সেই বিতর্কিত অধ্যক্ষের স্ত্রী হলেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ

দেলদুয়ার (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২৫, ০৫:০৫ পিএম
-67c2e9e39e8f8.jpg)
টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ডিগ্রী কলেজের বিতর্কিত অধ্যক্ষ লোকমান হাসানের স্ত্রী মমতাজ পারভিনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে কলেজ শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছে শিক্ষক-কর্মচারী ও পরিচালনা পরিষদ।
নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে।
শিক্ষক ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সভাপতি তার পছন্দের ব্যক্তির নিকট থেকে বিশেষ সুবিধা নিয়ে যোগ্য ব্যক্তিকে পাস কাটিয়ে কম যোগ্যতা সম্পন্ন সাবেক প্রয়াত অধ্যক্ষ লোকমান হাসানের স্ত্রীকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।
এছাড়া সাবেক অধ্যক্ষ লোকমানের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাৎ ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ছিল। দায়িত্বে থাকাকালে তার নিকট আত্মীয় টাঙ্গাইল শহরের আওয়ামী লীগের এক দাপুটে নেতার মদদে বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়েছেন। এ খবর যুগান্তরসহ বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।
বর্তমান আওয়ামী পরিবারের কোনো সদস্যকে একটি ডিগ্রী কলেজের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
জানা যায়, বিগত সরকারের আমলে অধ্যক্ষ লোকমানের মৃত্যুর পর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ পান তারই আস্থাভাজন আওয়ামী লীগ সমর্থিত রফিকুল ইসলাম তালুকদার। ২৭ ফেব্রুয়ারি রফিকুলের চাকরির শেষ কর্মদিবস ছিল। সেই হিসেবে সভাপতি আনিছুর রহমানের যোগসাজসে তারই প্রিয়জন প্রয়াত লোকমানের স্ত্রী মমতাজকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত করেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়ার নিয়ম অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের ৫ জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের মধ্য থেকে যোগ্যতম ব্যক্তিকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দিতে পারবেন প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি। মমতাজ পারভিন জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ৩য় অবস্থানে।
শিক্ষকদের দাবি, ৫ জন জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের মধ্যে ৪ জনই আওয়ামী লীগ সমর্থক। অন্যজন পদার্থ বিজ্ঞানের প্রভাষক এসএম জামিল হোসেন। যার অবস্থান জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ৫ম। বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় জামিল হোসেনকেই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে নিয়োগ গ্রহণযোগ্য।
প্রভাষক নাসরিন আক্তার লাকী বলেন, যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি থাকতে অযোগ্য আওয়ামী ও সাবেক দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষের স্ত্রীকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে মেনে নিতে আমাদের কষ্ট হবে।
ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক জান্নাত আরা ইয়াসমিন বলেন, প্রয়াত দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষের স্ত্রীকে ভারপ্রাপ্ত হিসাবে আমরা কেউই মেনে নেব না। প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।
ইংরেজী বিভাগের প্রভাষক ইমরান হোসেন ফারুক বলেন, ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক মো. ইছামুদ্দিনসহ অধিকাংশ প্রভাষকই মমতাজকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে মেনে নিতে নারাজ। কর্মচারী নাজমা আক্তারও মমতাজকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে চান না।
অভিযোগ প্রসঙ্গে সভাপতি মো. আনিছুর রহমান বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়ার সব বিধিবিধান মেনেই মমতাজ পারভীনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আর এ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অর্থ বাণিজ্যের যে অভিযোগ উঠেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।