ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন: বগুড়া-৫
বিএনপির ছয় নেতা মাঠে জামায়াতের প্রার্থী চূড়ান্ত

বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনে স্বাধীনতার পর ১২টি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছয়বার, বিএনপি পাঁচবার ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী একবার নির্বাচিত হয়েছেন। আগামী ডিসেম্বরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় দলগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে নেমে পড়েছেন। মামলায় পর্যুদস্ত আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিকরা ছাড়া বাকি রাজনৈতিক দল এবং সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজনরা এখন মাঠে তৎপর। জামায়াতের একক প্রার্থী হলেও বিএনপি থেকে অন্তত ছয়জন মনোনয়ন পেতে চাইছেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক প্রার্থীরা এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ইসলামী জলসা ও খেলাধূলাসহ নানা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছেন। তারা নিজেদের সম্ভাব্য প্রার্থী পরিচয়ে ভোটারদের দোয়া ও সমর্থন চাইছেন। এলাকার হোটেল-রেস্তোরাঁ, দোকান, চা-স্টল, হাট-বাজার সর্বত্রই আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা চলছে।
নির্বাচন অফিসের সূত্র অনুযায়ী, দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের মোস্তাফিজুর রহমান পটল ও ১৯৭৯ সালে বিএনপির সিরাজুল হক তালুকদার নির্বাচিত হন। সীমানা পরিবর্তনের পর ১৯৮৬ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস জামান মুকুল নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির শাহজাহান আলী তালুকদার এমপি হন। এরপর আসনটি বিএনপির দখলে চলে যায়। ১৯৯১, ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৬ সালের জুন ও ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ নির্বাচিত হন। বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বাচন বর্জন করায় আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে আসে। সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আওয়ামী লীগের হাবিবর রহমান ২০০৮ সালে বিএনপি প্রার্থীকে হারিয়ে, ২০১৪ সালে (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা) ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হন। এরপর প্রার্থী পরিবর্তন করলে ২০২৪ সালের নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু প্রথমবারের মতো এমপি হন।
সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন : বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, কেন্দ্রীয় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহবুবর রহমান হারেজ, জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ধুনট উপজেলা বিএনপির সভাপতি একেএম তৌহিদুল আলম মামুন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিমকোর্ট শাখার নেতা ব্যারিস্টার আনোয়ারুল ইসলাম শাহীন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন এবং শেরপুর উপজেলা বিএনপির বহিষ্কৃত সভাপতি জানে আলম খোকা। তবে কোনো কারণে গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ প্রার্থী হতে না পারলে তার ছেলে আসিফ রব্বানী সানভী প্রার্থী হতে পারেন।
জামায়াতের একক প্রার্থী হিসাবে রয়েছেন শেরপুর উপজেলা জামায়াতের আমির দবিবুর রহমান। এখন পর্যন্ত অন্য রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নাম শোনা যায়নি।
প্রার্থী নেই আওয়ামী লীগ ও শরিক দলের : বগুড়া-৫ আসনের শেরপুর ও ধুনট উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিক দলের কোনো প্রার্থী নেই। ফলে আগামী নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর জয় প্রায় নিশ্চিত-এমন আশায় ৬/৭ জন নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশী। তারা নড়েচড়ে বসেছেন। দলীয় কর্মকাণ্ডের বাইরেও সামাজিক, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে মনোনিবেশ করেছেন। এলাকার দুস্থদের সাধ্যমতো সাহায্য-সহযোগিতা করছেন। প্রকাশ্যে ও ইঙ্গিতে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে ভোট ও দোয়া চাইছেন। তাদের স্বজনরাও মাঠে নেমে পড়েছেন। তবে এ আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বিএনপি ও জামায়াত প্রার্থীর মধ্যে।
এদিকে হত্যা ও নাশকতার অসংখ্য রাজনৈতিক মামলায় আওয়ামী লীগ এবং তাদের শরিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা এলাকা ছাড়া। এ সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন বিএনপি ও তাদের সাবেক শরিক জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিকদের বিপুল সংখ্যক ভোট যে দল পাবে তারাই বিজয়ী হবে। তবে এই আসনে বর্তমানে বিএনপির অবস্থান ভালো বলে ভোটাররা বলছেন।
যা বলছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা : বগুড়া-৫ আসনে পরপর চারবার ও সদর আসনে একবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের স্বজনরা বলেন, তিনি ক্ষমতায় থাকাকালে ও অন্য সময় এলাকার অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান ছাড়াও এলাকার উন্নয়নে অনেক কাজ করেছেন। নিজ দল ছাড়াও সাধারণ মানুষকে আর্থিক ও অন্যভাবে সহযোগিতা করেছেন। তারা আশা করেন, অতীত পর্যালোচনা করে বিএনপি হাইকমান্ড আবারও তাকে ধানের শীষের টিকিট দেবেন।
বগুড়া জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ধুনট উপজেলা বিএনপির সভাপতি একেএম তৌহিদুল আলম মামুন বলেন, ১৯৮৪ সালে ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতির মাধ্যমে বিএনপির রাজনীতি শুরু করেছেন। দীর্ঘদিন বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পদে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছেন। এলাকার মাটি ও মানুষের সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্ক। তিনি বলেন, ২০০৬, ২০০৯, ২০১৮ সালে মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। আগামী নির্বাচনে দল থেকে তাকে মূল্যায়ন করা হবে বলে আশা করেন তিনি।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান হারেজ বলেন, তিনি ১৯৭৮ সালে শেরপুরে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে বিএনপির রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৮৬ সালে শেরপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হন। এরপর থেকে শেরপুর ও ধুনট উপজেলায় বিএনপির রাজনীতি প্রসারে কাজ করে যাচ্ছেন। মানুষের সুখে-দুখে পাশে থাকেন। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাকে বিএনপির মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। পরে দলের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়। এরপর থেকে প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থিতা চেয়ে আসছেন। তিনি আশা করেন, তার কাজের মূল্যায়ন করে তাকে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির টিকিট দেওয়া হবে।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিমকোর্ট শাখার নেতা ব্যারিস্টার আনোয়ারুল ইসলাম শাহীন বলেন, বিএনপির টিকিট চেয়ে না পেলেও এলাকার মানুষের সঙ্গেই আছেন। তাদের আইনগত ছাড়াও নানাভাবে সহযোগিতা করে আসছেন। তিনি আশা করেন, দলীয় হাইকমান্ড তাকে মূল্যায়ন করবেন।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলা বিএনপির বহিষ্কৃত সভাপতি জানে আলম খোকার স্বজনরা বলেন, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি এলাকায় অনেক জনপ্রিয়। তারা আশা করেন, তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ দেওয়া হবে।
বগুড়া শহর জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক আ.স.ম. আবদুল মালেক বলেন, আগামী নির্বাচনে বগুড়া-৫ আসনে শেরপুর উপজেলা আমির আলহাজ দবিবুর রহমানকে চূড়ান্ত প্রার্থী করা হয়েছে। দবিবুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে দল থেকে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন শেরপুর ও ধুনটবাসীর সঙ্গে আছি। সাধ্যমতো সহযোগিতা করে আসছি। আশা করি জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন।