
বগুড়া সদরে বাড়িতে ঢুকে আনোয়ারা বেগম (৫৮) ও তার মেয়ে ছকিনা বেগমকে (৩৫) কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার রাতে সদর উপজেলার সাবগ্রাম দক্ষিণপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে রক্ত মাখা রামদা উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শনিবার (১ মার্চ) দুপুরে নারুলী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নাজমুল হক জানান, তালাক দেওয়ায় ছকিনার দ্বিতীয় স্বামী রুবেল মিয়া আক্রোশের জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
নিহত ছকিনা সদর উপজেলার সাবগ্রাম দক্ষিণপাড়ার স্বামী বাদশা মিয়ার সাবেক স্ত্রী।
পুলিশ ও পরিবারের সদস্যরা জানান, দাম্পত্য কলহে বাদশার সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় ছকিনার। এরপর ৬ বছর আগে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার হাসনাপাড়া গ্রামের রুবেল মিয়ার সঙ্গে ছকিনার দ্বিতীয় বিয়ে হয়। ছকিনা প্রথম পক্ষের সন্তান সাব্বির আহম্মেদকে নিয়ে বগুড়া শহরের আকাশতারা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। মাদকাসক্ত রুবেল চুরি ও বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। সংশোধন না হওয়ায় ছকিনা তাকেও তালাক দেন। এরপর থেকে ছকিনা গ্রাম থেকে মা আনোয়ারাকে এনে আলাদা বাড়ি ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। এক বছর আগে অনুরোধের প্রেক্ষিতে ছকিনা আবারও রুবেলের সংসারে ফিরে যান। কিন্তু রুবেল মাদকসেবন, চুরি ও অন্য অপরাধ ছাড়তে পারেনি। ফলে প্রায় ৬ মাস আগে আবারও তাদের বিচ্ছেদ হয়।
তারা আরও জানান, ছকিনা সামগ্রাম দক্ষিণপাড়ায় দুই শতক জায়গা কিনে সেখানে টিনের ঘর তৈরি করেন। একমাস আগে প্রথম স্বামী বাদশাকে আবারও বিয়ে করেন ছকিনা। বাদশা গ্রামের বাড়িতে থাকেন। এদিকে ছকিনা আবারও প্রথম স্বামীর কাছে ফিরে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয় রুবেল।
ছকিনার ছেলে সাব্বির আহম্মেদ অভিযোগ করেন, শুক্রবার রাত ১টার দিকে বাড়িতে এসে তার মাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন রুবেল। তাকে ছেড়ে দিয়ে বাদশাকে আবারও বিয়ে করা নিয়ে দুজনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে রুবেল রামদা দিয়ে ছকিনাকে কোপানো শুরু করেন। এ সময় তার নানী আনোয়ারা এগিয়ে এলে তাকেও কোপানো হয়। এরপর রুবেল পালিয়ে যায়।
স্থানীয়রা রক্তাক্ত মা ও মেয়েকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করান। রাত দেড়টার দিকে ছকিনার মৃত্যু হয়। শনিবার বেলা ১১টার দিকে চিকিৎসাধীন আনোয়ারারও মৃত্যু হয়।
বগুড়া সদর থানার ওসি (তদন্ত) একেএম মঈন উদ্দিন ও নারুল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নাজমুল হক জানান, প্রথম স্বামীর ঘরে ফিরে যাওয়ায় দ্বিতীয় স্বামী মাদকাসক্ত রুবেলের আক্রোশের শিকার হয়েছেন ছকিনা ও তার মা। বাড়ির পাশের বাঁশঝাঁড় থেকে রক্তমাখা রামদা উদ্ধার করা হয়েছে।
মরদেহ দুটি উদ্ধার করে বগুড়া শজিমেক হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত রুবেল মিয়াকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানান তারা।