শুনে শুনে কুরআনের হাফেজ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সহোদর

ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২৫, ০৪:১১ পিএম

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী দুই ভাই আল-আমিন (১৪) ও ফয়সাল (১২)। অল্প বয়সেই হারান বাবাকে। মা তাদের নিয়ে যান মাদ্রাসায়। সেখানেই চালিয়ে যাচ্ছেন পড়াশুনা। মাদ্রাসার হুজুরদের মুখে শুনে শুনে পবিত্র কুরআনের হাফেজ হয়েছেন এ দুই ভাই। ঘটনাটি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার।
ফরিদগঞ্জের ঘনিয়া ছাইয়েদিয়া এতিমখানা ও মাদ্রাসায় পড়েন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী
দুই ভাই।
জানা গেছে, জেলার শাহরাস্তি উপজেলার কেশরাঙ্গা গ্রামের প্রয়াত মোখলেছুর
রহমান ও মা রূপবান বেগমের ছেলে আল-আমিন ও ফয়সাল। পাঁচ বছর আগে তাদের বাবা মারা যায়।
অভাব অনটনের সংসারে দেখা দেয় বিভীষিকা।
মোখলেছুরের মৃত্যুর পর দুই ছেলেকে ঘনিয়া ছাইয়েদিয়া এতিমখানা ও মাদ্রাসায়
ভর্তি করেন মা রূপবান বেগম। এরপর মাদ্রাসা
ও দরবার শরীফের পীর হাফেজ মাওলানা মো. জুনায়েদুল হক এতিম শিশুদের সন্তানের মতো আদর
যত্ন করেন। দুজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হলেও তাদের অসম্ভব মেধা দেখে হুজুর তাদেরকে বিশেষভাবে
গড়ে তোলার চেষ্টা চালান। অবশেষে কুরআনের হাফেজ হয়েছেন এ দুজন।
হাফেজ মাওলানা জাকির বলেন, ‘আল-আমিন ও ফয়সাল পবিত্র কুরআনের ৩০ পারা শুনে শুনেই মুখস্ত করেছেন। পৃথিবীর আলো দেখতে না পারলেও পবিত্র কুরআনের আলোয় আলোকিত তারা। তাদের সুরেলা কণ্ঠের তেলাওয়াত মুগ্ধ করেছে সবাইকে। হাফেজ আল-আমিন গত বছর জাতীয় পর্যায়ে হওয়া অন্ধ হাফেজদের কুরআন প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন।’
মাদ্রাসার ও দরবার শরীফের পীর হাফেজ মাওলানা মো. জুনায়েদুল হক বলেন,
‘হাফেজ আল-আমিন ও ফয়সালকে মহান আল্লাহপাক বিশেষ রহমত ও মেধাশক্তি দিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন।
হুজুরদের মুখে শুনে শুনে কুরআন মুখস্থ করে ফেলেছেন তারা।’
দুই ভাইয়ের শিক্ষক মাওলানা বজলুল হক আজহারী বলেন, ‘দুই ভাই আমাদের অন্যান্য
শিক্ষার্থীদের মতোই স্বাভাবিক চলাফেরা করে। বাহিরের অনেকে বুঝতেও পারে না তারা দৃষ্টি
প্রতিবন্ধী। মহান আল্লাহ যেন তাদের বিশেষ রহমতে পবিত্র কুরআনকে তাদের অন্তরে গেঁথে
নিয়েছেন।’
দুই সহোদর হাফেজের মা রূপবান বেগম বলেন, ‘স্বামী হারিয়ে আমি যখন দিশেহারা
তখন দুই সন্তানকে ঘনিয়া ছাইয়েদিয়া এতিমখানা ও মাদ্রাসায় দিয়ে যায়। হুজুরেরা আমার সন্তানদের
কুরআনে হাফেজ বানিয়েছেন। তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’