরও খালেদা জিয়া বা তারেক রহমান প্রার্থী না হলে জিয়া পরিবারের সম্মতি সাপেক্ষে অন্তত দুজন প্রার্থী হতে চান। সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় কর্মকাণ্ডের বাইরেও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে মনোনিবেশ করেছেন। ইসলামী জলসা, ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, ফুটবল ম্যাচসহ বিভিন্ন খেলায় অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকছেন। এলাকার দুস্থদের সাধ্যমতো সাহায্য ও সহযোগিতা করছেন। পবিত্র রমজানে এলাকাবাসীকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। প্রকাশ্যে ও ইঙ্গিতে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে ভোট ও দোয়া চাইছেন। তাদের স্বজনরাও মাঠে নেমে পড়েছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলের হাইকমান্ড তথা লন্ডন প্রবাসী তারেক রহমানের দিকে চেয়ে আছেন। এ আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বিএনপি ও জামায়াত প্রার্থীর মধ্যে।

ভোটাররা বলছেন, গাবতলী-শাজাহানপুর আসনে আওয়ামী লীগ বা তার শরিক দলগুলোর তেমন ভোট নেই। বিএনপি ও জামায়াতের বিপুল ভোটার রয়েছে। খালেদা জিয়া বা তারেক রহমান প্রার্থী হলে অন্য কোনো দল বা স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ নেই।

সম্ভাব্য প্রার্থী যারা : খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু এবং জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও গাবতলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোরশেদ মিল্টন প্রার্থিতা প্রত্যাশা করেন। জামায়াতের একক প্রার্থী কেন্দ্রীয় জামায়াতে ইসলামীর মজলিশে শূরার সদস্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য গোলাম রব্বানী। সম্প্রতি জেলা জামায়াতের এক জরুরি কর্মপরিষদ সভায় কেন্দ্রীয় অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান তার নাম ঘোষণা করেন। এখন পর্যন্ত অন্য রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নাম শোনা যায়নি।

সম্ভাব্য প্রার্থীরা যা বলেন : বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু বলেন, বগুড়া-৭ আসনটি জিয়া পরিবারের। এখানে কে প্রার্থী হবেন বা না হবেন সেটা তাদের ওপর নির্ভর করে। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান প্রার্থী না হয়ে যদি নির্দেশ করেন তাহলে প্রার্থী হবো। তিনি জানান, তিনবার এমপি হয়ে এলাকার উন্নয়নে অনেক অবদান রেখেছেন। এলাকার জনগণের সঙ্গে আছেন এবং আজীবন তাদের সেবা করে যাবেন।

জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও গাবতলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোরশেদ মিল্টন বলেন, সবাই চাই খালেদা জিয়া, তারেক রহমান বা তাদের পরিবারের কেউ প্রার্থী হোন। তিনি জানান, ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন। গাবতলী উপজেলা চেয়ারম্যান, গাবতলী পৌরসভার মেয়রসহ দীর্ঘ ২২ বছর স্থানীয় সরকারে ছিলেন। বিগত সরকারের রোষানলে পড়ে ২২৩টি রাজনৈতিক মামলার আসামি হয়েছেন। এলাকার মাটি ও মানুষের সঙ্গে আছেন। জিয়া পরিবারের কেউ প্রার্থী না হলে এবং তাকে আদেশ করলে তিনি মনোনয়ন চাইবেন।

বগুড়া শহর জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক আ.স.ম. আবদুল মালেক বলেন, বগুড়া-৭ আসনে জামায়াতে ইসলামীর মজলিশে শূরার সদস্য গোলাম রব্বানী একক প্রার্থী।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম