আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও জাতীয় শহিদ দিবসে ফুল তুলতে গিয়ে চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ধর্ষক রুহুল আমিনকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তাকে গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মহাসড়ক অবরোধ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ভূমিহীন সংগঠন, জাতীয় নাগরিক কমিটি, নিজেরা করি, মানবাধিকার কমিশন ও বিভিন্ন স্কুল-কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

রোববার (২৩ ফেব্রয়ারি) দুপুরে মিঠাপুকুর ওভারপাস থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক ও উপজেলা পরিষদ প্রদক্ষিণ করে গড়েরমাথা নামকস্থানে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে অবস্থান নিয়ে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক ও ফুলবাড়ী-রংপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে তারা। এ সময় সড়কগুলোতে যান চলাচল বন্ধ ছিল। 

এ সময় তারা বলেন, ৩ দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ ধর্ষক রুহুল আমিনকে গ্রেফতার করতে পারেনি। ধর্ষকের পরিবার রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী ও প্রভাবশালী। তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তির মাধ্যমে আঁতাত করছেন। 

বিক্ষোভকারীরা বলেন, ধর্ষক রুহুল আমিনকে গ্রেফতার করলে মিঠাপুকুর অচল করে দেওয়া হবে। 

এতে রক্তব্য রাখেন জাতীয় নাগরিক কমিটির রংপুর জেলার মুখ্য সংগঠক শেখ রেজওয়ান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর জেলা সদস্য সচিব আশফাক আহমেদ জামিল, মিঠাপুকুর সমন্বয়ক মিথিলা সিনথীয়া শিলা, মুনতাসিম বিল্লাহ, সুজন মিয়া, মিঠাপুকর ছাত্রদলের সদস্য সচিব হাসান মাহমুদ, মানবাধিকার নেতা আশিকুর রহমান প্রমুখ।

পরে মিঠাপুকুর থানায় গিয়ে ধর্ষককে গ্রেফতার করতে পুলিশ প্রশাসনকে আলটিমেটাম দেন। এছাড়াও রংপুর টাউন হলের সামনে ধর্ষককে গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। 

এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় ধর্ষক রুহুল আমিনকে গ্রেফতারের দাবিতে উপজেলা ওভারপাসের নিচে বিক্ষোভ মিছিল করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। পরদিন শনিবার সন্ধ্যায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বৈরাতিহাট এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মিঠাপুকুর থানা ওসি আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ধর্ষককে গ্রেফতারের জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। শুধু পুলিশ প্রশাসন নয়, অনেক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছে। আশাকরি দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতার হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র বর্মন বলেন, ধর্ষককে গ্রেফতারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। দ্রুত গ্রেফতার করা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ধর্ষক রুহুল আমিন জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তার স্ত্রী মোজাহিদা বেগম উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর রুকন। তার ভাতিজা মিজানুর রহমান মির্জাপুর ইউনিয়ন জামায়াতের আইন বিষয়ক সম্পাদক। এরই প্রভাবে তারা ধর্ষণের শিকার ওই পরিবারকে মামলা করতে বাধা দিয়েছিল। এখন মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে বলে, অভিযোগ করেছে ধর্ষণের শিকার ওই শিশুটির পরিবার। 

অভিযুক্তের ভাতিজা মিজানুর রহমান বলেন, আমরা প্রভাব খাটালে তো মামলা রেকর্ডই হতো না। আমরা কাউকে হুমকিও দিচ্ছিনা।

উল্লেখ্য, ২১ ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবসে শ্রদ্ধা জানাতে ফুল তুলতে গিয়ে মিঠাপুকুরের রতিয়া গ্রামের রুহুল আমিন কর্তৃক চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়। পরে ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রীকে চিকিৎসা ও মামলা না করতে বাধা দেয় ধর্ষকের পরিবার। পুলিশের সহায়তায় ওই শিশুকে উদ্ধার ও মামলা করা হয়েছে। এরপর থেকে পলাতক রয়েছে অভিযুক্ত রুহুল আমিন।