স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার মামলা বাণিজ্যের অডিও ফাঁস

বরগুনা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:০০ পিএম

বরগুনার বামনায় বিএনপির অফিস ভাঙচুরের অভিযোগে দায়ের করা মামলার বাদী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার চাঁদা দাবির একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাতে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের বামনা উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রাফান জোমাদ্দার আকাশ তার ফেসবুকে এ অডিওটি ফাঁস করেন। এতে শোনা গেছে, রাফান উপজেলা বিএনপির অফিস ভাঙচুরের মামলার বাদী মো. ইসমাইল হোসেন সোহাগকে ফোন করেছেন। ইসমাইল বামনা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক।
অডিওতে তিনি বামনা বিএনপির অফিস ভাঙ্গা মামলার বাদী হিসাবে ওই মামলা থেকে নাম বাদ দিতে রাফানের নিকট চাঁদা দাবি করছেন।
এদিকে ভাইরাল হওয়া অডিও রেকর্ড তার নিজের নয় দাবি করেছেন ইসমাইল। নিজের ফেসবুক আইডিতে তিনি লিখেছেন, অডিও ফাঁসকারী ছাত্রলীগ নেতা রাফান জোমাদ্দার আকাশ নামে কাউকে তিনি চেনেন না।
অন্যদিকে রাফান তার ফেসবুকে লিখেছেন, মামলার বাদী যদি তাকে না চেনেন তাহলে কিভাবে তাকে আসামি করেছেন।
উপজেলায় ওই অডিও রেকর্ড নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন আড্ডায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। ফোনালাপটি নিচে তুলে ধরা হলো-
রাফান- ‘আমি ১৬ বছরে কিছুই করতে পারিনি। টিআর, কাবিখা এসবের শুধু নামই শুনেছি এখন আপনাকে যা দিতে হবে তা মহারাজ ভাইয়ের কাছ থেকে এনে দিতে হবে। এখন কয়টাকা দিতে হবে বলেন আমি এনে দেই’।
স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা- ‘ওই হালারে ফোন দে (জনৈক এক পুলিশ সদস্য) ওরে ক’।
জবাবে ছাত্রলীগ নেতা, ‘সে তো মোরে দশের কথা বলছে এখন আপনি যেটা বলবেন সেটা’।
স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা, ‘মোরে কয় ত্রিশ আর তোরে কয় দশ; হালারে লাগে এহন কেনু’।
ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘ত্রিশ হাজার? সে যদি আপনাকে ৩০ হাজার বলে থাকে তাহলে আমি এতো টাকা পামু কই বলেন?
ওই নেতা বলেন, এহন তুই যা দেও যা হরো হ্যার লগে কথা কইয়া হর। তুই আবার রেকর্ড কইরা মোরে ভোগে হালাইস না’।
এ বিষয়ে রাফান যুগান্তরকে বলেন, ৫ আগস্টের পর বিএনপি অফিস ভাঙচুরের ঘটনা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নামে ইসমাইল বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। সেই মামলায় আমি ৩৬ নম্বর আসামি। অথচ ওই দিন আমি এলাকায় ছিলাম না। তারপরেও সে আমাকে আসামি করেছে। সোহাগ বিভিন্ন সময়ে আমার নম্বরে ফোন দিয়ে নাম বাদ দিতে টাকা দাবি করেন। প্রথমে ত্রিশ হাজার টাকা চাওয়া হয়। পরে অবশ্য তিনি অঙ্কটা কমান এবং আমি তাকে প্রশ্ন করি চার্জশিটভুক্ত আসামিকে কিভাবে মামলা থেকে বাদ দেবেন। তখন তিনি বলেন, কোনো সমস্যা নেই, পারা যাবে। যার অডিও রেকর্ড আমার কাছে আছে।
এ বিষয়ে ভাইরাল হওয়া কল রেকর্ডের বিষয়টি অস্বীকার করে ইসমাইল যুগান্তরকে জানান, আমার বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। ওই অডিও রেকর্ডটি আমার না। আমি ওই ছেলের বিরুদ্ধে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি।
বরগুনা জেলা সেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব ফয়জুল মালেক সজিব যুগান্তরকে জানান, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তে সত্যতা প্রমাণিত হলে দুই একদিনের মধ্যেই আমরা তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবো।
গত ৭ নভেম্বর বামনা বিএনপি অফিস ভাঙচুরের অভিযোগে ১১৬ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন ইসমাইল।