বগুড়ায় স্বামীর অর্থ-সম্পদ থেকে বঞ্চিত নারীর অভিযোগ

বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২৫, ১০:১৯ পিএম

বগুড়ার গাবতলী উপজেলার আটবাড়িয়া গ্রামের ইসরাত জাহান জেমি নামে এক নারীর স্বামী হৃদরোগে মারা যাওয়ার তিন মাসের মাথায় একমাত্র দেড় বছর বয়সের সন্তানও নিউমোনিয়ায় মারা যায়। স্বামী ও সন্তানের মৃত্যুর পর ওই নারীকে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে নির্যাতন করে বের করে দেয় স্বামীর পরিবার। স্বামীর অর্থ-সম্পদ থেকে বঞ্চিত করতে নানা চক্রান্ত করা হয়।
এ বিষয়ে প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ইসরাত জাহান জেমি।
লিখিত বক্তব্যে ইসরাত জাহান জেমি জানান, ২০২০ সালের আগস্ট গাবতলীর খুপি মন্ডলপাড়ার অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্য সাইদুর রহমান নান্নুর ছেলে ব্যবসায়ী আরিফুর রহমান সোহেলের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর স্বামী সোহেল হৃদরোগে অকালে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি দেড় বছর বয়সের একমাত্র সন্তান জেনানকে নিয়ে স্বামীর বাড়িতেই বসবাস করতে থাকেন।
তার স্বামী সোহেল তার বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মধ্যে তিনটিতে তাকে নমিনি করেন। দুটিতে দেবরকে নমিনি করা হয়। তার স্বামীর অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে দেওয়ার জন্য তাকে চাপ দিতে থাকেন শ্বশুর সাইদুর রহমান নান্নু। জেমি তাতে রাজি না হওয়ায় শ্বশুর এবং ননদসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার ওপর অত্যাচার করতে থাকেন। ননদরা বেশ কিছু টাকা স্বর্ণালংকার এবং মোবাইল ফোন চুরি করে।
জেমি স্বামীর অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে না দেওয়ায় গত ৫ অক্টোবর তাকে প্রচণ্ড মারধর ও নির্যাতন করে। বাড়ি থেকে বের করে দিতে উদ্যত হয়। তার ওপর নির্যাতনের কথা প্রতিবেশীদের মাধ্যমে জানতে পেরে ভাই শহিদুল ইসলাম পরদিন শ্বশুরবাড়িতে আসেন। জীবনের নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেমিকে বাবার বাড়িতে নিয়ে যান।
এর দুই দিন পর ৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় ভাই শহিদুল ইসলাম বাড়ি থেকে গাবতলী যাচ্ছিলেন। পথে সোনারায় ইউনিয়ন পরিষদ ভবন এলাকায় লুকিয়ে থাকা শ্বশুরের আত্মীয় গাবতলীর কাগইল দড়িপাড়া এলাকার চিহ্নিত দুষ্কৃতকারী আবু আছাদের সহায়তায় ভাই শহিদুলকে অপহরণ করেন। তাকে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে একটি ঘরে আটকে রেখে মারধর করে।
তারা জেমির ভাইকে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিতে বলে এবং তার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ভাইকে উদ্ধার করে।
এ ব্যাপারে শহিদুল ইসলাম গত ৮ অক্টোবর গাবতলী থানায় মামলা করেন। গাবতলী থানা পুলিশ মামলার সুষ্ঠু তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট দেন।
এরই একপর্যায়ে জেমির ছেলে জেনান নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়। বাচ্চার চিকিৎসার জন্য স্বামীর ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা তুলতে গিয়ে জানতে পারেন শ্বশুর মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে টাকা তোলা বন্ধ করে দিয়েছেন।
ছেলে জেনান গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় তার (জেমি) দুই ভাই শহিদুল ইসলাম ও রাজু আহম্মেদ ঢাকায় নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করান। এ সময় শ্বশুরবাড়ির কেউ বাচ্চাকে দেখতে আসেনি। ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৯ ডিসেম্বর ছেলে জেনান মারা যায়।
ইসরাত জাহান জেমি জানান, তিনি স্বামী ও সন্তানের শোকে কাতর। এ অবস্থায় শ্বশুর তাকে স্বামীর অর্থ সম্পদ থেকে বঞ্চিত করতে আবু আছাদের যোগসাজশে চক্রান্ত করছেন। ফলে তিনি দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। স্বামী তার ভাইকে নমিনি করে যে টাকা রেখে গেছেন, তা তুলে দেওয়া হচ্ছে না। এছাড়া সম্পত্তি থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ফোন না ধরায় জেমির শ্বশুর সাবেক বিজিবি সদস্য সাইদুর রহমান নান্নুর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।