সাংবাদিককে আটক করে চাঁদা দাবি
বরগুনার ইউএনও-ওসিসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা

যুগান্তর প্রতিবেদন, বরগুনা
প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২৫, ০৬:৩৪ পিএম

বরগুনা সদর উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে তথ্য চাওয়ায় এক সাংবাদিককে আটক রেখে এক লাখ টাকা চাঁদা চাওয়ার অভিযোগে চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে।
সোমবার বরগুনার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শেখ আনিসুজ্জামান মামলাটি গ্রহণ করে পুলিশ ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (পিবিআই) পটুয়াখালীকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
আসামিরা হলেন- বরগুনা সদর উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামিম মিয়া, বরগুনা সদর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কাসেম মো. মিজানুর রহমান, বরগুনা সদর উপজেলার সাবেক প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমান ও বরগুনা থানার এসআই মো. সোহেল রানা।
বরগুনা কেজি স্কুল রোডের আবদুল মান্নানের ছেলে অপরাধ বিচিত্রার সাংবাদিক মো. রাশেদুল ইসলাম রাশেদ অভিযোগ করেন, ২০২৪ সালের ২৪ জুলাই দুপুর ১২টার দিকে বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কক্ষে তিনি যান। বাদী তার নিকট দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পের অধীন বরগুনায় ৫ কোটি ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকার কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য চায়। তিনি বাদীকে আংশিক তথ্য দিয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কক্ষে যেতে বলেন। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বাদীকে দুই দিন পর আসতে বলেন।
বাদী দুই দিন পর আবার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কক্ষে যান। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বাদীকে অনেকক্ষণ বসিয়ে রেখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কক্ষে চলে যান। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বাদীকে জানান- তাকে কোনো তথ্য দেওয়া হবে না। এ সময় বাদী প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে বলেন, আমার নিকট কিছু তথ্য আছে। এ তথ্য দিয়ে নিউজ করা যাবে।
এমন সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামিম মিয়া প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কক্ষে আসেন। তিনি নির্দেশ দেন বাদীকে ধরার জন্য। আনসার সদস্যরা বাদীর জামার কলার ধরে টেনেহিঁচড়ে মো. শামিম মিয়ার সরকারি গাড়িতে উঠায়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বাদীকে বলেন, এক লাখ টাকা চাঁদা দিলে ছেড়ে দেবে। চাঁদা না দিলে সরকারি কাজে বাধাসহ বিভিন্ন মামলায় জড়িত করবে। বাদী চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় শামিম মিয়ার সরকারি গাড়িতে বরগুনা থানায় পাঠিয়ে দেন। বরগুনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কাসেম মো. মিজানুর রহমান ও এসআই মো. সোহেল রানা বাদীকে দুপুর ১টা হতে রাত ১০টা পর্যন্ত অন্যায়ভাবে থানায় আটক করে রাখেন।
বাদী বলেন, বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামিম মিয়া ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার নির্দেশে এসআই মো. সোহেল রানা আমার আইডি কার্ড জব্দ করেন। আমার ফোনের ৫ কোটি টাকার দুর্নীতির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ছিল তা মুছে ফেলেন। ওই চারজন আসামি আমাকে থানাহাজতে আটক রেখে ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। এতে আমি সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হই। বরগুনার সাংবাদিকরা জানতে পেরে বরগুনা থানায় আসেন। পরে আসামিরা আমার মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়।
এ ব্যাপারে সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ঘটনাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কোনো ঘটনা ঘটলে তিনি তাৎক্ষণিক আইনের আশ্রয় নিতে পারতেন। একজন নাগরিক তার মামলা করার অধিকার আছে। আদালত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্ত প্রমাণিত হবে আমি দোষী কিনা।
বরগুনা থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কাসেম মো. মিজানুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ও সেই ব্যাপার। রাশেদকে আমার থানায় রাখছিল। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হবে কেন। আমি কী দোষ করেছি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমানকে ফোনে পাওয়া যায়নি।