তুচ্ছ কারণে শিশুকে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দিলেন মা, গাছে বেঁধে নির্যাতন বাবার

যুগান্তর প্রতিবেদন, আমতলী (বরগুনা)
প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২৫, ০৭:৫৩ পিএম

মাদ্রাসা থেকে পালানোয় শিশুকন্যাকে মা আসমা বেগম গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দিয়েছেন, বাবা কামরুজ্জামান সিকদার গাছের সঙ্গে বেঁধে বেধড়ক মারধর করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আহত শিশু লামিয়া (৯) এমন অভিযোগ করে। স্থানীয় দুই সাংবাদিক শিশুটিকে উদ্ধার করে তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে ছালমা শিশুটির চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন।
ঘটনা ঘটেছে তালতলী উপজেলার বড়বগী ইউনিয়নের সওদাগরপাড়া গ্রামে বুধবার বিকালে।
জানা গেছে, উপজেলার সওদাগরপাড়া গ্রামের কামরুজ্জামান সিকদারের শিশুকন্যা লামিয়া তালতলী শহরের আয়শা সিদ্দিকা মাদ্রাসায় চতুর্থ শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। বুধবার সকালে শিশু লামিয়া মাদ্রাসার শিক্ষকদের না বলে বাড়ি চলে যায়। ওই দিন দুপুরে শিক্ষকরা মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে যাওয়ার কথা তার বাবা কামরুজ্জামানকে জানান।
শিশুটির অভিযোগ, মা আসমা বেগম তাকে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দিয়েছেন, বাবা গাছের সঙ্গে বেঁধে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছেন। এতে শিশুটির শরীর ঝলসে গেছে এবং বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখম হয়েছে। শিশুকন্যার ডাকচিৎকারে স্থানীয় লোকজন ছুটে এসে রক্ষা করে। খবর পেয়ে দুই সাংবাদিক নাঈম ইসলাম ও শাইরাজ শিশুটিকে উদ্ধার করে তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন।
এদিকে তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে সালমা শিশুটির চিকিৎসাসহ লেখাপড়ার যাবতীয় দায়িত্ব নিয়েছেন। একইসঙ্গে তালতলী থানার ওসিকে বাবা ও মায়ের বিরুদ্ধে শিশু নির্যাতন দমন আইনে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, শিশুটিকে তার বাবা ও মা বেঁধে নির্যাতন করছে। আমরা রক্ষা না করতে তারা শিশুটিকে পিটিয়ে মেরেই ফেলত। এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছেন তারা।
সাংবাদিক নাঈম ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছি।
তিনি আরও বলেন, শিশুটির চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয়ভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার বহন করছেন।
শিশু লামিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার বাবা-মা আমাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করেছেন। মা গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দিয়েছেন।
মা আসমা বেগম বলেন, আমার স্বামী প্রায়ই মেয়েকে মারধর করে। আজকে মারধর শুরু করলে আমি ক্ষুব্ধ হয়ে খুন্তির ছ্যাঁকা দিয়েছি। এটা আমার অন্যায় হয়েছে। আমি বুঝতে পারিনি এমন অবস্থা হবে।
তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মনিরুল ইসলাম বলেন, শিশুটির শরীরের দুই স্থানে খুন্তির ছ্যাঁকার চিহৃ রয়েছে। তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
তালতলী থানার ওসি মো. শাহজালাল বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশ মতে এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে সালমা বলেন, শিশুটির চিকিৎসাসহ যাবতীয় খরচের দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শিশু নির্যাতন দমন আইনে শিশুটির বাবা ও মায়ের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে ওসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।